Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Arvind Kejriwal

একক

কেজরীবালের বিরোধীরাও স্বীকার করিবেন যে গত পাঁচ বৎসরে নিরন্তর কতকগুলি মৌলিক বিষয়ে দিল্লি প্রশাসন ‘কাজ’ করিয়া গিয়াছে। বাধাবিপত্তি কম ছিল না, তবু পরিস্থিতির উন্নতি হইয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:১৮
Share: Save:

এখন সমগ্র দেশের মনোযোগ যে নেতার দিকে— তাঁহার নাম অরবিন্দ কেজরীবাল। স্বাভাবিক। দিল্লির নির্বাচন দেশের অন্যান্য বিধানসভা নির্বাচন হইতেই অনেকখানি পৃথক। তদুপরি, গত কয়েক মাসের ঘটনাবলি বুঝাইয়া দিয়াছে যে দিল্লির শাসক দলের এই শীর্ষনেতা দেশের জাতীয় রাজনীতির পরিসরে অন্যান্য বিরোধী দল হইতে অনেকটা দূর দিয়া চলিতেছেন। কেজরীবালের রাজনীতির সহিত কেহ একমত হউন কিংবা না হউন, সকলেই মানিবেন যে, বিজেপি-বিরোধী হিসাবে তিনি বিতর্কোর্ধ্ব, কিন্তু কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস কিংবা বাম দলগুলির সহিত তাঁহার প্রত্যক্ষযোগ্য দূরত্ব। ইহাও এত দিনে পরিষ্কার যে, এই অবস্থান ঘটনাচক্র কিংবা আনতাবড়ি নহে, বরং রীতিমতো সুচিন্তিত ও সতর্ক। বিশেষত গত বৎসরের জাতীয় নির্বাচনের পর নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় দফায় যখন দেশ জুড়িয়া একের পর এক বিস্ফোরক ঘটনা ঘটিতেছে, তখন কোন বিষয়ে, কখন, কী ভাবে ও কতখানি বিরোধিতা অরবিন্দ কেজরীবাল করিতেছেন, তাহার মধ্যে একটি অতি সূক্ষ্ম হিসাব প্রবহমান। কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপ বা সিএএ প্রবর্তন, কোনওটিতেই কেজরীবালকে আগাইয়া আসিয়া বিরোধিতায় নিমজ্জিত হইতে দেখা যায় নাই, আবার তিনি বিজেপির লেজ-রূপেও নিজেকে প্রতিভাত হইতে দেন নাই। শাহিন বাগের অবস্থানরতদের তিনি ভর্ৎসনা করিয়াছেন রাস্তা জুড়িয়া বসিবার জন্য, কিন্তু আবার বিরোধিতার হেতুটিকে মান্যও করিয়াছেন। স্পষ্টতই, তাঁহার হিসাবটি রাজনীতির, বলা ভাল, ভোটের রাজনীতির। আদর্শ কিংবা নীতির স্থান তাহাতে সামান্য: নিছক ব্যবহারিক অর্থেই রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষিতেছেন কেজরীবাল। ফলত, তাঁহাকে উদ্বাহু প্রশংসা করিবার যেমন কোনও প্রয়োজন নাই, তেমনই তাঁহাকে অবহেলা করিয়া সরাইয়া রাখাও কঠিন। কে না জানে, রাজনীতির মধ্যে আদর্শ যুক্ত হইলে তাহা মহৎ বা বৃহৎ হয়, কিন্তু শেষ বিচারে রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্পই। আদর্শ বা নৈতিকতার শিল্প নহে।

ইহাই একমাত্র কথা নহে। কেজরীবালের বিরোধীরাও স্বীকার করিবেন যে গত পাঁচ বৎসরে নিরন্তর কতকগুলি মৌলিক বিষয়ে দিল্লি প্রশাসন ‘কাজ’ করিয়া গিয়াছে। বাধাবিপত্তি কম ছিল না, তবু পরিস্থিতির উন্নতি হইয়াছে। বিদ্যুৎ জোগান, জল সরবরাহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ফিরানো এবং স্বাস্থ্য পরি‌ষেবা প্রদান— এই কয়েকটি কাজে আপ প্রশাসন উন্নতির যে রেখচিত্র তৈরি করিয়াছে, তাহার তুলনা মেলা দুরূহ। গোটা দেশ যখন সত্তা-পরিচিতি ও স্বার্থ-গোষ্ঠীর রাজনীতির পুরাতন পথগুলি নূতন উদ্যমে পরিক্রমায় ব্যস্ত, কেজরীবালের নেতৃত্বে দিল্লিতে তখন নাগরিক জীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলিতে ধারাবাহিক প্রশাসনিক সক্রিয়তা। ইহা শুধু প্রশংসার্হ নহে, অনুকরণ ও অনুসরণের যোগ্য।

উপরের দুই দিক মিলালে বাহির হইয়া আসে আরও একটি বড় কৌশল। এক দিকে ক্রমাগত রামমন্দির কিংবা মুসলিম অনুপ্রবেশের মতো কট্টর দক্ষিণা জাতীয়তাবাদ ও অন্য দিকে ক্রমাগত তাহার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ-ক্রমে সত্তা-রাজনীতি ও বাম-রাজনীতির ছক। এই দুইটিকেই ছাপাইয়া কেজরীবাল প্রমাণ করিলেন যে, এই দুই-এর অমোঘ চক্রে না ঘুরিলেও চলে। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ যে ভাবে জাতীয় রাজনীতির আজেন্ডা তৈরি করিতেছেন, দেশও সমানে সেই আজেন্ডাকে কেন্দ্র করিয়া সবেগে ও সশব্দে ঘুরিতেছে— সেই কক্ষাবর্তে গ্রস্ত না হইলেও চলে। এই সন্তর্পণ রাজনীতির একমাত্র উপায়, কেন্দ্রটিকেই অস্বীকার করা, মোদী-শাহের আজেন্ডার পাশ কাটাইয়া চলা, নিজের কার্যক্রমে অবিচল ও স্থিত থাকা। কেজরীবাল তাহাই করিয়াছেন। আজিকার উদ্‌ভ্রান্ত রাজনীতির যুগে কেজরীবালের একটি কুর্নিশ প্রাপ্য এই সাহসী পন্থা বাছিবার জন্য। আট তারিখ ভোটের ফল যাহাই হউক।

অন্য বিষয়গুলি:

Arvind Kejriwal Kashmir Article 370 CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy