Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Brick Kiln

পরিবেশের স্বার্থে বেআইনি ইটভাটা বন্ধ হোক

আইনি ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে বাংলা ইট ভাটা। এই সব ভাটার জ্বালানির জন্য কাটা পড়ছে এলাকার গাছ। সেই গাছ পুড়ে ছড়াচ্ছে ধোঁয়া। দূষিত হচ্ছে এলাকা। লিখছেন নির্মাল্য প্রামাণিককী এই বাংলা ইটভাটা? এই ধরনের ইটভাটাগুলিতে চিমনি-ভাটা বা হাওয়া-ভাটার মতো উঁচু চিমনি থাকে না। ফলে আশেপাশের লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে কাঠ-পোড়ানো দূষিত ধোঁয়া।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৫০
Share: Save:

সারা বিশ্বে যখন থাবা বসাচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে মাথা ঘামাচ্ছেন দিকপাল সব পরিবেশবিজ্ঞানী তখন আমাদের ঘরের কাছের পরিবেশ নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। এখন তো দেশ জুড়ে লাগাতার প্রচারের মাধ্যমে পরিবেশ নিয়ে মানুষকে সচেতন করার নিরন্তর চেষ্টা চলছে, হচ্ছে এ-সংক্রান্ত মিটিং-মিছিল, গড়ে উঠছে জনমত। কিন্তু বাগদা ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় বাংলা ইটভাটার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশ দূষণ।

কী এই বাংলা ইটভাটা? এই ধরনের ইটভাটাগুলিতে চিমনি-ভাটা বা হাওয়া-ভাটার মতো উঁচু চিমনি থাকে না। ফলে আশেপাশের লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে কাঠ-পোড়ানো দূষিত ধোঁয়া। আর তাতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দাদের। দেখা দেয় শ্বাস ও কাশিজনিত রোগ, এমনকী, ফুসফুসের সংক্রমণও। ভাটা থেকে উড়ে আসা ছাই ক্ষতি করে কৃষিজমির এবং ফসলের।

এই বাংলা ভাটা চালানোর কারণেই কোথাও মাঠের পর মাঠ থেকে কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে খেজুর গাছ। শীতকালে তাই গ্রামবাংলায় আর পাওয়া যাচ্ছে না খেজুরের রস, পাটালি বা খেজুর গুড়। কোথাও আবার সরু রাস্তায় মাটি বোঝাই ট্রাক বা ট্রাক্টর ঢুকে ভাঙছে রাস্তাঘাট। গাড়ি থেকে রাস্তায় পড়ে যাওয়া মাটি থেকে কাদা হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। বাগদার আমডোব, কুড়ুলিয়া, মামা ভাগ্নে, সিন্দ্রাণী অঞ্চলগুলির অলিতে-গলিতে গজিয়ে উঠেছে এমনই অনেক বাংলা ভাটা।

ওই সব এলাকায় গেলেই দেখা যাবে, বাংলা ভাটায় ইট পোড়ানো চলছে। সামনে ডাঁই করে রাখা রয়েছে খেজুর গাছের গুঁড়ি। ধোঁয়ায় ভর্তি চারপাশ। এ সব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘সারা বছর, বিশেষ করে শীতকালটায় আমাদের এইরকম ধোঁয়া সহ্য করে যেতে হয়। এ জন্য বিভিন্ন রোগব্যাধিও আমাদের হচ্ছে।’

ওই ধরনের ইটভাটাগুলি পরিবেশবিধি মেনে চলে না। এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তোয়াক্কা করে না কোনও আইনকানুনেরও। কোথাও পঞ্চায়েত থেকে নাম-কা-ওয়াস্তে অনুমতিপত্র নেওয়া হয়। কোথাও আবার সেটুকুও থাকে না বলেই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। আমডোব অঞ্চলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষিজীবী জানান, এই এলাকায় প্রায় দশ-বারোটি বাংলা ভাটা আছে। কোনওটিরই বৈধ কাগজপত্র নেই। বিভিন্ন দফতরে পয়সা দিয়ে রমরম করে চলছে। বাগি গ্রামের এক ভাটা-মালিক জানান, ভাটা চালাতে পয়সা তো দিতেই হয়। কোনও কোনও দফতরে মাসিক বন্দোবস্তও থাকে। শীতকালে উৎপাদন বেশি হয় বলে রেট একটু বেশি থাকে। ইট ভাটা মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ভাটাগুলির আইনি বৈধতা যে নেই, সে কথা স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ট্যাক্স দিতে হয় না বাংলা ভাটাগুলিকে। এজন্য ওদের উৎপাদন খরচও কম। ইট ভাটা মালিক সংগঠনসূত্রে জানা গিয়েছে, কাগজপত্র জমা নিয়ে বাংলা ভাটাগুলিকে বৈধতা দান করার জন্য জেলাশাসকের কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে বছর দু’য়েক আগে একবার আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও সুফল মেলেনি। প্রশাসনসূত্র জানাচ্ছে, বাংলা ভাটা চালানো বেআইনি। চিমনি-ভাটা চালানোর ক্ষেত্রেও ভূমি রাজস্ব ও পরিবেশ দফতরের সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে চালাতে হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Brick Kiln Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy