Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আইনের ভূত

সন্দেহ হয়, নাগরিকের ভাবিতে পারিবার ক্ষমতাই রাষ্ট্রের নিকট বিপজ্জনক হইয়া উঠিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

রাষ্ট্রের উদ্ধত, অসহিষ্ণু মুখ দেখিতেই নাগরিক যখন অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে, তখন এক ঝলক স্বস্তির বাতাস আনিল ভূপেশ বাঘেলের নির্দেশ। ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন, সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারা প্রয়োগ করা যাইবে না। ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা করিবার অপরাধে ধৃত এক ব্যক্তিকে অবিলম্বে মুক্তি দিবার নির্দেশ দিয়াছেন পুলিশকে। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীর নিকট ইহা অপ্রত্যাশিত নয়। সাধারণ নির্বাচনের ইস্তাহারে কংগ্রেস ঘোষণা করিয়াছিল, ক্ষমতায় আসিলে তাহারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারা বাতিল করিবে। একই অঙ্গীকার করিয়াছিল সিপিআইএম। নাগরিক বলিতে পারেন, স্বাধীনতার পরে সাত দশক কাটিয়াছে। এত দিনে বোধোদয় হইল? হয়তো ইহা অকস্মাৎ নহে। মোদী সরকারের পাঁচ বৎসরের শাসনকালে বারংবার রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারার প্রয়োগ যে ভাবে বিরোধীকণ্ঠ অবরুদ্ধ করিতে চাহিয়াছে, তাহা নাগরিক সমাজকে আহত ও আন্দোলিত করিয়াছে। বিজেপি-বিরোধিতার তাগিদ হইতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান লইয়াছিল কংগ্রেস-সিপিএম। আশ্বাসের কথা, নির্বাচন মিটিবার পর কংগ্রেসের অন্তত এক জন মুখ্যমন্ত্রী তাহা বিস্মৃত হন নাই। অবশ্য ছত্তীসগঢ় পুলিশও অাশ্চর্য কাজ করিয়াছে। ঘনঘন বিদ্যুৎহীনতার পশ্চাতে সরকারি কর্মীদের দুর্নীতি থাকিতে পারে, এক ব্যক্তি ফেসবুকে এই সন্দেহটি লিখিয়াছিলেন মাত্র। এমন মন্তব্যেও যে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যাহত হইতে পারে, তাহা পুলিশ ব্যতীত আর কে ভাবিবে!

সন্দেহ হয়, নাগরিকের ভাবিতে পারিবার ক্ষমতাই রাষ্ট্রের নিকট বিপজ্জনক হইয়া উঠিয়াছে। সরকারের সমালোচনায় সংবাদপত্র অথবা সমাজমাধ্যম মুখর হইলেই বজ্রপাতের ন্যায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ নামিয়াছে নাগরিকের মস্তকে। এমন নহে যে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ধারায় যাঁহারা অভিযুক্ত, তাঁহাদের সব কথা কিংবা কাজ সমর্থনের যোগ্য। দিল্লির ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার, তেলঙ্গানার কবি ভারাভারা রাও কিংবা মণিপুরের সাংবাদিক কিশোরচন্দ্রের বক্তব্য যুক্তিযুক্ত না-ই হইতে পারে। কিন্তু তাঁহারা নিজের মত প্রকাশ করিবার জন্য দেশ বিপন্ন হইয়াছে, এ দাবি হাস্যকর। বরং তাঁহাদের বাক্‌স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপই ভারতকে বিপন্ন করিতেছে। ব্রিটিশ যুগে মুষ্টিমেয় শ্বেতাঙ্গ এক বিশাল ভূখণ্ডের অধিকাংশ মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করিয়া রাখিবার জন্য যে আইনের চাবুক মারিত ভারতীয়ের পিঠে, গণতান্ত্রিক ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সেই একই ধারা কী প্রয়োজন?

আসল কথা, তাহা নাগরিকের জন্য নিষ্প্রয়োজন হইলেও শাসকের কাছে তাহার প্রয়োজন ফুরায় নাই। তাই সতেরোটি সাধারণ নির্বাচনের পরও ১২৪-ক ধারাটি বাতিল হয় নাই। ১৯২২ সালে মহাত্মা গাঁধী গ্রেফতার হইয়াছিলেন এই ধারায়। অভিযোগ ছিল, তিনি সরকারের প্রতি অশ্রদ্ধা জাগাইয়াছেন। আদালতে গাঁধী বলিয়াছিলেন, আইন করিয়া শ্রদ্ধা জাগানো যায় না। কোনও ব্যক্তি বা ব্যবস্থার প্রতি যদি কাহারও শ্রদ্ধা না থাকে, তাহাকে অশ্রদ্ধা ব্যক্ত করিবার সুযোগ দিতে হইবে, যত ক্ষণ তিনি হিংসায় প্রণোদনা না দিতেছেন। বিলম্বে হইলেও, গাঁধীর কথার সত্যতা ইংরাজ বুঝিয়াছে। ব্রিটেনে বহু পূর্বে রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইন বাতিল হইয়াছে। সেই আইনের ভূত এখনও বহন করিতেছে গাঁধীর দেশ।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Bhupesh Baghel Chhattisgarh Sedition Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy