দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে পাঁচ বাঙালি শ্রমিকের নিহত হওয়ার ঘটনা লইয়া রাজনৈতিক কাজিয়া ধৈর্যের সীমা ছাড়াইতে চাহে। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলিয়াছেন, রাজ্যে কাজ পাইলে শ্রমিকেরা ভিন্ রাজ্যে যাইতেন না, সন্ত্রাসবাদীর হানাতে প্রাণও যাইত না। প্রাণ বাঁচাইতে তবে কি রাজ্যের বাহিরে যাত্রা নিষিদ্ধ হইল? ইহাই কি নরেন্দ্র মোদীর ‘নূতন ভারত’? সংবিধানের ভারত কিন্তু এমন নহে। ভারতের সকল নাগরিক দেশের যে কোনও স্থানে যাইতে পারিবেন, বসবাস করিতে ও কাজ করিতে পারিবেন, ইহা প্রত্যেক ভারতীয়ের মৌলিক অধিকার। অতএব সরকারের দায়িত্ব হইল ভারতের সর্বত্র সকল নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কাশ্মীরে কেন্দ্র তাহা করিতে ব্যর্থ হইয়াছে, এই সহজ সত্যটি স্বীকার করিতে দিলীপ ঘোষের বাধা কোথায়? অভূতপূর্ব সেনা উপস্থিতি সত্ত্বেও সন্ত্রাসবাদী হানা ঘটিল কী করিয়া, সেই প্রশ্নের উত্তরে কর্মসংস্থানের অভাব লইয়া অভিযোগের অবতারণা অর্থহীন। নিহত বাঙালি মানুষগুলি শ্রমিক না হইয়া পর্যটক, সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক কিংবা ছাত্রও হইতে পারিতেন। কিছু দিন পূর্বেই কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীরা এক ট্রাকচালককে হত্যা করিয়াছে। সুরক্ষিত থাকিতে হইলে কাশ্মীরে যাওয়া চলিবে না, ইহাই কি বলিতে চান বিজেপি নেতা? সেনাবাহিনী তবে আছে কেন?
কর্মোপলক্ষে কেন অদক্ষ অথবা দক্ষ কর্মীরা ঘর ছাড়িয়া অন্যত্র পাড়ি দেন, সে বিষয়ে বহু আলোচনা রহিয়াছে অর্থশাস্ত্রে। তাহাতে স্পষ্ট যে পরিযায়ী শ্রমকে অনভিপ্রেত বলিয়া দেখেন না অর্থনীতিবিদরা। উন্নয়নের নিরিখে বিভিন্ন অঞ্চলের হেরফের থাকিতে বাধ্য, অতএব উন্নত জীবনের খোঁজে শ্রমিক বা প্রশিক্ষিত কর্মীদের একটি অংশ সর্বদাই অপর দেশে বা রাজ্যে কাজ খুঁজিবেন। কেরল হইতে বহু শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করিতে যান উন্নত জীবনের আশায়। পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকরা একই কারণে কেরলযাত্রা করেন। এই পরিযায়ী শ্রমশক্তির উপর নির্ভরশীলতা রহিয়াছে বহু রাজ্যে। শ্রমিকরা সর্বদা বাধ্য হইয়া ঘর ছাড়িতেছেন, এমন নহে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যথেষ্ট কর্মসংস্থান করিতে পারিল কি না, বিশেষত একশত দিনের কাজের প্রকল্প গ্রামবাসীর ন্যূনতম রোজগারের চাহিদা মিটাইতে পারিল কি না, এগুলি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু অভিবাসনের সহিত তাহার বিরোধ নাই।
বরং প্রশ্নটি বিরোধী নেতারা করিতে পারিতেন, তাহা এই— ভিন্ রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার জন্য যে সকল বিধি আছে, সেগুলি কি সরকার পালন করিতেছে? পরিযায়ী শ্রমিকের নামের নথিভুক্তি, ঠিকাদারের নথিভুক্তি, ন্যূনতম মজুরি এবং নিরাপত্তার শর্তাবলির নিশ্চয়তা, সেগুলি কি রাজ্যের শ্রম দফতর নিশ্চিত করিতেছে? কখনও ইরাক, সিরিয়া, কখনও রাজস্থান বা কর্নাটকে বাংলার শ্রমিকরা আক্রান্ত, নিহত হইতেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পরে সরকার সেই শ্রমিকদের অস্তিত্ব বিষয়ে জানিয়াছে। ক্ষতিপূরণ দিয়া দায় সারিয়াছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি কী কর্তব্য রাজ্য করিতেছে, সেই প্রশ্ন জরুরি। নিরাপত্তা সকল নাগরিকের অধিকার। ভিন্ রাজ্যে যাইবার প্রয়োজন কমিলে প্রশাসনের নিরাপত্তা জুগাইবার প্রয়োজন কমিবে, অতএব অধিক ভ্রমণ বাঞ্ছনীয় নহে, এমন বালখিল্য যুক্তির অবতারণা না করিলেই ভাল হইত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy