Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Baba Ramdev

গভীর অসুখ

অসুখটি আসলে অবিজ্ঞানের স্পর্ধা। বিশ্ব জুড়িয়া কোভিডের প্রতিষেধক লইয়া গবেষণা চলিতেছে, অদ্যাবধি অবিসংবাদিত সাফল্য মিলে নাই, তাহার মধ্যে এই ভাবে কোভিড সারাইবার সদম্ভ দাবি কি বিশ্বাসযোগ্য?

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২০ ০০:৩৪
Share: Save:

রামদেব জানাইলেন, ‘করোনা কিট’ এখন হইতে ‘করোনিল কিট’ হইল। নূতন ঔষধ ‘করোনিল’ ও ‘শ্বাসারি’ কোভিড নিরাময় করিবে না, তবে রোগ মোকাবিলায় ব্যবহার করা যাইতে পারে। কয়েক দিন আগে অবশ্য তিনিই বলিয়াছিলেন, তাঁহাদের ‘করোনা কিট’-এর ঔষধ ২৮০ জন কোভিড-আক্রান্ত মানুষকে সুস্থ করিয়াছে। শুনিয়া আনন্দের শোরগোল পড়িয়াছিল। তাহার পরেই কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক বলিল, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ঔষধের গবেষণা বা প্রচারের পূর্বে আয়ুষ মন্ত্রকের অনুমোদন লওয়া বাধ্যতামূলক, রামদেবের সংস্থা তাহা করে নাই বলিয়া অনুমান। উত্তরাখণ্ড সরকারের অভিযোগ, লাইসেন্সের অনুমতি লইবার সময় বলো হয় নাই যে কোভিড-১৯’এর ঔষধ বাজারে আসিতেছে, লাইসেন্স মিলিয়াছে জ্বর-কাশির প্রতিরোধ ক্ষমতাবর্ধক ওষুধেরই। মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান ঔষধের বিক্রয় আটকাইয়াছে, বিহারের আদালতে উক্ত ঔষধের করোনা সারাইবার দাবি লইয়া মামলা হইয়াছে। অতঃপর রামদেবের সংস্থার বিবৃতি দিয়া বিতর্ক নিরসনের চেষ্টা।

কেন্দ্র ও উত্তরাখণ্ড সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়, কিন্তু তাহার পরেও সমগ্র ঘটনাটি কি অন্য এক অসুখ সূচিত করে না? অসুখটি আসলে অবিজ্ঞানের স্পর্ধা। বিশ্ব জুড়িয়া কোভিডের প্রতিষেধক লইয়া গবেষণা চলিতেছে, অদ্যাবধি অবিসংবাদিত সাফল্য মিলে নাই, তাহার মধ্যে এই ভাবে কোভিড সারাইবার সদম্ভ দাবি কি বিশ্বাসযোগ্য? সংশয়ের বিস্তর কারণ যে নূতন ঔষধের লাইসেন্স জোগাড়-সহ পুরা প্রক্রিয়াটিতেই সরকার-নির্দিষ্ট পদ্ধতি মানা হয় নাই, ‘করোনিল’ ও ‘শ্বাসারি’-কে করোনার ঔষধ বলা হইয়াছে। সাধারণ মানুষ এই ঔষধ কিনিতে ঝাঁপাইলে, করোনা-আবহে রোগ নিরাময়ের নামে জনস্বাস্থ্যের দুর্যোগ ঘটিতেই পারিত। ভারতে আয়ুর্বেদিক ঔষধের বাজার বিরাট, অর্থমূল্য আগামী চার বৎসরে ভারতীয় মুদ্রায় ৭১০ বিলিয়ন ছুঁইবে। কিন্তু এই বাজারে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক সামগ্রীর শুল্কের উপর সরকারি ছাড়-সহ ব্যবসায়িক গন্ডগোল রহিয়াছে। ঔষধ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন’ও যথেষ্ট তৎপর নহে, নূতন ঔষধ-অভিযানের গোড়ায় তাহারা সতর্ক করে নাই। ভারতীয় ঔষধবিজ্ঞানের তত্ত্বে অ্যালোপ্যাথি হোমিয়োপ্যাথি আয়ুর্বেদ-সহ সমস্ত চিকিৎসা ও ঔষধের এক্তিয়ার সুনির্দিষ্ট, অথচ কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে ঔষধের কোনওটি ‘ট্যাবলেট’, কোনওটি ‘বটি’ বা ‘তৈল’। নিজ গণ্ডি ছাড়াইয়া অন্য ক্ষেত্রে প্রবেশ করিলে বিধিমতে তাহা কিন্তু অপরাধ বলিয়া গণ্য।

ইহা কোনও একক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নহে। অবৈজ্ঞানিকতা রোধ করিতে দেশে একটি সার্বিক বিজ্ঞানমনস্কতার আবহ প্রয়োজন। সেই আবহ আজিকার ভারতে অতি দুর্বল। অন্যে পরে কা কথা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদরা প্রায়ই অবৈজ্ঞানিক মন্তব্য করিয়া খবরের শিরোনাম হইতেছেন। যে আয়ুষ মন্ত্রক এখন বেগতিক দেখিয়া তৎপর হইয়াছে, তাহাও সম্প্রতি করোনা-প্রতিরোধের ঔষধের কথা প্রচার করিয়া যথেষ্ট বিভ্রান্তি ছড়াইয়াছিল। অত্যুৎসাহী বিজেপি সমর্থকরা গোমূত্র লইয়া যে সকল দাবি করিয়া আসিতেছেন, তাহা আটকাইবার প্রয়াসও দেখা যায় না। দৃশ্যতই বর্তমান সরকারের একটি অবিজ্ঞান-প্রীতি রহিয়াছে। আর তাহারই ছায়ায় বাড়িয়া উঠিতেছে সমাজের গভীর, গভীর অসুখ।

অন্য বিষয়গুলি:

Baba Ramdev Coronavirus Coronil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy