ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নিতান্ত ভুল কোনও তত্ত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানী হোল্ফগাং পউলি বলিতেন, ‘‘উহা ভ্রান্তও নহে।’’ অর্থাৎ, বিজ্ঞানের মাপকাঠিতে ভুল প্রমাণিত হওয়ার জন্যও যতখানি পথ হাঁটিতে হয়, প্রাসঙ্গিক তত্ত্বটি সেই স্তরেও পৌঁছাইতে পারে নাই। ওয়াশিংটনে রিপাবলিকান পার্টির এক নৈশভোজসভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য শুনিয়া পউলির কথা মনে পড়িতে পারে।
ট্রাম্প দাবি করিয়াছেন, হাওয়াকলের ঘূর্ণনের শব্দে ক্যানসার রোগ হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘তথ্য’টি কোন উৎস হইতে সংগ্রহ করিলেন, তাহা বলেন নাই। শারীরবিদ্যা বিজ্ঞানের গূঢ় একটি শাখা। গবেষণার অপরাপর বিভাগের মতো ইহাতেও পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা ইত্যাদির গুরুত্ব অপরিসীম। উহাদের সহিত মনগড়া দাবির যে কোনও সম্পর্ক নাই, তাহা অত্যুক্তিমাত্র। ট্রাম্পের দাবিটিকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা যাইত। তাহা করা যাইতেছে না এই কারণে যে, অনেকের ধারণা কেউকেটা ব্যক্তিরা মিথ্যা বলেন না। ট্রাম্পের তুল্য মন্ত্রীসান্ত্রির এই দেশেও অভাব নাই। এখানেও এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা বিদ্যমান, যাঁহারা ভারত ভূখণ্ডের অতীত গৌরব সম্পর্কে আশ্চর্য বাণী প্রচার করিয়া থাকেন।
গণেশের গজাননের দিকে নির্দেশ করিয়া প্রচার করেন যে, প্রাচীন ভারতে প্লাস্টিক সার্জারি চালু ছিল। অথবা, গান্ধারী যে একশত পুত্র ও এক কন্যার জননী ছিলেন, এবম্বিধ কাহিনি নাকি এই দেশে অতীতে স্টেম সেল চিকিৎসাপদ্ধতিতে পারদর্শিতার প্রমাণ!
রাষ্ট্রনেতাগণের উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত দাবিগুলির সামনে সাধারণ মানুষের কর্তব্য কী? বিজ্ঞানী নিলস বোর এই গোত্রের দাবি শুনিলে তির্যক হাসিয়া বলিতেন, ‘‘অতি আকর্ষক।’’ ট্রাম্পদেরও সেই উত্তর দেওয়া যায়। অন্যথায় দাবিসমূহের পিছনে অভিসন্ধি অন্বেষণ করা যাইতে পারে। ট্রাম্প যে কট্টরপন্থী, তাহা কাহারও অবিদিত নাই। তিনি বায়ুর ন্যায় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিরোধী এবং কয়লা পুড়াইয়া শক্তি উৎপাদনের সমর্থক। কয়লা পুড়াইবার ফলে বাতাসে যে বিষাক্ত গ্যাস মিশে, পরিবেশবাদীদের ওই সমালোচনা তিনি গ্রাহ্য করেন না। তবে, শুধু উক্ত কারণেই তিনি হাওয়াকলের শব্দের সহিত ক্যানসারের যোগাযোগ আবিষ্কার করেন, এমনটা ভাবা ভুল। অনুমান করা চলে, তাঁহার ওই আবিষ্কারের অন্য কারণও আছে। ধনকুবের ট্রাম্প স্কটল্যান্ডে এক গল্ফ রিসর্টের মালিক। ওই রিসর্টের নিকটবর্তী বায়ুকলগুলি গল্ফ-প্রেমীদের বিরক্তির কারণ। ট্রাম্প চান হাওয়াকলগুলি বন্ধ করা হউক। এই ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সহিত তাঁহার বিবাদ চলিতেছে। হয়তো ইহার সহিত হাওয়াকল সম্পর্কে ট্রাম্পের মনোভাবের যোগ আছে। হিন্দুত্ববাদীদের ‘বিজ্ঞানচেতনা’ও হয়তো রাজনীতি-সঞ্জাত।
নেতা-মন্ত্রীরা হঠাৎই বিজ্ঞানমনস্ক হইয়া উঠিবেন, ব্যক্তি অথবা দলীয় স্বার্থ ভুলিয়া সমাজের স্বার্থকেই ধ্রুবতারা মান্য করিবেন, একবিংশ শতক তেমন আশা করিতে ভরসা দেয় না। ফলে, সাধারণ মানুষের একটিই কর্তব্য— সচেতন থাকা। নেতারা যাহাই বলিবেন, তাহা যাচাই করিয়া দেখা। কোন নেতা বিশ্বাসযোগ্য আর কে নহেন, তাহা বুঝিতে শেখা। তাঁহাদের অর্ধসত্য বা ডাহা মিথ্যাগুলি ধরিয়া ফেলিলে নেতাদের মুখের উপর বলিয়া দেওয়া যে কথাগুলি ভ্রান্তও নহে। আজিকার সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কাজটি সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সচেতন বিশ্ব-নাগরিকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy