জহরলাল নেহরুর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মগ্ন মহাত্মা গাঁধী
একবিংশ শতকের ‘স্বচ্ছ’ ভারতের নাগরিক আমি। বড় হয়েছি ১৯৪৮-উত্তর ভারতে, রক্তমাংসের গাঁধীকে স্বচক্ষে ও স্বকর্ণে শোনার অভিজ্ঞতা আমার নেই। বইতেই তাঁর কথা পড়েছি, জাতির জনক বলে এক ছকসিদ্ধ ছবিও দেখেছি, ফটোগ্রাফার কানু গাঁধীর নামই শুনিনি তখনও। ছেলেবেলায় সুভাষভক্ত বাঙালিবাবুদের মুখে জেনেছি অনন্য সেই নেতার প্রতি গাঁধীর নিষ্করুণ ব্যবহারের কথা। একটু বড় হয়ে পড়েছি মোহিতলালের মতো বিদগ্ধ বাঙালির চিঠিতে দেশভাগের আসন্ন প্রেক্ষিতে গাঁধীর অহৈতুকী মুসলমান তোষণনীতির প্রতি তীব্র অনুযোগ। ১৯৭০ –এর দশকে বই পোড়ানো ও মূর্তিভাঙা দিয়ে জমাটি শহুরে বিপ্লবের আদিক্ষণেই তো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গান্ধীভবনের পাঠাগারের বইগুলি পোড়ানো হয়েছিল। চিনের মহান সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অনুপ্রেরণার কথা হলে সেই বহ্নুত্সবের কাণ্ড নিয়ে ‘দেশব্রতী’র পাতায় সরোজ দত্ত তথা শশাঙ্কের জ্বালাময়ী প্রবন্ধের উৎসাহী পাঠক তো ছিল ঠিক আমার মতো অনেক ছাত্রই। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার সময়ে চারপাশের পৃথিবীতে গাঁধীজি বলে ব্যক্তির মাহাত্ম্যকে ছোঁয়ার মতো পরিসর খুঁজে পাইনি, এই কথা কবুল করতেই হবে। বরং মনোভাবটি ছিল অনীহার ও বিতৃষ্ণার। এই সত্তরোর্ধ্ব বয়সে আমার ভাবা মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর সঙ্গে কোনও সিদ্ধপুরুষ বা মহাত্মার মিল নেই। আমার গাঁধী কেবল মোহনদাস, নিকেলের ডাঁটিতে লাগানো পরকলা দিয়ে তৈরি সস্তার চশমা পড়া বুড়ো একটা মানুষ। এই রকম চশমা পড়া বুড়ো আজও দেখতে পাওয়া যায়। যেমন যাদবপুরের রাস্তায় বসা নখ কাটিয়ে নাপিতটা বা পাড়ার মোড়ে ভেলপুরী বিক্রির ফেরিওয়ালা। আর কত দিন তাদের দেখতে পাব, সেটা একটা প্রশ্ন।
নিকেলের চশমা পরা মোহনদাস বলে বুড়োটার স্বপ্ন দেখার অভ্যাস ছিল। সেই স্বপ্নকথা সংলাপের আকারে লেখা একটি স্বরচিত পুস্তিকাতে পাওয়া যায়, নাম ‘হিন্দ স্বরাজ’ বা ‘ইন্ডিয়ান হোম রুল ১৯১০’, ভারতে কর্মকাণ্ড শুরু করার আগে মোহনদাসের ভাবনার উপস্থাপনা। মোহনদাসের ভাবিত স্বরাজে ভারতে ইংরেজ শাসনের রাজনৈতিক অবসান চরম লক্ষ্য নয়। বরং জোর দেওয়া হয়েছিল আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার খপ্পর থেকে একক মানুষের স্ব-অধীন হওয়ার ঈপ্সার উপর। সমৃদ্ধ ভারী শিল্প, কেন্দ্রাভিমুখী জবরদস্ত রাষ্ট্র আর অনিবার্য প্রগতির পক্ষে প্রকৃতি জয়ে দর্পী বিদ্বজ্জনের সওয়াল ও কাজকে সর্বগ্রাসী ক্ষমতাতন্ত্রের এক একটি স্তম্ভ বলেই মোহনদাস চিহ্নিত করেছিলেন। বাছাবাছির সুযোগ নেই, একটা মানলেই অন্যটাকে স্বীকার করতে হবে। আধুনিকতার আধিপত্যবাদের সব রূপকে সার্বিক ভাবে প্রত্যাবর্তন করলেই একক মানুষ মুক্ত হতে পারে ব্যক্তির স্ব-ধর্মে, স্বজ্ঞা ও প্রজ্ঞায়, সেটাই তাঁর স্বরাজ, নিজেকে নিজের সঙ্গে কবে অন্যদের কাছে মেলে ধরার ইচ্ছা ধনতান্ত্রিক সভ্যতার সার্বিক প্রত্যাখ্যানকে সর্বজনীন করতে গেলে চাই সম মানুষের মনোভাবে প্রাণিত সমাজ, বিকেন্দ্রিত পল্লি জীবন, নানা মানুষের কর্মসহযোগে ঋদ্ধ জীবনচর্চা। সেই পথের নিশানা আছে সত্যাগ্রহ ও অহিংসা। অহিংসা নির্বীর্যের কাপুরুষতার কৈফিয়ত নয়, উদারনৈতিক গণতন্ত্রের ঢালাও সার্টিফিকেট নয়। জুলুমবাজ অন্যদের দাবিয়ে রাখে। দেবে থাকা অন্যদেরও মাথা চাগাড় দেবার সুযোগ আছে, হিংসা প্রতিহিংসায় ফেটে পড়তেই পারে। একে অন্যের শঙ্কায় সবসময় ধস্ত ও বিচলিত, আত্ম অন্দরে বিকশিত হয় না, আত্মশক্তি কখনও সর্বজনীন সংঘশক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার পথ পায় না। তাই স্বরাজের পথ অহিংসার পথ, অকুতোভয় সত্যাগ্রহীর দৈনন্দিন ক্রিয়াকাণ্ডে স্থান ও কালবিশেষে সেই পথের দিশা পাওয়া যায়। রাসকিন ও তলস্তয়ের সমাজতত্ত্ব, খ্রিস্টীয় জীবনতত্ত্ব আর জৈন, বৌদ্ধ ও বৈষ্ণব নীতিতত্ত্বের মিশ্রণে ‘হিন্দ স্বরাজ’-এর তাত্ত্বিক বুনিয়াদ পোক্ত ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহের অভিজ্ঞতা তত্ত্বে বাস্তবের ফোড়ন দেয়।
আরও পড়ুন: মহাত্মাহীনতা
তবু তত্ত্বটা মোহনদাসের একান্ত। আর কোনও কেষ্টবিষ্টু সেই তত্ত্বে বড় এক সায় দেয়নি, রাজনীতির বাইরে মোহনদাস নিজের মতো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই যেতেন। গুরু গোপালকৃষ্ণ গোখলে পুরো ভাবনাকে অবাস্তব ভেবেছিলেন আর সব চেয়ে প্রিয় শিষ্য জওহরলাল কোনও দিন তত্ত্বটিতে অনুপ্রাণিত হননি। মোহনদাসের নানা ধরনের রাজনৈতিক সঙ্গীদের কাছে ইংরেজ তাড়িয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রাপ্তিই যেন স্বরাজের সব ইষ্ট পূর্তি হয়ে দাঁড়াল। শুরু হল ব্যর্থতার খতিয়ান। দেশভাগের বিনিময়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এল, মোহনদাসের চরম আপত্তির বিরুদ্ধে সে দিন শিষ্য ও সহকর্মীরা। অহিংসার পথে উঠে এল দেশব্যাপী প্রতিহিংসা। দায় বর্তাল গাঁধীর পরে। ব্যর্থতার দায় যেন স্বীকার করেই মোহনদাস স্বদেশবাসীর গুলিতেই প্রাণ দিলেন। আততায়ী মোহনদাসকে মারা কর্তব্য বলে মনে করেছিল, নিজের কৈফিয়ৎ ন্যায্যও দাখিল করেছিল। আজকের ভারতে অনেকের কাছেই সেটা পাঠতব্য পুঞ্জিকা, নানা অনুবাদও আছে।
নোয়াখালির দাঙ্গাবিধ্বস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন গাঁধী।
তবে ওই সব বড় ব্যর্থতায় মোহনদাস দমে যাওয়ার পাত্র নন। তাঁর হিন্দ স্বরাজের সাধনাটুকু আছে সাধারণের দৈনন্দিন জীবনচর্চায়, সব রকমের আধিপত্যের বিরুদ্ধে আত্মশক্তি প্রবোধনের ঈপ্সায়, আত্মশক্তিকে সংঘশক্তিতে রূপান্তরিত করার প্রাযৌগিক পন্থায়। চরকাকাটা, বুনিয়াদি শিক্ষা, বিকেন্দ্রিক পল্লি সংগঠন, নিজের শারীরিক বর্জ্য নিজে পরিষ্কার করার চেষ্টায়, এমনকি, এলাকায় গোঁড় নেবু গাছ লাগাবার কাজেও আত্মবোধকে সমাজবোধে রূপান্তরিত করার অঙ্কুর ছিল। ওই ধরনের কাজ তো আজ বাতিলের ঝুলিতে। আজকের গোলকায়িত ভোগবাদী ‘ফুল’ খচিত উন্নয়নবাদী জঙ্গি ভারতে গাঁধীর একশো পঞ্চাশ বছরের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন তো মোহনদাসের সব কর্মকাণ্ডের তামাম শোধ। স্ব-রাজের চর্চা ও চর্যা নাকচ হলে তো মোহনদাস যাদুঘরের এক দেখনদারি হয়তো বা ফসিল মাত্র।
আরও পড়ুন:বিপন্ন পরিবেশে গাঁধীকেই মনে পড়ে
বর্তমানের এই চরম প্রান্তিকতাতেই আছে মোহনদাসের জোর। এক মোহনদাস তো ছিল নানা মোহনদাসের মান্য, সময়ক্ষণ বুঝে এক ব্যক্তি অনেকের মধ্যে ভেঙেচুরে ছড়িয়ে থাকতেন। ১৯১৭-র চম্পারণে মোহনদাস সরাসরি নীলচাষিদের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ভারতীয় কৃষকদের জীবন, প্রত্যাশা ও জমায়েত সম্বন্ধে সেটা তাঁর প্রথম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। সারাদিন অভাব অভিযোগ শুনে ও সরকার আর নীলকরদের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার কৌশল ঠাহর করে রাত্তিরবেলা মোহনদাস ঘরে বিশ্রাম নিতেন। বাইরের প্রাঙ্গনে মুজফ্ফরপুর কলেজের ইতিহাসের সাধারণ অধ্যাপক জীবৎরাম ভগবানদাস কৃপালনী রাত্তিরে অবস্থানকারী দর্শনকামী কৃষকদের নীলকরদের শোষণ ও চাষিদের লড়াই নিয়ে গল্প বলে যেতেন। আত্মজীবনীতে মোহনদাস খোলাখুলি লিখেছিলেন যে কৃপালনীর কথকতা শুনে অতি ভীত কৃষকও সাহসে উদ্দীপ্ত হত। মনে করত যে তার বর্তমান তো এক অতীতের উত্তরাধিকার বহন করছে, দায় চুকোবার ভার তার উপর। সত্যাগ্রহী মোহনদাস কথা বলেন যেন কৃপালনীর ভাষায়, গরিবগুর্বো কৃষকরা অকুতভয়ী সত্যাগ্রহী হয়ে ওঠে।
অনুরাগীদের মধ্যে মহাত্মা গাঁধী।
কৃপালনী তো লেখাপড়া জানা মানুষ, তাঁর সংস্থান ও কিছু না কিছু জান-বুঝ আছে। ক্ষণ ও মুহূর্ত বুঝে নিরক্ষর, অপাংক্তেয় ও চরম প্রান্তিক মানুষও মোহনদাসের স্বরাজের পথের সঙ্গী হয়েছিল। মেদিনীপুরের থানা নন্দীগ্রাম, সেই থানার তের পাখ্যা বাজারের মেয়ে সত্যবতী। আজকের পেশার ভাষায় মহিলাটি যৌনকর্মী। লবণ সত্যাগ্রহে মার খাওয়া সত্যাগ্রহীদের শুশ্রুষাকারিণী ছিলেন সত্যবতী। পরে নানা জায়গার সত্যাগ্রহে সত্যবতী অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশ তাঁকে মারত, টাকাশুরা গ্রামে তাঁর জরায়ু পুলিশের লাঠির ঘায়ে চৌচির হয়। সত্যবতী দাস গ্রামে ঘুরে ঘুরে সত্যাগ্রহ করতে থাকেন, ‘শালী’ ছাড়া অন্য নামে পুলিশ তাঁকে ডাকত না।
তাঁর স্বরাজের পথে বইতে এ রকম অনেক নির্ভয়া সত্যাগ্রহীর কথা হিতেশ্বরজ্ঞন সান্যাল লিখেছেন, আজও কোনও উদযাপনী বইতে মোহনদাসের এই ধরনের সঙ্গিনীদের কথা পাইনি, ভবিষ্যতে পারে আশা করি না। আরামবাগের ডোঙ্গল গ্রামের হাবা ছেলে মনসারামের মা বরদাময়ী, হাবুর মা নামেই পরিচিত। বিধবা, কায়ক্লেশে দিন চলে। ১৯৩০ সালে নিজের সংসারে সে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সত্যাগ্রহীদের শাকভাত রেঁধে খাওয়াত, আশ্রয় দিত। তাতেই তাঁর আনন্দ, সেটাই তাঁর অভয়সিদ্ধি। হাবুর মা জেলে গেল, ছাড়াও পেল, পরে রোগে ভুগে মারা গেল।
‘ভয় না পেলে ভয় দেখাব কাকে?’ এটাই তো অভয়ের মূল কথা, ছড়িয়ে দিতে জানতে হয়। ১৯৩০-এ কাঁথির হিজলির পিছাবনী গ্রাম, পুলিশ পিটিয়ে লবণ সত্যাগ্রহীদের দুরস্ত করছে, সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও সাধারণ গ্রামবাসীরা আন্দোলনে সরাসরি যোগ দিতে ভরসা পাচ্ছে না। একদিনের মিছিলে আগের দিনের সব চেয়ে মার খাওয়া সত্যাগ্রহী নেতৃত্ব দিলেন, আর এক বার রেগুলেশন লাঠির ঘা খেলে তাঁর মৃত্যু অনিবার্য ছিল। তাই দেখে পথের ধারে সার দেওয়া দর্শকদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছায় কয়েক জন মহিলা এসে আহত সত্যাগ্রহীদের পাশে দাঁড়ালেন, অন্য গ্রামবাসীরাও মিছিলে অংশ নিল। পুলিশ হতভম্ব। গ্রামবাসীদের সঙ্গে পা মিলিয়ে, নুন জলে দিয়ে মিছিল করে সত্যাগ্রহীরা ফিরে গেল। আজ জানি পরিস্থিতি আলাদা, সময় ভিন্ন। তবু ইংরেজ শাসনে পিছাবনীর লোকেদের অভয় যাত্রা আজকের মোদী-অমিত শাহ শাসিত কাশ্মীরবাসীর কাছে কি কোনও বার্তা পৌঁছে দেয়?
স্বরাজের সাধনায় তো স্বরাজী নিজে শিখতে সব সময় তৈরি থাকে, সেটাই তো এক থেকে বহুতে ছড়িয়ে পড়ার রাস্তা চম্পারনে মোহনদাসের নির্দেশে কস্তুরবা গ্রামের মেয়েদের পরনের কাপড়কে পরিষ্কার করার কথা বলেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন যে তাঁদের পরনে কাপড় একটাই। কখনই বা সেটা কাচবে আর শুকোবে, আর কাপড় ছাড়া তারা কী করে কাজে বেরবেন? ওই মুহূর্তে মোহনদাস সার সত্য বুঝিয়েছিলেন যে দারিদ্র্যই গ্রামজীবনের শত্রু, স্বাবলম্বী হওয়ার প্রথম লড়াই তো তার বিরুদ্ধে।
আলোর পথ চিনতে সাহায্য করেন গাঁধী
স্বরাজের পথের চালচিত্রে দৈনন্দিন তুচ্ছ মুহূর্তগুলিই অভয়সিদ্ধির আলোকে জ্বলে উঠে, সত্য অন্বেষী মোহনদাস নিজে ওই আলোকেই পথ চিনে চলতে চেষ্টা করেন, হোঁচট খান, আবার চলেন। ১৯৪৬-এর দাঙ্গাবিধ্বস্ত নোয়াখালি, মোহনদাসের কাছে নিজের মুখোমুখি হওয়ার, নিজের সাধনপদ্ধতিকে ফিরে বিচার করার এক সাধনপীঠ। মোহনদাসের দৈনন্দিনতার নানা কথা লিখেছেন নির্মল কুমার বসু। একটি কথা মনে পড়ে। শ্রীরামপুর গ্রামে মোহনদাসের ডেরা। রোজ ভোরে তিনি একলা হেঁটে বার হতেন, পথের পাশে পাঠশালায় মাদুর পেতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সুর করে পড়ত। হাঁটতে হাঁটতে সেখানে হাজির হয়ে মোহনদাস পড়া শুনতেন আর আপন মনে হাসতেন। তাঁকে দেখে পড়া বন্ধ হলেই মোহনদাস বলতেন ‘পড়ো পড়ো’। এই তো আমার মোহনদাস। দৈনন্দিন চর্চা যেন কোনও মতেই না বন্ধ হয়, স্বভাব কর্মে নিষ্ঠ থাকাই তো স্ব-ধর্ম ও স্ব-অধীনতা, অন্যথাই তো পরবশ্যতা ও ভীরুতা।
ব্যর্থতাই চেনায় আত্ম-এর ফ্রন্টিয়ারকে, আবার সেই ফ্রন্টিয়ারকে এগিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও ভাবায়। অপ্রাসঙ্গিক ও প্রান্তিক হয়ে ওঠার ক্ষণগুলিতে নিজের অবলম্বনে নিজের একান্তে কথা খোলাখুলি বলা ও করাই তো অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে যাবার চরম ঈপ্সা। ওই সবাক ও ক্রিয়াময় একাকীত্বই স্ব-রাজের অভিজ্ঞান, নির্ভয়ই বিশ্বাসের সিদ্ধি। এই আকালের দিনে আমাদের দেশে গত বছরেই ওই বিশ্বাস জ্বলে উঠেছিল। কর্পোরেট সংস্থাগুলির হাত থেকে গঙ্গাকে নির্মল রাখার জন্য গুরুদাস অগ্রবাল বা স্বামী জ্ঞানস্বরূপ ১১১ দিন আমরণ অনশন করে প্রাণ দেন। খুব হেলদোল হয়নি, কোনও দল রা কাটেনি, সংসদীয় নির্বাচন আসন্ন ছিল। তবু মুহূর্তটা কেউ কেউ মনে রেখেছে।
আজকের গোলকায়িত বিশ্বে পরিবেশ রক্ষার দায়ে সুইডেনের ষোলো বছরের কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে পার্লামেন্টের সামনে একাকী বসে থাকত। বড়রা বিব্রত, সরকার বিরক্ত। আজ নানা শহরে গ্রেটার দাবি নিয়ে শয়ে শয়ে স্কুলের পড়ুয়া নানা শহরে মিছিল করছে। একা গ্রেটা অনেক গ্রেটা হয়ে।
এই আন্দোলনও হয়তো ক্ষণিকের, বুদবুদের মতো মিলিয়ে যাবে। কিন্তু মুহূর্তগুলি ফিরে আসে আমার ও আপনার, এর ও তার মধ্যে, দেশে-বিদেশে, এখানে ওখানে। তখনই মোহনদাসের আপনভোলা হাসি শুনি, পঢ়ো, লিখো, কাম করো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy