Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয়

অর্বাচীনের আগ্রাসন

হিটলারের ইহুদি-নিধনের জন্য জার্মান রাষ্ট্রনায়করা বহু বার ক্ষমা চাহিয়া লইয়াছেন। গণপ্রজাতান্ত্রিক চিন ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’-এর জন্য ক্ষমা চাহিবে— অন্তত এই ঐতিহাসিক ভুলের অর্ধশতক অতিক্রান্ত হইবার মুহূর্তেও— তেমন আশা কম। ১৯৮১ সালে দেং জিয়াওপিং-এর কমিউনিস্ট পার্টি এই বিপ্লবকে ভুল বলিয়াই পর্দা টানিয়া দিয়াছিল। মাও ৎসে তুং-এর চিন আর বর্তমানের চিনের মধ্যে ব্যবধান দুস্তর।

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০০:১৫
Share: Save:

হিটলারের ইহুদি-নিধনের জন্য জার্মান রাষ্ট্রনায়করা বহু বার ক্ষমা চাহিয়া লইয়াছেন। গণপ্রজাতান্ত্রিক চিন ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’-এর জন্য ক্ষমা চাহিবে— অন্তত এই ঐতিহাসিক ভুলের অর্ধশতক অতিক্রান্ত হইবার মুহূর্তেও— তেমন আশা কম। ১৯৮১ সালে দেং জিয়াওপিং-এর কমিউনিস্ট পার্টি এই বিপ্লবকে ভুল বলিয়াই পর্দা টানিয়া দিয়াছিল। মাও ৎসে তুং-এর চিন আর বর্তমানের চিনের মধ্যে ব্যবধান দুস্তর। শি জিনপিং বা তাঁহার কোনও উত্তরসূরি আরও এক বার সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পথে হাঁটিবেন, সেই সম্ভাবনা কার্যত শূন্য। কিন্তু, সেই ভুল হইতে শিক্ষা লওয়ার সুযোগ চিনের যেমন আছে, বাকি দুনিয়ারও আছে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে তাহার মূলগত রূপে দেখিলে বলা চলে, তাহা ছিল সংস্কৃতের বিরুদ্ধে প্রাকৃতের অভ্যুত্থান। অর্বাচীনের দাপট। চিনের সমাজ সেই অভ্যুত্থানের পট রচনা করিয়া রাখিয়াছিল। আর্থিক অসাম্য যতখানি ছিল, শিক্ষা বা সংস্কৃতির অসাম্য তাহার তুলনায় বিন্দুমাত্র কম ছিল না। মাও এই অসাম্যকে ব্যবহার করিয়াছিলেন। অভিজাতদের বিরুদ্ধে অর্বাচীনের রোষকে তিনি ব্যবহার করিয়াছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণির হাতে প্রশ্নাতীত ক্ষমতা তুলিয়া দিয়া। যে সদর দফতরে তিনি কামান দাগিবার সুপরামর্শ দিয়াছিলেন, তাহা শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতার সদর দফতর ছিল না। বোধ, শিক্ষা, মেধাও তাঁহার কামানের নিশানায় ছিল। অর্বাচীনের হাতে বন্দুকের নল থাকিলে তাহার পরিণতি কী হইতে পারে, ১৯৬৬-র পরের দশ বৎসর চিন বুঝিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানিবেন, সেই বিপদ এখনও ফুরায় নাই।

বিপদ শুধু চিনের ন্যায় দেশের নহে। গণতান্ত্রিক দুনিয়াতেও এই বিপদ একই রকম মারাত্মক। একনায়কতন্ত্রে যদিও বা সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা করা চলে, গণতন্ত্রের মন্দিরে তাঁহারই মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। ফলে, সাধারণ মানুষ যাহা চাহে, তাহাকেই প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতাও গণতন্ত্রের চরিত্রলক্ষণ। সেই চাহিদা প্রাকৃত। রাজনীতি সেই চাহিদাকে গুরুত্ব দিবে, স্বাভাবিক। কিন্তু, কোনও অত্যুৎসাহী রাজনীতিক প্রাকৃতকেই একমাত্র জ্ঞান করিয়া বসিলে মুশকিল। যাত্রাপালা লইয়া সমস্যা নাই। সেই সংস্কৃতিকে, মানুষের চাহিদা মানিয়াই, গুরুত্ব দেওয়াও স্বাভাবিক। কিন্তু আবদুল করিম খাঁ অথবা ঋত্বিক ঘটকের উপর যাত্রাপালার বুলডোজার চালাইয়া দেওয়া চলে না। তাহা অন্যায়। সংস্কৃত বনাম প্রাকৃতের দ্বন্দ্বটির সমাধান গণতন্ত্রের ভোটের নিয়মে হয় না। প্রাকৃতের সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে সংস্কৃতের গুরুত্ব অস্বীকার করিলে তাহা ক্রমে সমাজকে গ্রাস করিয়া ফেলে। যাহা পরিশীলিত, তাহাকে বর্জনীয় জ্ঞান করিলে যে সমাজের জন্ম হয়, তাহা শুধু সাংস্কৃতিক অর্থে অন্ত্যজ নহে, তাহা সর্বার্থেই বিপজ্জনক। যে দেশে মুড়ি ও মুড়কি একই দামে বিকায়, বিচক্ষণ ব্যক্তি সেই দেশ ত্যাগ করেন।

কিন্তু, যত ক্ষণ শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসাম্য থাকিবে, তত ক্ষণ টানাপড়়েনটিও থাকিবে। সংস্কৃত প্রাকৃতকে তাচ্ছিল্য করিবে, এবং প্রাকৃতও সেই অবজ্ঞা ফিরাইয়া দিবে। তাহার অভিঘাত পশ্চিমবঙ্গ জানে। কাজেই, দূরত্বটি ঘোচানো প্রয়োজন। অর্বাচীনের আগ্রাসনের পথে নহে, বরং সংস্কৃতকেই সহনশীল হইতে হইবে, নিচু তলায় পৌঁছাইতে হইবে। এই প্রসঙ্গে গণনাট্য সঙ্ঘের উদাহরণটি স্মর্তব্য। যাহা প্রকৃত অর্থেই সংস্কৃতি, সাধারণ্যের নিকট তাহাকে পৌঁছাইয়া দেওয়ার এমন প্রচেষ্টা ভারতে আগেও হয় নাই, পরেও নহে। গজদন্তমিনার হইতে নামিয়া শিল্পীরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়াছিলেন। মাও-এর চিনের ন্যায় শ্রমিকের ভূমিকায় নহে, তাঁহাদের যাত্রা ছিল শিল্পী হিসাবেই। তাহা মানুষকে ছুঁইয়াছিল। এইখানেই প্রশ্নটি সদর্থক রাজনীতির। যাঁহারা মানুষের রাজনীতি করেন, সংস্কৃত ও প্রাকৃতের ব্যবধানটি কমাইয়া আনিবার চেষ্টা ছাড়িলে তাঁহাদের চলিবে না।

য ত্ কি ঞ্চি ত্

ঐশ্বর্যা রাই কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বেগুনি লিপস্টিক পরলেন, আর সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির রোল! কেউ বলছে, উনি কালোজাম খেয়ে রেড কার্পেটে হাঁটছেন, কেউ বলছে ঠোঁটে এশিয়ান পেন্টস লাগালে এই হয়! যদি রিহানা বা বিয়ন্সে এই কাণ্ডটি করতেন? সম্ভবত, দুঃসাহস ও ফ্যাশন-ভাঙা ধারণাকে কুর্নিশ করে ধন্য-ধন্য পড়ে যেত। উদ্ভট উৎকট উন্মাদ জামাকাপড় ও অঙ্গ-আলপনা বাগিয়ে লেডি গাগা যেমন আইকন হয়ে গেলেন। আর ভারতীয় মহিলা ছক ভাঙলেই, কমেডি!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy