Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Editorial news

‘বলছিলুম কি, সাল পয়লার দিনে এট্টুখানি কাঁচা আমের চাটনি হবে তো?’

চড়কের মেলা, ভেঁপু বাশি, টিনের ঢোল আর গুড়ের জিলিপি। অন্তত ছ’দশক আগে থেকে শহর কলকাতার বাসিন্দাদের মনে পয়লা বৈশাখের যে ছবি আঁকা হয়েছে তা এমনই এক আনন্দ উৎসবের ।

কার্টুন: দেবাশীষ দেব।

কার্টুন: দেবাশীষ দেব।

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০৯:০৩
Share: Save:

ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখ মানে নতুন জামাকাপড়। বাড়ির বড়দের হাত ধরে দোকানে দোকানে গিয়ে হালখাতা। মিষ্টির বাক্স, ঠান্ডা শরবত আর সরু করে গুটিয়ে মোড়া নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার। পয়লা বৈশাখ মানে মা লক্ষ্মী আর সিদ্ধিদাতা গণেশ।

চড়কের মেলা, ভেঁপু বাশি, টিনের ঢোল আর গুড়ের জিলিপি। অন্তত ছ’দশক আগে থেকে শহর কলকাতার বাসিন্দাদের মনে পয়লা বৈশাখের যে ছবি আঁকা হয়েছে তা এমনই এক আনন্দ উৎসবের। পরে, জ্ঞানবুদ্ধি সামান্য পাকবার পর নানান বইপত্র পড়ে আমার মতো অনেকেই জানতে পেরেছে আসলে শুরু থেকেই পয়লা বৈশাখ দিনটি সমাজের নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষের কাছে আদতে কোনও আনন্দের দিন ছিল না। আর এটিকে শুভ বা পবিত্র একটি দিন হিসেবে কোনও ধর্মগ্রন্থ বা পঞ্জিকায় উল্লেখ করা হয়েছে বলেও আমার জানা নেই।

সম্রাট আকবরের সময় থেকেই এই দিনটিতে বাংলার নবাবকে, তাঁর অধীনে থাকা জমিদারেরা পুরনো বছরের সমস্ত খাজনা শোধ করে দিতেন এবং নতুন খাতা চালু করতেন। এর পোশাকি নাম ছিল পুণ্যাহ অর্থাৎ রাজকর আদায়ের উৎসব। ফলে জমিদাররাও এই দিন তাঁদের অধীনে থাকা কৃষক প্রজা ও দোকানদারদের ওপর চাপ দিতেন, যাতে তাঁরা পুরনো বছরের সমস্ত খাজনা মিটিয়ে ‘হাল (ফারসি অর্থ নতুন) খাতা’ শুরু করতে পারেন। যে সমস্ত প্রজা জমিদারের কাছারিতে পুরনো খাজনা মিটিয়ে নতুন বছরের বন্দোবস্ত গ্রহণ করতেন, তাঁদের মিষ্টিমুখ করিয়ে হাতে পান ধরিয়ে দিতেন জমিদারের নায়েবরা। আর যাঁরা পারতেন না, তাঁদের জমি, পুকুর, পারিবারিক গহনা ইত্যাদি জমিদারের কাছে বন্ধক রেখে সেই অর্থে খাজনা মেটাতে হত। বন্ধকি কাগজে বেশির ভাগ সময়ই নিরক্ষর প্রজাকে দিয়ে অসত্য কথা লিখিয়ে, তার নীচে টিপছাপ দিইয়ে নেওয়া হত। ফলে অনেকেই সুদের বোঝা শোধ করতে না পেরে জলের দামে তা জমিদারের কাছেই বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতেন। তাই জমিদারশ্রেণির কাছে এই দিনটি আনন্দের হলেও, গরিব প্রজাদের কাছে এটি ছিল দুঃখ এবং আতঙ্কে ভরা একটি দিন।

সাধারণ মানুষের চোখের সামনে যাতে জমিদারের চরিত্রের এই কুরুচিকর বিষয়টি চট করে প্রকাশ না পায়, সে জন্য পয়লা বৈশাখের কর আদায়ের করুণ উৎসবটির গায়ে খানিকটা কৃত্রিম রং চড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই কারণেই শুরু করা হয়েছিল বৈশাখী মেলা, যাত্রা, গানবাজনা এবং খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। সবাই দেখত, এই উৎসবের খরচ মহৎপ্রাণ জমিদারবাবুই বহন করছেন। কিন্তু আদতে এর প্রতিটি পাইপয়সাই ছিল প্রজাদের কাছ থেকে উশুল করা। পরে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটলে পুণ্যাহ প্রথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রয়ে গিয়েছিল পয়লা বৈশাখকে ঘিরে বাঙালির হালখাতা, মিষ্টিমুখ আর মেলা-গানবাজনা-যাত্রাপালার সুকুমার ঐতিহ্যটুকু।

আরও পড়ুন: নতুন বছরে জাগুক নতুন উপলব্ধি

এ বারের পয়লা বৈশাখ অন্যান্য বারের থেকে যে অনেকটাই আলাদা সেটা নিশ্চয়ই আজ আর কোনও বাঙালিকেই নতুন করে বুঝিয়ে দিতে হবে না। নোভেল করোনাভাইরাসের দাপটে সারা পৃথিবী যখন ভয়ে-আতঙ্কে কুঁকড়ে গিয়েছে, তখন এই বিপর্যস্ত সময়ে পয়লা বৈশাখ এল। দোকানপাট বন্ধ। গাড়িঘোড়া স্তব্ধ। ট্রেন চলছে না, প্লেন উড়ছে না, জাহাজ ভিড়ছে না বন্দরে বন্দরে। মানুষে মানুষে কথা বলা বন্ধ, হাত-মেলানো বন্ধ। এমনকি দু’জন মানুষের মধ্যে কতটা দূরত্ব রাখতে হবে আপৎকালীন সময়ে, সকলের ভালর জন্যে রাষ্ট্র সেটাও স্থির করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: অনলাইনে পয়লা বৈশাখ বাঙালি চালু করলেই পারে!

শিক্ষিত উপার্জনশীল চাকুরে মানুষরা ঘরে থেকে আপিসের কাজ করছেন। চাল-ডাল-শাক-সব্জি ফুরোলে তাঁরা চট করে নাকে মুখে কাপড় বেঁধে এবং হাতে রবারের গ্লাভস পরে, কাছেপিঠের দোকান-বাজারে গিয়ে রসদ জোগাড় করে আনতে পারছেন। কিন্তু দিন আনি-দিন খাই মানুষেরা এতটা অসুবিধেয় বোধহয় বহুকাল পড়েননি। যাঁদের খেটে খাওয়ার শক্তি আছে, কাজের অভাবে তাঁরাও পেটে কিল মেরে পড়ে আছেন নিজেদের অসহ্য আস্তানায়। আর চালচুলোহীন ভবঘুরে মানুষগুলোর কথা তো কহতব্য নয়। রাস্তাঘাটের বিভিন্ন ভাতের হোটেল, খাবারের দোকান, যেগুলো এখন নাগাড়ে বন্ধ হয়ে আছে, তাদের বেঁচে যাওয়া বাড়তি খাবার দিনের শেষে খেয়ে যাঁরা বেঁচে থাকতেন, তাঁরা আজ সেটুকুও পাচ্ছেন না। খবরের কাগজে তাঁদের মুখের ছবি দেখলে বাড়ির খাবার গলা দিয়ে আর যেন নামতেই চাইছে না। কিন্তু মানুষ এমনই একটি জাতি, যারা ঘোর দুঃসময়েও, জীবনের অন্ধকার নাটমন্দিরের এখানে ওখানে টুকটাক আশার প্রদীপ জ্বালানোর ক্ষমতা রাখে।

সেই আলোর রেশ ধরেই তাই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন পাড়ায় কিছু ছেলেছোকরা এলাকার কিছু উৎসাহী মানুষের সাহায্য নিয়ে, স্থানীয় কিছু নিরন্ন মানুষকে আজ দিন দশেক ধরে দুপুরবেলায় পংক্তিভোজন করিয়ে চলেছে। এমনও কানে এসেছে, কয়েকটি পাড়ার কিছু মার্কামারা নিষ্কর্মা ছেলেছোকরার দল, যাদের পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে কাপ হাতে সিগারেট ফুঁকতে, ক্যারম পেটাতে বা খুব জোর পুজোর সময় বিলবই হাতে বাড়ি বাড়ি চাঁদা তোলা ছাড়া আর কোনও কাজ করতে দেখা যায়নি, আজ তারাই নাকি নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দুঃখী মানুষগুলোর মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্যে। আসলে খারাপ সময় যে মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভাল গুণগুলোকে খুঁচিয়ে টেনে বাইরে বের করে আনে— এটা বোধহয় তারই একটা ঝকঝকে উদাহরণ।

বেশির ভাগ জায়গায় এক জন রাঁধুনি জোগাড় করে নিয়ে তারা নিজেরাই জোগাড় ও পরিবেশনের কাজ করছে। খাবার বেড়ে দিচ্ছে শালপাতার থালায় আর জল দিচ্ছে কাগজের গ্লাসে। এদের মেনু খুব সিম্পল। রত্না চালের ভাত আর পাতলা মসুর ডাল। সঙ্গে আলু-কুমড়োর একটা মিষ্টিমিষ্টি তরকারি। ভবানীপুরের দিকে দু’একটি পাড়ায় অবশ্য কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে আলু-পালংশাকের তরকারি হয়েছে বলেও খবর পেয়েছি। যাঁরা খাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ-কেউ খুব সন্দিগ্ধ ভাবে এই প্রশ্নও করছেন যে, আগামিকালও এখানে একই ভাবে খাওয়া জুটবে তো! তাঁদের এরা আশ্বাস দিয়ে জানাচ্ছে, যত দিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তত দিন ওরা এই ভাবেই পংক্তিভোজন করিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চলবে। এই ভরসা দেওয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।

এত চিন্তা, এত অনিশ্চয়তা এবং এতটাই ভয় আমাদের ঘিরে রয়েছে যে তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা ঠিক করে শ্বাস নিতে পারছি না, হাসতে পারছি না, মনখুলে কথাও বলতে পারছি না পরিবারের মানুষজনের সঙ্গে।

তবু পয়লা বৈশাখ এসে গিয়েছে। নতুন বছর শুরু হচ্ছে। পুরনো রোগ-বালাই, হাহাকার, দুশ্চিন্তা সব নতুন বছর পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে মুছে যাবে এই আশায় বুক বেঁধে এর মধ্যে থেকেও আপনাদের একটি ভালবাসার ঘটনা শোনাতে চাই। আমি কিন্তু কারও নাম উল্লেখ করছি না, তাই এটা বিশ্বাস করা বা না-করাটা আপনাদের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার।

টালিগঞ্জ ট্রামডিপোর কাছাকাছি একটি পাড়া, যেখানে রাস্তাটা সোজা ঢুকে বেশ কিছুটা গিয়ে, সামনে বুকচিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাড়ির সামনে এসে শেষ হয়ে গিয়েছে— সেই রাস্তাতেই অনেক বছর ধরে একটি দুর্গাপুজো হয়। হয় বসন্ত উৎসব, বৈশাখী সম্মেলন এবং বর্ষামঙ্গলের অনুষ্ঠান। বাইরে থেকে পাশাপাশি বাড়িগুলো আলাদা হলেও সামাজিক এই অনুষ্ঠানগুলোয় তাদের অন্তর মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ফলে এ-বাড়ির মেয়ে বিয়ে করে ও-বাড়ির ছেলেকে। আর বাই চান্স যদি অন্য কোথাও বিয়েও হয় তবে এই সময়গুলোয় তারা জোড়ায় জোড়ায় পাড়াতে থাকবারই চেষ্টা করে। সেই পাড়ারই কয়েকটি ছেলেমেয়ে কলকাতায় লকডাউন শুরু হওয়ার দিন তিনেকের মাথায় তাদের মোবাইলে বানানো নিজস্ব সোশাল মিডিয়া গ্রুপের মাধ্যমে আলোচনা করে ঠিক করে যে ওরা প্রতি দিন দুপুরবেলা কিছু গরিব মানুষকে ভাত খাওয়াবে।

সেই মতো এক দিন পাড়ার ক্লাবঘরে একটি মিটিংও ডাকা হয় এবং সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ছ’জন প্রত্যেকে নিজেদের নাকে মোটা কাপড়ের মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস পরে এসেছিল। পরস্পরের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসেওছিল। পাড়ার এক ক্যাটারার কোম্পানির মালিক রান্নাবান্নার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। আর তিনি যে ফ্ল্যাটবাড়িটিতে থাকেন, তার পিছনের দিকের একটা ফাঁকা গ্যারাজে রান্নাবান্নার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন।

চৈত্র সংক্রান্তির দিন তিনেক আগে পাড়ার এক বয়স্ক ব্যারিস্টার, যিনি দুর্গাপুজো কমিটির গত ন’বছরের প্রেসিডেন্ট এবং ‘ব্যারিস্টারজেঠু’ নামেই বেশি পরিচিত, পাড়ার সেই সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে জানিয়েছিলেন, পয়লা বৈশাখের দিন উনি পংক্তিভোজনের সমস্ত অতিথিকে নিজের খরচে একপিস করে পাকাপোনার কালিয়া আর একটি করে ভাল মিষ্টি খাওয়াতে চান। বছরের প্রথম দিন, অতিথিদের এইটুকু খাতির না করলে কি চলে! শুনে পাড়ার ক্লাবের সেক্রেটারি আর সেই ক্যাটারারের মালিকের তো প্রায় বিষম খাওয়ার জোগাড়। খেতে আসা মানুষের হিসেব যা দাঁড়িয়েছে তাতে প্রথম দিন সত্তর জন থেকে শুরু করে দ্বিতীয় দিন একশো বারো জন এবং তৃতীয় দিন থেকে অ্যাভারেজ দুশো কুড়ি থেকে আড়াইশোর মধ্যে দাঁড়াচ্ছে। এমনিতেই এখন বাজারে মাছের বেশ আকাল। একসঙ্গে এতগুলো মাছ কিনে কাটিয়ে নিয়ে এসে ভেজেকষে কালিয়া রান্না করা একটা বাড়তি সময়ের ব্যাপার।

প্রতি দিন মোটামুটি সাড়ে বারোটার মধ্যেই পংক্তিভোজন শুরু হচ্ছে। আর শেষ হচ্ছে প্রায় দুটোয়। এটা যদি বা সামলানো গেল, মিষ্টি পাওয়া যাবে কোত্থেকে! এই লকডাউনের বাজারে সমস্ত মিষ্টির দোকান তো বন্ধ। খোঁজ করে জানা গেল, একমাত্র ভুজিয়াওয়ালা কোম্পানির শোনপাপড়ির বাক্স পাওয়া যেতে পারে, যার একটা হাফকেজির বাক্সে মোটামুটি চব্বিশ পিস শোনপাপড়ি ঠাসাঠাসি সাজানো থাকে। সেই বাক্স তা হলে কম করে গোটা বারো কিনতে হবে! সব খোঁজ নিয়ে

ব্যারিস্টারজেঠুকে রাতে মেসেজ করা হল। ঠিক দেড় মিনিটের মাথায় উত্তর এল, ‘মাছের পিস যেন ছোট না হয়! আর শোনপাপড়িগুলোর সাইজ খুব পুঁচকে হয় তো, তাই মাথাপিছু দু’পিস করেই ধরে রেখো।’ বোঝো ঠ্যালা! তা হলে বারোর জায়গায় কিনতে হবে মোট চব্বিশটা বাক্স।

ঠিক হ্যায়! লড়ে যাওয়া যাবে!! চেনা মাছওয়ালার সঙ্গে কথা বলে, সব ফিটিং করে ক্যাটারার ভদ্রলোক ফুল রেডি। এ বারে চৈত্র সংক্রান্তির দিন দুপুরবেলা সবাই যখন খেয়ে উঠছে, তখন বেঁটেখাটো চেহারার লুঙ্গি আর ছেঁড়া গেঞ্জি পরা এক জন কুঁজো মতো বয়স্ক মানুষ এঁটো হাতেই এগিয়ে চললেন ব্যারিস্টারজেঠুর দিকে। পাড়ার দু’-এক জন হাঁ হাঁ করে এগিয়ে আসছিল, জেঠু তাদের হাত তুলে থামিয়ে দিলেন। পাকা গমের মতো গায়ের রং। মাথার চুল শনের মতো ধবধবে সাদা। চোখে গোল ফ্রেমের সোনালি চশমা। ব্যারিস্টারজেঠু একটা ধবধবে সাদা ধুতি আর ফিকে সবুজরঙা ফতুয়া পরে, মুখে একটি হলুদ মাস্ক আটকে খাওয়াদাওয়ার জায়গা থেকে সামান্য দূরে, পাড়ার একমাত্র জারুল গাছটির গায়ে হাত রেখে দাঁড়িয়েছিলেন। কী ভাগ্যি, জারুলগাছ থেকে করোনা ছড়ায় না। যাই হোক, লোকটি বেশ কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে দু’হাতের কব্জি কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন। তার পর বললেন, ‘‘বড়বাবু, একটা নিবেদন ছিল আপনার কাছে!’’ ‘‘নিবেদন!’’ ‘‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’’ ‘‘তা বলে ফেলুন।’’

ব্যারিস্টারজেঠু ভেবেছিলেন মানুষটা নিশ্চয়ই কিছু সাহায্য করার কথা বলবেন। কিন্তু তিনি বাঁ হাতে নিজের কানের ওপরটা একটু চুলকে নিয়ে বললেন, ‘‘বলছিলুম কি, আগামিকাল সাল পয়লার দিনে এট্টুখানি কাঁচা আমের চাটনি হবে তো? আহা, কতকাল যে চাটনি খাইনি!’’ বলেই লজ্জায় মুখটা মাটির দিকে চট করে নামিয়ে নিলেন। ব্যারিস্টারজেঠু লোকটির মুখের দিকে কিছু ক্ষণ চেয়ে রইলেন স্থির হয়ে। তার পর বাষ্প-ভরা চোখ তুলে দেখলেন, সেই ক্যাটারার ছেলেটা খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ভাতের ডেকচি নিয়ে আসার তদারকি করছে। খুব ঘাবড়ে যেতে পারে ভেবে উনি তাকে আর মোবাইলে মেসেজ করলেন না। চোখাচোখি হতেই হাতের ইশারায় নিজের কাছে ডেকে নিলেন।

কার্টুন: দেবাশীষ দেব।

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali New Year Poila Baisakh Special
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy