বিরোধী নেতাকে উপহাসের পাত্র করিয়া তুলিবার কৌশলটি ভারতীয় রাজনীতিতে অতি প্রিয়। অনেক সময় বিপন্নতা হইতে বাঁচিবার একমাত্র পথও বটে। সুতরাং বিজেপি যখন রাহুল গাঁধীর মন্তব্য লইয়া ঝাঁপাইয়া পড়ে, দুইটি কথা বুঝিতে হয়। এক, রাহুল আক্রমণটি মোক্ষম শানাইয়াছেন; দুই, বিজেপি পাকে পড়িয়াছে। স্মৃতি ইরানি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকিয়া জানাইয়া দিলেন, সংঘের আঙিনায় খাকি হাফপ্যান্ট পরিহিত মহিলাদের দেখা যায় না অভিযোগ তুলিয়া রাহুল গাঁধী মহিলাদের ঘোর অপমান করিয়াছেন। বোঝা গেল, গোটা দুনিয়া যখন খাকি হাফপ্যান্টকে একটি প্রতীক হিসাবে জানে— আরএসএস-এর প্রতীক— তখন স্মৃতি ইরানি অথবা তাঁহার রাজনৈতিক ঊর্ধ্বতনরা রাহুল গাঁধীর বক্তব্যটিকে এমন আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করিতেছেন বিপন্নতা হইতে বাঁচিবার জন্যই। সংঘ এবং বিজেপি-তে মহিলাদের তাৎপর্যপূর্ণ অনুপস্থিতির প্রতি রাহুলের কটাক্ষ যে কত যথার্থ এবং সময়োচিত, নেতাদের প্রতিক্রিয়াই তাহার অভ্রান্ত প্রমাণ।
কিন্তু এই বিপন্নতা বোধ কেন? উত্তরটি আন্দাজ করা কঠিন নয়। শোনা যাইতেছে, ইদানীং নাকি সাধারণ্যের মধ্যে ‘ভক্তি’ গুরুতর রকম কমিতেছে। নোটবাতিল হইতে জিএসটি, কর্মসংস্থান হইতে প্রত্যেক ভারতীয়র অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা পাঠাইবার জুমলা, সব মিলাইয়া মানুষ চটিতেছে। ফলে, খড়কুটা মাত্রেই আঁকড়াইয়া ধরা এখন বিজেপির পক্ষে স্বাভাবিক। হাফপ্যান্ট পরিহিত মহিলার উল্লেখ পাইবা-মাত্র অশোক রোড তাহাকে খড়কুটা সমঝাইয়াছে, এবং তাহা লইয়া টানাটানি আরম্ভ করিয়াছে। স্মৃতি ইরানির ভাষ্য বলিতেছে, তাঁহাদের মূল আপত্তি রাহুল গাঁধী সংঘ-সমর্থক মহিলাদের হাফপ্যান্ট পরিতে বলায়। ইহাতে নাকি সংঘের মহিলা সদস্য এবং পুরুষ সদস্যদের মা-বোন-কুটুম্বরা যারপরনাই অপমানিত হইয়াছেন।
মহিলারা হাফপ্যান্ট পরিলে অসুবিধা কোথায়, সাধারণ নাগরিক তাহা বুঝিতে না পারিলেও খাপ পঞ্চায়েতের কর্তারা উত্তমরূপে বুঝেন। মহিলারা হাফপ্যান্ট পরিলে তাঁহাদের পায়ের অংশবিশেষ অনাবৃত থাকে— তাহাতে ভারতীয় সংস্কৃতির গায়ে ফোসকা পড়ে, পুরুষদের অবদমিত কাম চাগাইয়া উঠে, ফলে তাহারা ধর্ষণ ইত্যাদি করিয়া বসে। আরএসএস ও আরএসএস-মনস্ক বিজেপির বিশ্বাস, এই খাপ পঞ্চায়েত-সুলভ মানসিকতা ভারতীয় সমাজে জনপ্রিয় করিয়া তোলা খুব সহজ। তাই রাহুল গাঁধীর মন্তব্য পাইয়াই তাঁহারা কিছু রাজনৈতিক নম্বর তুলিতে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছে। ইহা প্রথম বার নয়। সংঘ পরিবার এবং বিজেপি প্রশাসন সম্প্রতি কালে বহু ক্ষেত্রে মহিলাদের সম্পর্কে হীন মনোভাব সমাজে প্রতিষ্ঠা করিবার চেষ্টা চালাইয়া আসিতেছে। মনোহরলাল খট্টার এই দলেরই কুলতিলক, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিটি তাঁহারই করায়ত্ত। ছাত্রীদের মুখে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাইয়া যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ছাত্রীদের প্রতিই আঙুল তোলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁহারাই বর্তমান শাসককুলের পছন্দসই। এমন দলের অভ্যন্তরে মহিলারা যে ভূমিকা পাইবেন না, তাহাতে আশ্চর্য কী? আর যে মহিলারা দলে বড় ভূমিকা পাইবেন, তাঁহারাও মহিলাদের প্রতি অবমাননার ভাষাতেই কথা বলিবেন, তাহাও স্বাভাবিক। রাহুল গাঁধী ভুল বলেন নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy