Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Joe Biden

‘পিরিতি’কথা

দর্শন-কেরামতি বা ‘অপটিকস’ বাদ দিয়াও সুপারপাওয়ারের সহিত কূটনীতির অনেকগুলি স্তর থাকে।

—ছবি সংগৃহীত

—ছবি সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২১ ০১:২২
Share: Save:

আমেরিকার নূতন প্রেসিডেন্ট আজ কার্যভার লইবার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য দেশও ব্যস্ত হইয়া পড়িবে তাহাদের আমেরিকা-নীতির নব-সূত্রায়ন লইয়া। এই নব-সূত্রায়ন বা রি-অ্যালাইনমেন্ট-কারী দেশের তালিকায় ভারতও থাকিবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ নীতিতে ভারতের আমেরিকা-দর্শনকে বাঁধিয়াছিলেন, তাহার সংশোধন ও সম্মার্জন করিতে হইবে। ইতিপূর্বে ওয়াশিংটন ডিসির প্রেসিডেন্টের সহিত নয়াদিল্লির প্রধানমন্ত্রীর মিত্রতা বা ঘনিষ্ঠতা হয় নাই, এমন নহে। কিন্তু কোনও বারই সেই মিত্রতা অস্তিত্ববাদী প্রশ্ন হইয়া দাঁড়ায় নাই। নিজের অস্তিত্বের স্বীকৃতি বাড়াইতে অন্য জনের উপর নির্ভরশীলতার প্রয়োজন হয় নাই। কিন্তু ‘হাউডি মোদী’ ও ‘নমস্তে ট্রাম্প’ উভয় কার্যক্রমের মধ্যেই এক প্রকারের অস্তিত্ববাদী বাধ্যতা নজর করা সম্ভব। তুলনায় অপটিকস-উদাসীন, নিস্পৃহ-দর্শন, অভিজ্ঞ বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-এর সহিত কেমন হইবে মোদীর সম্পর্ক? সহজে আলিঙ্গন ঘটিবে কি? ভবিষ্যৎই বলিবে।

দর্শন-কেরামতি বা ‘অপটিকস’ বাদ দিয়াও সুপারপাওয়ারের সহিত কূটনীতির অনেকগুলি স্তর থাকে। সেই ব্যবহারিক স্তরে অনেক নূতন সমঝোতা এবং, সম্ভবত সংশোধন, জরুরি হইতে চলিয়াছে দিল্লির জন্য। ইতিহাস বলে, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের নিকট ভারতের গুরুত্ব আপেক্ষিক ভাবে কম। তবে, বারাক ওবামাই প্রমাণ— সেই ইতিহাস-ধারায় কিঞ্চিৎ বাঁক আসিয়াছে। আফগানিস্তান যুদ্ধ-উত্তর আমেরিকার পক্ষে ভারতের গুরুত্ব এখন কোনও প্রেসিডেন্ট বা কোনও আমেরিকান প্রশাসনের নিকটই কম নহে। চিনের বিশ্ববীক্ষাও নিশ্চয় আমেরিকার ভারত-দর্শনে কিছু সদর্থক প্রভাব রাখিবে। সুতরাং, কূটনীতির স্তরে প্রধান অভিমুখগুলি প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনের সহিত ভেলকির মতো পাল্টাইবে না। তবে ট্রাম্পীয় কূটনীতির বিশিষ্ট বিচিত্র ধারা অনুসরণ করিয়া যেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদী অনুরূপ পথে হাঁটিতে আকৃষ্ট হইয়াছিলেন, সেইখানে কিছু পরিবর্তন আসিতে পারে।

যেমন, আরসিইপি (রিজিয়োনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ) হইতে ভারতের আকস্মিক বহির্গমন লইয়া ভারতীয় নীতির সংশোধন ঘটিলে মঙ্গল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মোদী সরকারের এই আকস্মিক নেতিবাচক কাজটির পিছনে প্রধান হেতু, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপর্যুপরি ‘আইসোলেশনিস্ট’ বা আত্ম-বিচ্ছিন্নতাবাদী কূটনৈতিক পদক্ষেপ। ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ হইতে এ ভাবেই বাহির হইয়াছিলেন ট্রাম্প, ২০১৭ সালে। অথচ পাশাপাশি, চিন একের পর এক বাণিজ্য-চুক্তি লইয়া আগাইয়া যাইতেছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী চিনের দিকে না তাকাইয়া আমেরিকার পথে চলিলেন— সম্পদ, প্রভাব, লক্ষ্য এবং সক্ষমতা সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া সত্ত্বেও। এশিয়ায় চিনের প্রভাবের তুলনায় ভারতের প্রভাব অনেকাংশে কম। তদুপরি এই আইসোলেশনিজ়ম বাণিজ্য-মৈত্রীকে আরওই ব্যাহত করিতেছে। চিনের সহিতও ঠিক আমেরিকার মত ও পথ মানিয়া টক্কর দিতে ভারত আঁটিয়া উঠিবে না। আমেরিকার স্নেহদৃষ্টি পাইতে হইলেও ভারতকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঢুকিতে হইবে। নূতন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমেরিকার সামনে দিল্লির এখন কঠিন পরীক্ষা। বড়র পিরিতি কেবল বালির বাঁধ নহে, দুর্গম অভিসারও বটে।

অন্য বিষয়গুলি:

India US President Joe Biden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy