Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ভক্তিযোগ

বীণ সম্মানিত অধ্যাপকদের বিশ্ববিদ্যালয় এত্তেলা পাঠাইতেছে: প্রমাণ দাখিল করুন, কেন আপনাকে সম্মানিত রাখা হইবে।

বিক্ষোভ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ছবি: এপি।

বিক্ষোভ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ছবি: এপি।

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

পাটিগণিতের নিয়মেই ভারতে বিজেপি শাসনের দ্বিতীয় পর্বের শত রজনী অতিক্রান্ত। কিন্তু একশোর মহিমা অপার। ক্রিকেটের মাঠে নিরানব্বইয়ে আউট হইলে ব্যাটসম্যান মুহ্যমান হইয়া পড়েন, পরীক্ষায় একশোর মধ্যে নিরানব্বই পাইলে পরীক্ষার্থীর অভিভাবকের শোকের সীমা থাকে না। অতএব ক্যালেন্ডারের স্বাভাবিক গতিতে সেঞ্চুরি সারিয়া সরকার আহ্লাদিত— ইহাতে বিস্ময়ের কোনও কারণ নাই, বরং ইহা প্রত্যাশিতই ছিল। বিশেষত সরকার ও শাসক দলের প্রচারযন্ত্রটি বর্তমান জমানায় অভূতপূর্ব রকমের তৎপর, আত্মবিপণনের কোনও সুযোগ প্রচারকরা ছাড়েন না, এমন মাহেন্দ্রক্ষণ তাঁহারা ছাড়িবেনই বা কেন? সুতরাং আশ্বিনের শারদপ্রাতে পৌঁছাইবার পূর্বেই দিকে দিকে কলরব উঠিল: মোদী সরকার একশো দিন পূর্ণ করিয়াছে! ভক্তরা পরস্পর বলিলেন: আইস ভাই, আনন্দ করি। যমুনার তীরে বুঝি বা গান ভাসিল: আজু কী আনন্দ!

নিন্দকে বেসুর গাহিবেন: এই ভারতভূমিতে আনন্দ কোথায়? অর্থনীতির হাঁটু ভাঙিতে ভাঙিতে মাটি ছুঁইবার জোগাড়, বাজারে চাহিদা নাই, শিল্পবাণিজ্যে বিনিয়োগ নাই, কলকারখানায় উৎপাদন নাই, ঘরে ঘরে কর্মীরা বেকার হইতেছেন। মাস ঘুরিয়া গেল, কাশ্মীর কার্যত গৃহবন্দি, মানুষ কতটা কষ্টে আছেন, বাকি দেশের তাহা জানিবার জো নাই, এবং দেশের প্রধান বিচারপতি সেই রাজ্যের নাগরিককে বলিতেছেন, ঠান্ডায় ঘোরাঘুরির কী বা প্রয়োজন? অসমে লক্ষ লক্ষ মানুষ দুশ্চিন্তায় বিনিদ্র রজনী যাপন করিতেছেন, তাঁহারা জানিয়াছেন তাঁহাদের কোনও দেশ নাই। প্রবীণ সম্মানিত অধ্যাপকদের বিশ্ববিদ্যালয় এত্তেলা পাঠাইতেছে: প্রমাণ দাখিল করুন, কেন আপনাকে সম্মানিত রাখা হইবে। সরকারের নীতি বা কাজ লইয়া প্রশ্ন তুলিলে প্রতিধ্বনি ফিরিতেছে: সিডিশন, সিডিশন! ভয়ের শীতল বাতাস ক্রমে শীতলতর হইতেছে, তাহার স্পর্শে প্রতিবাদী কণ্ঠের স্বর নামিতেছে। আজু কী আনন্দ? ভক্তজনে জবাব দিবেন: আলবাত! সংসদে রেকর্ডসংখ্যক বিল পাশ হইয়াছে, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের জন্য দীর্ঘ জাতীয়তাবাদী প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়াছে, অনুপ্রবেশকারীদের ঘাড় ধরিয়া বাহির করিয়া দিবার দেশব্রত অসমে শুরু হইয়াছে, অন্যত্র মহান বিতাড়নযজ্ঞের বেদি প্রস্তুত হইতেছে। অযোধ্যা ত্রেতাযুগের পদধ্বনি শুনিতেছে। ইহার পরেও মানিবেন না যে, দেশে স্বর্ণযুগ আসিয়াছে? অর্থনীতি? তাহা তো বিশ্ব বাজারে মন্দার প্রতিক্রিয়া, ভারত সরকার কী করিবে? আর, দেশের অর্থমন্ত্রী দুই বেলা বলিতেছেন, তিনি উদ্বিগ্ন নহেন, তাহার পরেও আবার উদ্বেগ কিসের? সর্বোপরি, অর্থনীতির সমস্যা থাকিলে মোদীজি নিশ্চয়ই কিছু সুরাহা করিবেন। প্রকৃত ভক্তের ভরসা স্বভাবত দুর্মর।

এবং, মানিতেই হইবে, দেশের আমজনতার একটি বেশ বড় অংশ এই ভরসার শরিক। মানিতেই হইবে, সরকার তথা শাসক দল সম্পর্কে যাঁহাদের নানা অভিযোগ আছে, তাঁহাদের সামর্থ্য বা সদিচ্ছা লইয়া সংশয় আছে, এমনকি অর্থনীতির সঙ্কটে যাঁহারা নিজেরও বিপন্ন তাঁহারাও অনেকেই, সেই নোট বাতিলের মার-খাওয়া ভক্তদের মতোই, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে পরম আস্থাশীল। মানিতেই হইবে, একশো দিনে কেন, প্রথম ইনিংসের পাঁচ বছরেও বিশেষ কিছু করিতে না পারিয়াও, এবং অর্থনীতি, গণতন্ত্র, উপমহাদেশের রাজনীতি, বৃহত্তর কূটনীতি, সব ক্ষেত্রে নানাবিধ গোল পাকাইবার পরেও প্রধানমন্ত্রী কেবল আপন ভাবমূর্তি অক্ষত রাখেন নাই, প্রথম দফার শেষের দিকে সেই প্রতিমায় যে টোল পড়িয়াছিল তাহা দিব্য সারাইয়া ফেলিয়াছেন। আশির দশকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন নাম কিনিয়াছিলেন: টেফলন প্রেসিডেন্ট। কোনও কলঙ্কই তাঁহাকে স্পর্শ করিত না। নরেন্দ্র মোদী কি ভারতের প্রথম টেফলন প্রধানমন্ত্রী?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy