Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

অ-মানবিক

আমেরিকায় এখনও সঙ্কট কাটিবার লক্ষণমাত্র নাই, সঙ্কট কাটাইবার তেমন নেতৃত্ব নাই।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:৩০
Share: Save:

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিঃসংশয়ে জানেন, দোষ যাহারই হউক, কোনও মতেই তাঁহার নহে। ইতিপূর্বে দেশ-বিদেশের নানা সমস্যার দায় পূর্বতন পদাধিকারী বারাক ওবামার স্কন্ধে চাপাইতে অভ্যস্ত হইয়াছিলেন। এই পর্বে তাঁহার নিশায়নায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। হু-এর মার্কিন অনুদান স্থগিত করিয়া তিনি জানাইয়াছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে সংস্থার বিশৃঙ্খল ভূমিকা এবং তথ্য গোপনের চেষ্টার মূল্যায়ন করা হইবে। অথচ, ঘটনা হইল যে ৩০ জানুয়ারি হু কর্তৃক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি হইবার পরেও একের পর জনসভা করিয়া গিয়াছেন ট্রাম্প, এবং ইহাকে ‘কমন ফ্লু’ বা সাধারণ জ্বরের সহিত তুলনা করিয়াছেন। হু-এর বিরুদ্ধে তিনি এখন বারংবার যে ‘বেজিং-কেন্দ্রিক’ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করিতেছেন, গত ২৪ জানুয়ারি সেই দেশেরই ভাইরাস ঠেকাইবার ‘উদ্যোগ ও স্বচ্ছতা’র প্রশংসায় টুইট করিয়াছিলেন ট্রাম্প। বুঝা যায়, অতিমারিতে তাঁহার দেশ সর্বাধিক বিপদগ্রস্ত হইবার পর সেই দায় এড়াইতেই ঢাল খুঁজিতে তৎপর হইয়াছেন প্রেসিডেন্ট।

আমেরিকায় এখনও সঙ্কট কাটিবার লক্ষণমাত্র নাই, সঙ্কট কাটাইবার তেমন নেতৃত্ব নাই। ইতিহাসবিদ, প্রখ্যাত লেখক ইউভাল নোয়া হারারি এক সাক্ষাৎকারে বলিয়াছেন, আমেরিকা অনেক দিন যাবৎই বিশ্বের নেতৃস্থানে নাই, এখন এমনকি নেতৃস্থানে থাকিবার ক্ষমতাটিও হারাইয়াছে। বলিয়াছেন, করোনা-আক্রান্ত বিশ্বকে গ্রিস ও আমেরিকার মধ্যে কে পথ দেখাইতেছে, ইহা যদি প্রশ্ন হয়, উত্তর হইবে, গ্রিস। স্বভাবতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইহা বড় সুখের সময় নহে। ট্রাম্পের তর্জনগর্জন বাড়িতেছে। তিনি জানাইয়াছেন, হু-এর অনুদান আমেরিকা বন্ধ করিবে। তাহাতে বিপদ বাড়িবে বই কমিবে না, কেননা এই সংস্থার ন্যায় বিস্তার ও বিশ্বাসযোগ্যতা আর কাহারও নাই। কোভিড-১৯’এর ক্ষেত্রে হু-র কার্যপদ্ধতি সম্বন্ধে কিছু প্রশ্নের অবকাশ থাকে, তাহা অনস্বীকার্য, কিন্তু ইহাও সত্য যে গত তিন দশকে তাহাদের নেতৃত্বেই জ়িকা, ইবোলা, এইচআইভি-র বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সংগ্রাম চলিয়াছে। অতএব হু-র সমালোচনা চলিতে পারে, প্রশ্নও তোলা যায়, কিন্তু তাহাকে কালিমালিপ্ত করা চলে না। বিশেষত এই কঠিন সময়ে।

বাস্তবিক, শীর্ষনেতাকে ক্ষুদ্র স্বার্থ গ্রাস করিলে কী অবস্থা হয়, তাহার দৃষ্টান্ত হইয়া রহিলেন করোনা-বিশ্বে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাঁহার অবস্থানকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলিয়াছেন। এই অভূতপূর্ব বিপদের দিনে হু-এর প্রয়োজন ছিল অতিরিক্ত ৬০ কোটি ৭৫ লক্ষ মার্কিন ডলার। তাহার পরিবর্তে হু-এর সর্ববৃহৎ অনুদানকারী দেশের প্রেসিডেন্ট— যে দেশ হু-কে বছরে অনুদান দেয় ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের অধিক— অর্থসাহায্য রদ করিবার ফলে সমগ্র মানবতার জন্য সঙ্কট ঘনাইয়া আসিবে। বহু দরিদ্র ও অসচ্ছল দেশ হু-এর নির্দেশিকা ও পরামর্শের উপর নির্ভরশীল। মাস্ক বা টেস্টিং কিটের ন্যায় অত্যাবশ্যক জিনিসগুলিও তাহারা সংস্থার নিকট হইতেই পাইয়া থাকে। ট্রাম্পের অবিমৃশ্যকারিতায় এই দেশগুলি বিপাকে পড়িবে। যে অভূতপূর্ব অতিমারিতে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা লক্ষের হিসাবে গণিতে হয়, তাহার বিরুদ্ধে লড়াই করিতে প্রতিটি সদস্য-দেশের সমর্থন প্রয়োজন। ভ্রান্তির পাল্লা কাহার কত ভারী, সেই হিসাব পরে করা যাইবে। অতিমারি কাটিবার পর।

আরও পড়ুন: বিরোধ নেই বন্দি-সময় আর সৃজনশীলতায়

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy