প্রতীকী ছবি
পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে বিশ্ব জুড়ে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহারে জোর দেওয়া শুরু হয়েছে অনেক দিন। তবে আন্তর্জাতিক অপ্রচলিত শক্তিভাণ্ডার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার সদস্যদের একাংশের দাবি, গোটা বিশ্ব জুড়ে আবহাওয়া পরিবর্তনে প্রভাবিত হতে পারে অপ্রচলিত শক্তির উৎপাদনও। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, জলবিদ্যুতের কথা। প্রথম দিকে এই শক্তি বিপুল সম্ভাবনাময় বলে মনে হলেও, বিশ্বজুড়ে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, উষ্ণতার খামখেয়ালিপনা এবং ভূমিক্ষয় বাড়ার সঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এই শক্তির উৎপাদনেও। ২০১৮-তে দীর্ঘকালীন খরার কারণে শুকিয়ে যেতে বসেছিল আফ্রিকা মহাদেশের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। এতে ওই জলপ্রপাতকে কেন্দ্র করে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভাবিত হয়েছিল।
সে দিকে তাকিয়েই গবেষকেরা দাবি করছেন, আগামী দিনে কোনও একটি শক্তি সম্পদের উপরে বেশি নির্ভরশীল না হয়ে সবগুলির সমব্যবহার স্থিতিশীল উন্নয়নে সহায়ক হবে। সেই প্রেক্ষিতে বাড়ছে ভূগর্ভস্থ তাপশক্তির গুরুত্ব। গবেষকদের দাবি, পরিকল্পনামতো এগোলে বিশ্বে তৃতীয় অপ্রচলিত শক্তি হিসেবে এটি উঠে আসবে। যদিও ভূগর্ভস্থ শক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে এই শক্তিকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। তবে এখনও অনেক পথ পেরনো বাকি।
ভূগর্ভস্থ শক্তিকে দু’ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রথমত, ভূগর্ভে জলাধার তৈরি করে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যা ‘স্টিম মেথড’ নামে পরিচিত। অন্যটি লাভা বা ম্যাগমার তাপ থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদন। তবে এই শক্তিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকাঠামো গড়ে তোলা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়ত, এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্বন ডাইঅক্সাইডের উৎপাদন কমলেও সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ভয় রয়েছে। পাশাপাশি, ভূগর্ভের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকলে লাভা ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে বড় দুর্যোগ ঘটাতে পারে।
তবে গবেষকদের একটি অংশের দাবি, প্রাথমিক বাধা কাটাতে পারলে প্রতিবন্ধকতাগুলিকে অতিক্রম করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকাঠামো তৈরি খরচ ও সময়সাপেক্ষ, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু এক বার পরিকাঠামো তৈরি হলে ধীরে ধীরে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। উৎপাদন বাড়লে সস্তা হবে বিদ্যুৎও।
সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যান বলছে, ভূগর্ভস্থ শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরে বিরাট খরচ না করেই পরবর্তী সময়ে ফিলিপিন্স, আইসল্যান্ডের মতো দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে এই শক্তিসম্পদকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ফিলিপিন্সের বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় কুড়ি-পঁচিশ শতাংশ ভূগর্ভস্থ শক্তি থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। আইসল্যান্ডের ক্ষেত্রে অন্য কোনও শক্তিশম্পদ না থাকায় ভূগর্ভস্থ শক্তি থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতই সব চাহিদা মেটাচ্ছে। আর ২০১০ সালে এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গোটা বিশ্বে যেখানে ১০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল, ২০১৮-তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৩ গিগাওয়াটে। বর্তমানে আমেরিকা ভূগর্ভস্থ শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে।
এ দিকে, দুর্ঘটনা ও দূষণ প্রসঙ্গে যে আশঙ্কার কথা উঠে আসছে, তাকেও খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ গবেষকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো গ্যাসকে বাতাসে মেশার আগেই বন্দি করা সম্ভব। এ ছাড়া, এ ধরনের ‘পাওয়ার প্ল্যান্ট’গুলি যেহেতু লোকালয়ের বাইরে করা হয়, তাই ক্ষতির আশঙ্কা অনেক কম।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভূগর্ভস্থ শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে উন্নয়নশীল দেশগুলি ক্রমশ ঝুঁকছে। ফিলিপিন্স, আইসল্যান্ডের পাশাপাশি, পেরুর মতো দেশেও এই শক্তিকে কাজে লাগাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রেও হিমালয়ের মতো এলাকায় এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে লাভজনক হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আন্দামান-নিকোবরের মতো এলাকাতেও আগ্নেয়গিরির অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ভূগর্ভস্থ শক্তিভাণ্ডার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। তার জন্য প্রশাসনিক স্তরে সমীক্ষা ও পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের মতো দেশে দূষণ প্রতিরোধে আগামী দিনে এই শক্তি চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে, আশা গবেষকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy