প্রতীকী ছবি
চিন ও ইতালিকে বহু পিছনে ফেলিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষও পার হইয়া গিয়াছে। এক নিউ ইয়র্ক শহরেই আক্রান্ত সত্তর হাজারের উপর। সতর্কবাণী ছিল। পরিসংখ্যানে এই ভবিতব্যের আভাস স্পষ্টও হইতেছিল। কেবল দেশের প্রধান ব্যক্তি কিছুতেই বুঝিতে চাহেন নাই। শুধু তাহাই নহে, সকল উপদেশ নস্যাৎ করিয়া করোনার বিপদকে অগ্রাহ্য করিয়া চলিতেছিলেন। নিউ ইয়র্কের গভর্নর যেখানে আশঙ্কা প্রকাশ করিতেছেন যে সংক্রমণ সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাইতে এখনও তিন সপ্তাহ বাকি, সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মহাশয় দুই দিন আগেও সুললিত প্রতিশ্রুতি উচ্চারণ করিয়াছেন যে, আসন্ন ইস্টারের আগেই না কি তিনি ঘরবন্দি আমেরিকাবাসীকে বাহির করিয়া পুরোদমে কাজকর্ম শুরু করাইবেন। বেগতিক দেখিয়া রিপাবলিকানরা আর কী করিবেন— চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের পরামর্শ ছাড়া কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত না লইতে অনুরোধ জানাইতেছেন কেবল।
পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উন্নত, আর্থিক শক্তিতে বলীয়ান দেশ হিসাবে পরিচিত হইয়াও এই বেলাগাম সংক্রমণ কেন দেখিতেছে আমেরিকা? এই রহস্যের বীজ নিহিত সে দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় এবং তাহার শাসকের অবিমৃশ্যকারিতায়। করোনার পদধ্বনি যখন শোনা যাইতেছিল, তখনও এই রোগের পরীক্ষার জন্য খরচ পড়িতেছিল মাথাপিছু অন্তত পাঁচশত ডলার, এবং তাহা ছিল বিমার আওতার বাহিরে। স্বভাবতই সংক্রমণের লক্ষণ থাকিলেও প্রায় কেহই পরীক্ষার দিকে তাকাইতেছিলেন না। এই অবকাশে নিঃশব্দে সমাজের সর্বস্তরে ছড়াইয়া পড়িয়াছে এই অতিসংক্রামক ভাইরাস। সরকারি স্তরে পরিকাঠামো প্রস্তুত করিবার কথা না ভাবিয়া শুধু চিন হইতে বিমান বন্ধ করিয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিশ্চিন্ত ছিলেন, ব্যস্ত ছিলেন ‘চিনের ভাইরাস’ বলিয়া বিদেশবিদ্বেষে ঘৃতাহুতি দিতে। শেয়ার বাজারের দিকে নজর রাখিয়া এমন কোনও পদক্ষেপ তিনি করেন নাই, যাহাতে মার্কিন বাণিজ্য-অর্থনীতির আকাশে কোনও রূপ মেঘের সঞ্চার না হয়। অতঃপর এক সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত আমেরিকার উপর সুনামির ন্যায় আছড়াইয়া পড়িয়াছে এই অতিমারি।
এই বেসরকারি বিমা-নির্ভর স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করিয়াই সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা তৈরি করিতে উদ্যোগী হইয়াছিলেন ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যাহার নামকরণ হইয়াছিল ‘ওবামা-কেয়ার’। ধনতন্ত্র-দর্শন অধ্যুষিত মার্কিন মুলুকে এহেন সমাজতান্ত্রিক চিন্তায় যৎপরোনাস্তি রুষ্ট সমাজ অতঃপর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্বে প্রবেশ করে, এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে অহর্নিশ ওবামাকেয়ার প্রকল্পের মুণ্ডপাত শোনা যায়। প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হইবার পর সর্বাগ্রে এই প্রকল্পটিই রদ করিয়াছিলেন ট্রাম্প। ফলত, আশ্চর্য নহে যে, আজ এই করোনা সঙ্কটে সে দেশের সর্বত্র মাস্কের আকাল, ভেন্টিলেটর অপ্রতুল, পরীক্ষা করিবার সরঞ্জাম প্রয়োজনের দশ শতাংশও নহে, স্বাস্থ্য-অধিকর্তাকে আদালতে দাঁড়াইয়া মুচলেকা দিতে হইতেছে যে পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হইবে। এই মুহূর্তে সরকার ও ডাক্তার-বৈজ্ঞানিক মহলের সহিত সম্মুখসমরে নামিয়াছেন ট্রাম্প। যে প্রদেশের গভর্নর ডেমোক্র্যাট, তাহারা লকডাউন ঘোষণা করিতেছে, রিপাবলিকান গভর্নররা এখনও তাহাতে পিছ-পা। দুই ট্রিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষিত হইয়াছে। কিন্তু কেহ নিশ্চিত নহে যে তাহার সাহায্যে মার্কিন অর্থনীতিকে গভীর মন্দার কবল হইতে উদ্ধার করা সম্ভবপর কি না। কয়েক মাস পর নির্বাচন, এ-যাবৎ নিশ্চিন্ত ট্রাম্প যেন অকস্মাৎ প্রবল ঝঞ্ঝার সম্মুখীন। আগামী নির্বাচনে কি তবে তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বী হইতে চলিয়াছে সেই ওবামা-কেয়ারের নীতিটিই, যাহাকে তুলাধুনা করিয়া তিনি চার বৎসর পূর্বে ক্ষমতায় বসিয়াছিলেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy