Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
BJP

অন্যায়তর

কার্ড বিলি করিয়া বেকারের পরিসংখ্যান জোগাড় করিবার পদ্ধতির মধ্যে যে সরকারি ভাবটি আছে, তাহা যে হেতু বহু মানুষের মনেই বিভ্রম সৃষ্টি করিতে পারে, অতএব তাহাকে পৃথক করিয়া দেখাই বিধেয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:১৪
Share: Save:

নির্বাচন উপস্থিত হইলেই নেতা-নেত্রীরা হরেক প্রতিশ্রুতি দিবেন, তাহা প্রায় আলো-বাতাসের ন্যায় স্বাভাবিক হইয়া গিয়াছে। শেষ অবধি তাঁহারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখিবেন না, তাহাও একই রকম স্বাভাবিক। এই অন্যায় আচরণটি মানুষ অগত্যা মানিয়া লইয়াছেন— বুঝিয়াছেন, ইহা কথার কথা। কয় জনই বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে জানিতে চাহিয়াছেন, বৎসরে এক কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতির কী হইল? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিক বার কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বেকার যুবক-যুবতীদের মধ্যে যে ফর্ম বিলি করিতেছে, তাহাকে কি তবে এমন ‘কথার কথা’ হিসাবেই গণ্য করা বিধেয়? নেতারা যেমন কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেন, এবং ভাঙেন— তাহার সহিত এই কার্ডের কোনও ফারাক আছে কি? বস্তুগত ভাবে, এবং মানুষের দৃষ্টিতে? এইখানেই কার্ড বিলির প্রকৃত মাহাত্ম্য— তাহার সহিত মৌখিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কোনও ফারাক খাতায়-কলমে প্রতিষ্ঠা করা মুশকিল, কারণ এই কার্ডে কোথাও কোনও আইনি অঙ্গীকার নাই। আইনি বিচারে মৌখিক প্রতিশ্রুতির তুলনায় এই কার্ডের মূল্য সম্ভবত কানাকড়িও বেশি হইবে না। কিন্তু, মানুষের মন এই ভাবে বিচার করে না। বহু সাধারণ মানুষই এখনও রাষ্ট্রের সহিত রাজনৈতিক দল বা তাহার নেতাদের পৃথক করিয়া দেখিতে অভ্যস্ত নহেন। ফলে, অনেকেই ভাবিয়া লইতে পারেন, সভার প্রতিশ্রুতির তুলনায় এই কার্ডের গুরুত্ব অধিক— বিজেপি জিতিয়া আসিলে সত্যই এই কার্ড অনুসারে কর্মসংস্থান করিবে। অর্থাৎ, বিজেপি যাহা বলিতেছে, মানুষের নিকট তাহা অনেক বেশি সত্য হিসাবে প্রতিভাত হইতে পারে। তাহাতে বিজেপির লাভ বিলক্ষণ। সুতরাং, প্রচারকৌশল হিসাবে ইহা তাৎপর্যপূর্ণ, তাহাতে সংশয় নাই।

প্রশ্ন হইল, তাহা নৈতিক কি না। ইহার মধ্যে মানুষকে বিভ্রান্ত করিবার যে অনতিপ্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা রহিয়াছে, তাহা সম্ভবত সমাপতন হেন। নেতাদের মুখের কথার তুলনায় ফর্মের গ্রহণযোগ্যতা বেশি, জানিয়াই বিজেপি এই পথে হাঁটিতেছে বলিয়া অনুমান করা চলে। কেহ বলিতেই পারেন, যে জনগণের উপর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শাসক নির্বাচনের ভার ন্যস্ত, তাহা এমন বিবেচনাহীন হইবে কেন? নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিমাত্রেই যে ভঙ্গুর, এবং এই ক্ষেত্রে যে বিজেপির সহিত অন্য কোনও দলের ফারাক নাই— বস্তুত, ফারাক থাকিলে তাহা বিজেপির বিপক্ষেই যায়— এই কথাটি মানুষ অভিজ্ঞতায় বুঝিবেন না কেন? ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে বিজেপি যে প্রতিশ্রুতিগুলি দিয়াছিল, সাড়ে ছয় বৎসরে তাহার কার্যত কোনওটিই বাস্তবায়িত হয় নাই। সুতরাং, তাহাদের নূতন প্রতিশ্রুতিতে মানুষ বিশ্বাস করিবেন কেন?

প্রশ্নগুলিকে উড়াইয়া দেওয়া যায় না। কিন্তু, কার্ড বিলি করিয়া বেকারের পরিসংখ্যান জোগাড় করিবার পদ্ধতির মধ্যে যে সরকারি ভাবটি আছে, তাহা যে হেতু বহু মানুষের মনেই বিভ্রম সৃষ্টি করিতে পারে, অতএব তাহাকে পৃথক করিয়া দেখাই বিধেয়। এবং, শুধু মানুষের মন ভুলানো নহে, তাহাদের বিভ্রান্ত করিবার প্রচেষ্টাটিকেও পৃথক ভাবে চিহ্নিত করা বিধেয়। বিশেষত, পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে— যেখানে বেকারত্বের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি, কাঠামোগত এবং তীব্র। স্বাধীনতা-উত্তর পর্বে সমস্যাটি কখনও রাজ্যের পিছু ছাড়ে নাই— কোনও সরকারই তাহার সম্পূর্ণ সমাধান করিতে পারে নাই। এমন একটি সমস্যাকে হাতিয়ার বানাইয়া বিজেপি মানুষের মনে বিভ্রম সৃষ্টি করিতে চাহিতেছে। এই প্রচার আইনের গণ্ডি লঙ্ঘন করে কি না, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু, ইহা নৈতিকতার লক্ষ্মণরেখা পার করিয়াছে। মিথ্যা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি প্রদানের যে অন্যায়টি সব দলই করে, বিজেপির ফর্ম বিলি চরিত্রে তাহার তুলনায় অন্যায়তর।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Campaign Job
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy