লালবাতি সংস্কৃতির সামনে লালবাতি জ্বালিয়ে দিল ভারত সরকার। বিভিন্ন স্তরের নেতা এবং সরকারি কর্তারা গাড়ির উপর বনবন করে লালবাতি ঘোরাতেই অভ্যস্ত এ দেশে। লালবাতি ঘুরিয়ে তাঁরা বুঝিয়ে দেন, গুরুত্বে তাঁরা সাধারণের অনেক উপরে। তাই লালবাতি সংস্কৃতির আর এক নাম ভিআইপি সংস্কৃতিও বটে। কিন্তু চলতি মাসটা কেটে গেলেই সে সংস্কৃতি অতীত। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা— সব ভারতীয়ই ভিআইপি, কেউ আলাদা নন। অতএব, বিদায় লালবাতি।
বেশ কিছু পশ্চিমী দেশে রাষ্ট্রনায়করা নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে মিলেমিশে সারতে অভ্যস্ত। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাষ্ট্রপ্রধান সাধারণ নাগরিকের মতোই সারিবদ্ধ বা প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে চড়ে বাড়ি থেকে দফতরের পথে— এ দৃশ্য বিরল নয় অনেক দেশেই। কিন্তু ভারতে প্রায় কল্পনাই করা যেত না এই দৃশ্য এত দিন, যেন বহু দূরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কোনও। আপৎকালীন যানবাহন ছাড়া বাকি প্রায় সব যানবাহনের মাথা থেকে বেকন বাতি নিঃশেষে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়ে সেই যুগে দাঁড়ি টেনে দেওয়ার লক্ষ্যে পদক্ষেপ করল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যথার্থ অবস্থানই নিয়েছেন— সব ভারতীয়ই ভিআইপি, বার্তা তাঁর। জনপ্রতিনিধি জনসাধারণের ভোটেই নির্বাচিত, অতএব গুরুত্বপূর্ণ আসলে জনসাধারণ। পদস্থ সরকারি কর্তা আসলে জনসেবক, কারণ সাধারণ করদাতার অর্থেই তিনি প্রতিপালিত। এ হেন চিন্তার ভিত্তিতেই যখন বেকন বাতি ব্যবহারে দাঁড়ি টানার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের, তখন বিরোধিতা করার অবকাশ খুঁজে পাচ্ছে না প্রায় কোনও শিবিরই।
লালবাতি সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা দেশে এই প্রথম নয় অবশ্য। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, দেশের অন্যান্য প্রান্তেও নানা সময়ে বেকন বাতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। সে সব উদ্যোগ কোনও কোনও ক্ষেত্রে সাফল্যের মুখ দেখেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থও হয়েছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সরকার আর সেই দোলাচলের পথ খোলা রাখল না। গোটা দেশে অভিন্ন বন্দোবস্তের প্রচলন ঘটিয়ে বেকন-মুক্তির লক্ষ্যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করল।
প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতেই হচ্ছে। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের রূপায়ণে প্রত্যেক নাগরিক সক্রিয় হয়ে উঠবেন, এমন আশাও করা যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy