Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Civil War

খেলনা নগর

বিস্ফোরণের মাত্রা বেরুটবাসীর স্মৃতিতে ফিরাইয়া আনিয়াছে ১৯৭৫ হইতে চলা পনেরো বৎসরের ভয়াল গৃহযুদ্ধ, তৎপরবর্তী কালে ধর্মীয় মৌলবাদীদের উত্থানের।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

বেরুট শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু লেবানন দেশটিকে বহু অতীত স্মরণ করাইয়া দিল: গৃহযুদ্ধ, গোষ্ঠী হিংসা, বৈদেশিক হস্তক্ষেপ এবং সন্ত্রাসবাদী হামলা। এই বারের বিস্ফোরণের কারণটি অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছয় বৎসর পূর্বে একটি মালবাহী জাহাজ হইতে বাজেয়াপ্ত করা ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামঘরে সঞ্চিত ছিল, তাহা হইতেই বিস্ফোরণ। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, অবহেলাই ইহার কারণ, ইহার পশ্চাতে কোনও সন্ত্রাসবাদী ছক নাই। ‌তৎসত্ত্বেও বিস্ফোরণের মাত্রা বেরুটবাসীর স্মৃতিতে ফিরাইয়া আনিয়াছে ১৯৭৫ হইতে চলা পনেরো বৎসরের ভয়াল গৃহযুদ্ধ, তৎপরবর্তী কালে ধর্মীয় মৌলবাদীদের উত্থান, ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক দুর্দশা ও দেশজোড়া দুর্নীতি। ঘটনার পরে বিপুল জনরোষ শাসক শ্রেণিকেও বিগত বৎসরের নাগরিক প্রতিবাদের চিত্র স্মরণ করাইয়া দিয়াছে। পরিস্থিতি সামাল দিবার অপারগতা বুঝিয়াই সম্ভবত পদত্যাগ করিয়াছে লেবানন সরকারের সম্পূর্ণ মন্ত্রিসভা।

ইতিপূর্বেই লেবানন বহু সঙ্কটে জর্জরিত ছিল। অর্থনীতি ক্রমাগত পতনশীল, সরকার পাল্টাইয়াও অত্যাবশ্যক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি রোধ করা যায় নাই। তদুপরি দুর্নীতি ও প্রাথমিক পরিষেবা দিবার অক্ষমতায় রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের আস্থাভঙ্গ হইয়াছে। এ ক্ষণে বিস্ফোরণ আড়াই লক্ষ নাগরিককে ঘরছাড়া করিয়াছে, হাসপাতালে স্থানাভাব। বিপুল বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে উদ্ধারকার্য ব্যাহত হইতেছে। বেরুটবাসী জানাইতেছেন, বহির্বিশ্ব যে বিধ্বস্ত নগরীর চিত্র দেখিতেছে, তাহা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বাস্তবিক নাগরিক যন্ত্রণার তুলনা নাই। কিয়ৎকালের ভিতরে লেবাননে খাদ্য সঙ্কট তৈয়ার হইতে পারে বলিয়াও আশঙ্কা। এবং ইহার ফলে যে জনরোষের সৃষ্টি হইয়াছে তাহা লইয়া ভীতি সঞ্চারের কারণ আছে। বিগত বৎসর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি-র পদত্যাগ এবং নূতন সরকারের স্থাপনা সমাধানের পথ খুলিয়াছিল। এই বারও সরকার পদত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু রাজনৈতিক সঙ্কট প্রশমিত হইবার চিহ্নমাত্র নাই।

চিন্তা বাড়াইয়াছে আন্তর্জাতিক মহল। দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা ক্রমশ লেবাননের স্বাভাবিক চরিত্র হইয়া দাঁড়াইয়াছে। অতিমারির কালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্কট আরও পশ্চাতের সারিতে চলিয়া গিয়াছে। এবং তাহার সুযোগ লইয়াছে নানা দেশ। ইরানের সহিত অতি-ঘনিষ্ঠতার ‘অপরাধ’-এ বেইরুটকে অর্থনৈতিক ভাবে সহায়তা করিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে আরব দেশগুলি। ঋণদানের শর্ত হিসাবে লেবাননের রাজনীতি ও অর্থব্যবস্থায় বদল আনিবার দাবি করিয়া থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের একাধিক দেশ। বিস্ফোরণের পর লেবানন অবশ্য কিছু সহায়তা পাইয়াছে। পশ্চিম এশিয়ার আরব দেশগুলি চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য প্রেরণ করিতেছে, বেইরুট পৌঁছাইয়াছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। কিন্তু এই সংহতি সংক্ষিপ্ত সময়ের। কিয়ৎকাল পরে ইহা বজায় না থাকিবার আশঙ্কাই প্রবল, যেখানে ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দুর্ঘটনাকে ‘আক্রমণ’ বলিয়া জানাইয়া দিয়াছেন। দ্রুত রাজনৈতিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা বিনা লেবানন সুস্থিত হওয়া অসম্ভব। জনসাধারণকেও ক্রমাগত সেই মূল্য চুকাইয়া যাইতে হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Civil War Beirut Lebanon Blast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy