Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Jammu And Kashmir

জম্মু-কাশ্মীর আর ৩৭০ ধারা সমার্থক নাকি! প্রত্যাহার তো করতেই হত

আজ না হোক কাল, এটাই হওয়ার ছিল। জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ৩৭০ ধারা কোনও স্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল না, একটা অস্থায়ী ব্যবস্থাপনা ছিল।

রাজ্যসভায় ৩৭০ ধারা রদ নিয়ে তখন বিবৃতি দিচ্ছেন অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

রাজ্যসভায় ৩৭০ ধারা রদ নিয়ে তখন বিবৃতি দিচ্ছেন অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ২০:২৩
Share: Save:

আজ না হোক কাল, এটাই হওয়ার ছিল। জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ৩৭০ ধারা কোনও স্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল না, একটা অস্থায়ী ব্যবস্থাপনা ছিল। এবং সে বন্দোবস্ত যে লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখে গৃহীত হয়েছিল, সেই লক্ষ্যের দিকে অর্থাৎ গণভোটের দিকে এগনোর কোনও লক্ষণই ছিল না কোথাও। এই পরিস্থিতি তো অনাদি কাল ধরে চলতে পারে না। চললে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি কাশ্মীরের মানুষেরই। ঠিক যে ভাবে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এসেছেন ফেলে আসা দশকগুলোয়। তাই ভারত সরকার যে পদক্ষেপ জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে করল, তাকে গ্রহণ করতে পারলে কাশ্মীরিদের লাভই সবচেয়ে বেশি।

কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ইতিহাসটা কম বেশি অনেকেরই জানা। সুতরাং এ-ও তাঁদের জানা যে, ভারতভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করার সময়ে জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন শাসক মহারাজা হরি সিংহ কিন্তু এই রকম কোনও সুনির্দিষ্ট শর্ত (৩৭০ ধারা) দেননি। হরি সিংহের দূত গোপালস্বামী আয়েজ্ঞারই ৩৭০ ধারার মূল রূপকার ছিলেন ঠিকই। কিন্তু ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন’-এ কোথাও এই ধারার কথা উল্লেখ করা ছিল না। পরবর্তী কালে ৩৭০ ধারা জারির সিদ্ধান্ত হয়। সে সময়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও কিন্তু ৩৭০ ধারা জারির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন। কারণ, যত ক্ষণ না কাশ্মীর বিতর্কের সম্পূর্ণ অবসান ঘটছে, শুধুমাত্র তত ক্ষণ পর্যন্তই অস্থায়ী ভাবে ওই ধারা জারি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল সে সময়ে। তাই ৩৭০ ধারা এবং জম্মু-কাশ্মীরকে সমার্থক ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই।

যে প্রক্রিয়ায় দেশভাগ হয়েছিল এবং যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভারত ও পাকিস্তান রূপ পেয়েছিল, সেই প্রক্রিয়া মানলে কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী মহারাজা হরি সিংহই ছিলেন। তাই পাক হানাদারদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পরে হরি সিংহ যখন ভারতীয় সেনার সাহায্য চাইলেন এবং জওহরলাল নেহরুর দেওয়া শর্ত মেনে ভারতভুক্তির চুক্তিতে সই করে দিলেন, তখন থেকে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই ধরতে হবে। তবে জম্মু-কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের বিষয়ে সে রাজ্যের নাগরিকদের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে গণভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত— এই রকম তত্ত্বও পরবর্তী কালে উঠে আসে এবং কোনও কোনও শিবিরের মান্যতা পায়।

গণভোটের মাধ্যমে যদি কাশ্মীর বিতর্কের অবসান ঘটানো হত, তা হলে কিন্তু আপত্তি করার কারণ ছিল না বলে আমার মত। কিন্তু ৭২ বছরেও তো গণভোট হল না। অস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে কোনও স্থায়ী ব্যবস্থাপনার দিকে এগনো তো কাশ্মীরের জন্যও জরুরি ছিল।

কেউ বলতে পারেন যে, ৩৭০ ধারাকেই তো স্থায়ী বন্দোবস্তের স্বীকৃতি দেওয়া যেত। না, তা দেওয়া যেত না। ৩৭০ ধারা এত বছর ধরে দেশের মধ্যে যেন আরও একটা পৃথক দেশ তৈরি করে রেখেছিল। প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে ভারতের আইন জম্মু-কাশ্মীরে প্রযোজ্য হচ্ছিল না। ভারতীয় সংসদে যে বিল পাশ হয়েছে, গোটা দেশের জন্য তা আইন হিসেবে বিবেচিত হত। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে সে আইন প্রযোজ্য হত না। যে সব প্রশাসনিক বিভাগ কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত, সেই সব বিভাগে কেন্দ্রের আইন কাশ্মীরে কার্যকর করতে হলে সে বিলটি আগে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় পাশ করাতে হত।

এতেই শেষ নয়। ৩৭০ ধারাকে হাতিয়ার করে জম্মু-কাশ্মীরের সরকার এমন আইন সে রাজ্যে পাশ করিয়েছিল যে, দেশের অন্য কোনও রাজ্যের নাগরিক জম্মু-কাশ্মীরে জমি বা বাড়ি কিনতে পারতেন না। সে অধিকার ছিল না। ফলে জম্মু-কাশ্মীরে বাইরে থেকে কেউ বিনিয়োগ করতে পারছিলেন না, বড় শিল্প গড়ে উঠছিল না, অর্থনীতির উন্নতি ঘটানো যাচ্ছিল না। ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ৩৫(এ) ধারাও অকেজো হয়ে গেল। এর ফলে জম্মু-কাশ্মীরে বা লাদাখে জমি কেনা বা সম্পত্তির মালিক হওয়া অন্য রাজ্যের নাগরিকদের পক্ষেও সম্ভব হবে। সেখানে বিনিয়োগের দরজা এক ধাক্কায় খুলে যাবে।

আরও পড়ুন: সময়ের চিহ্ন

জম্মু-কাশ্মীরের জট এতই জটিল ছিল এবং পরিস্থিতি এতই স্পর্শকাতর ছিল যে, সে জট ছাড়ানোর প্রক্রিয়াটা একটু আড়াল রেখেই শুরু করার দরকার হয়তো ছিল। প্রথমে আটঘাট বেঁধে নিয়ে আচমকাই সরকারকে ঝাঁপাতে হত তার সমাধানের লক্ষ্যে। সরকার সেই পথেই এগিয়েছে।

তবে প্রশ্ন তার পরেও থাকে। জম্মু-কাশ্মীরের জনসাধারণকে একেবারে অন্ধকারে রেখে আচমকা এত বড় পদক্ষেপ করা কি সরকারের উচিত ছিল? জম্মু-কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য গণভোট যখন নেওয়া যায়নি বা নেওয়া হয়নি, তখন এত বড় পদক্ষেপ করার আগে সে রাজ্যের বাসিন্দাদের মতামতটা কোনও ভাবে নেওয়ার চেষ্টা করা জরুরি ছিল না কি? পদক্ষেপ হয়তো আচমকাই করতে হত, কিন্তু এমন একতরফা ভাবে করা কি উচিত হল?

আরও পড়ুন: তিন মাসে দু’লক্ষ ছাঁটাই, ত্রাণ চাইছে শিল্প

ঔচিত্য-অনৌচিত্যের জবাব অচিরেই হয়তো মিলবে। তবে এটুকু বলাই যায় যে, একটা দীর্ঘ অচলাবস্থার অবসান ঘটানোর চেষ্টা সরকারের তরফ থেকে হল। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে জম্মু-কাশ্মীরকে দেশের মূল স্রোতে শামিল করার সিদ্ধান্ত একটা ভাল পদক্ষেপ বলেই মনে করি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy