Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Article 370

ঠিক-ভুলের কাটাছেঁড়া ছাপিয়ে ছাত্র-যুবর অন্তরে কাশ্মীর

রদ হয়েছে সংবিধানের ৩৭০ ধারা। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, জম্মু-কাশ্মীরে নতুন যুগের সূচনা হল। বিরুদ্ধ মত, অগণতান্ত্রিক ভাবে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাশ্মীর ঢেউ পৌঁছেছে জেলায়। পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। মেদিনীপুরের তিন জেলায় খোঁজ নিল আনন্দবাজারনতুন আইনে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে তৈরি হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ— এই দু’টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এই নিয়েই উত্তাল দেশের রাজনীতি।

সমব্যথী: সোমবার ইদের দিন দিল্লিতে কাশ্মীরের ছাত্র-ছাত্রদের জমায়েতে। পিটিআই।

সমব্যথী: সোমবার ইদের দিন দিল্লিতে কাশ্মীরের ছাত্র-ছাত্রদের জমায়েতে। পিটিআই।

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রদ হয়েছে সংবিধানের ৩৭০ ধারা। একই সঙ্গে লুপ্ত হয়েছে এই ধারার অন্তর্গত ৩৫-এ ধারা। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল। তার ফলে প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে জম্মু কাশ্মীরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না। আইন করতে হলে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের মতামত নিতে হত।

নতুন আইনে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে তৈরি হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ— এই দু’টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এই নিয়েই উত্তাল দেশের রাজনীতি। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের পারদ চড়ছে। ভূস্বর্গের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভও হচ্ছে। কাশ্মীর পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে সারা দেশের যুব সমাজকে। ব্যতিক্রম নয় এ রাজ্যের জেলাও।

কাশ্মীর নিয়ে অবস্থানের ক্ষেত্রে যুব সমাজ দ্বিধাবিভক্ত। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের অনেক পড়ুয়াই মুক্তকণ্ঠে মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাচ্ছেন। কেউ আবার এর তীব্র বিরোধিতা করে বলছেন, কাশ্মীরকে নতুন করে অশান্ত করে তোলা হল। শিলদা চন্দ্রশেখর মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর মতে, ৩৭০ ধারা বিলোপের ফলে ভূস্বর্গের পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে। শিলদা কলেজেরই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সাগরিকা হালদারের আশা, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যখন এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা কাশ্মীরের জনগণের কথাই ভেবেই নিয়েছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজ কলেজের ছাত্রী মধুমিতা প্রামাণিকের দাবি, ‘‘জম্বু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এক দেশ এক নীতি চালু হওয়ায় আমরা খুশি।’’ সারদাময়ী শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র শুভজিৎ দাস বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ভাল না কি খারাপ, সেটা সময় বলবে। আপাতদৃষ্টিতে দেশবাসীর অনেক দিনের চাওয়া পূরণ হয়েছে বলেই আমার মনে হয়।’’ ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বন্দনা পাল জানান, এই পদক্ষেপে যদি কাশ্মীরের ভাল হয়, তাহলে স্বাগত। তবে শেষ পর্যন্ত ফলাফল কী হবে, সেটা ভবিষ্যৎই বলবে। মেদিনীপুর কলেজের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রের কথায়, ‘‘স্বাধীনতার ৭০ বছর পরে দেশের অখণ্ড অংশ হল কাশ্মীর। এই সাহসী পদক্ষেপকে সকলের স্বাগত জানানো উচিত। এতে জন্মু-কাশ্মীর-সহ পুরো দেশের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘দেশের জনতা এই পদক্ষেপকে দৃঢ়তার সঙ্গে সমর্থন করছেন।’’

তবে তিন জেলার অনেক পড়ুয়ার মতে, ৩৭০ ধারা প্রয়োগের পদ্ধতি অসাংবিধানিক। এই সংক্রান্ত বিলটি পেশ এবং পাশের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। গোপীবল্লভপুরের সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৃণ্ময় বেরার কথায়, ‘‘কেন্দ্র যে ভাবে গায়ের জোরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করল সেটা কোনও ভাবেই গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নয়।’’ ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী পূজা করের আশঙ্কা, এর ফলে কাশ্মীরকে নতুন করে অশান্ত করে তোলা হল। কাশ্মীরে কেবল, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়াকে গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক বলেও মনে করছেন পূজা। রামপুর বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুপ্রিয় নায়কেরও আশঙ্কা, এরপরে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বাড়তে পারে। হলদিয়া সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তরের ছাত্র তপোধন প্রধানের মতে, সংবিধানের বিশেষ ধারা প্রত্যাহারের আগে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল। মহিষাদল রাজ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র প্রশান্ত বেরার মতে, এ ভাবে কোনও রাজ্যের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা যায় না।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এম ফিলের ছাত্র অর্ক চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কাশ্মীরের ঐতিহ্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কোনও স্বাধীন ভূখণ্ডকে আমরা এক দেশের নামে দখল করতে পারি না। ইতিহাস জানলে মেনে নিতে হবে ভারতের বর্তমান সরকার কথার খেলাপ করেছে। আমরা ইতিহাস পাল্টানোর জন্য ছুটছি।’’ মাতকাতপুর ডিএলএড কলেজের ছাত্র নিসর্গনির্যাস মাহাতোর কটাক্ষ, ‘‘পাকিস্তান যেমন ভুয়ো ‘আজাদ’ টনিকে কাশ্মীরের গলা টিপে ধরে রেখেছে, ভারতও সেই পথেই হাঁটছে।’’ তাঁর মতে, আগে কাশ্মীর ছিল স্বায়ত্তশাসিত করদ অঞ্চল। স্বাধীন ভূখণ্ড। পাকিস্তানি আগ্রাসন এড়াতেই ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এই জনপদ। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সেটাই ভুলিয়ে দিতে চাইছে। ভারতবর্ষ মানে আগ্রাসন নয়, এই দেশের ইতিহাস তো শান্তি ও স্বাধীনতার কথা বলে। তবে এই সিদ্ধান্তের পরে সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছে বলেও মনে করছেন তিনি।

মেদিনীপুর কমার্স কলেজের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রের কথায়, ‘‘কাশ্মীরের মানুষের আস্থা অর্জন করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনাটা সব থেকে বেশি দরকার। সেখানকার মানুষ যাতে নিজেদের বিছিন্ন মনে না করেন এই বিশ্বাসটা জাগিয়ে তোলা দরকার।’’

(তথ্য: কিংশুক গুপ্ত, বরুণ দে ও কেশব মান্না)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy