অতিমারি ও লকডাউনের কৃষ্ণ মেঘে রূপালি রেখা ছিল ভারতের গ্রামীণক্ষেত্র। এখনও কৃষিই ভরসা। যাবতীয় পূর্বাভাস যখন বলিতেছে যে, বর্তমান অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার সঙ্কোচন ঘটিবে, সেখানে কৃষিক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ বৃদ্ধি প্রত্যাশিত। বর্ষা আশানুরূপ হওয়ায় কৃষির সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হইয়াছে। এক্ষণে প্রশ্ন, সামগ্রিক অর্থব্যবস্থার ভার বহনের সাধ্য কৃষির আছে কি? ভারতের গ্রামাঞ্চলে এখনও ৬৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় কৃষিক্ষেত্রে, কিন্তু মোট গ্রামীণ উৎপাদনের মাত্র ৩৯ শতাংশ আসে কৃষি হইতে। অর্থাৎ, কৃষিতে কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশ এখনও অনুৎপাদনশীল— এক কালে ভারতীয় অর্থনীতি সংক্রান্ত তাত্ত্বিক আলোচনায় যাহা ডিজ়গাইজ়ড আনএমপ্লয়মেন্ট বা ছদ্ম কর্মসংস্থানের সমস্যা হিসাবে খ্যাত ছিল। কাজেই, কৃষিতে যদি বা আর্থিক বৃদ্ধি হয়ও, চাহিদা রূপে বাজারে পৌঁছাইয়া তাহা অর্থনীতির মরা গাঙে বান বহাইয়া দিবে, তেমন আশা সঙ্গত হইবে না। বস্তুত, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য নির্মাতা সংস্থার বিক্রয়ের পরিসংখ্যানেও ক্রমে স্পষ্ট হইতেছে যে, গ্রামীণ ভারতে চাহিদা থাকিলেও তাহা যথেষ্ট নহে। অন্তত, শহরাঞ্চলের অর্থনীতি যখন ধুঁকিতেছে, তখন আর্থিক মন্দার গহ্বর হইতে অর্থনীতিকে উদ্ধার করিতে হইলে যতখানি চাহিদা প্রয়োজন, গ্রামীণ ভারতে তাহা নাই। তবে, মাঠ ভরিয়া ফসল উঠিবার ফলে গ্রামীণক্ষেত্র হঠাৎ খাদ্যাভাবে পড়িবে না, তাহা সুসংবাদ। তাহার ফলে শহরাঞ্চলের উপরও চাপ অপেক্ষাকৃত ভাবে কম থাকিবে।
কৃষিক্ষেত্রে মাঠ উপচাইয়া ফসল ফলিতেছে, অথচ সেই সমৃদ্ধ সামগ্রিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করিতে পারিবে কি না সন্দেহ— পরিস্থিতিটি অতি দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এই দুর্ভাগ্য প্রাকৃতিক নহে, অনিবার্যও নহে। ইহা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের ফল। যে দলই যখন সরকারে থাকিয়াছে, কৃষিক্ষেত্রকে দেখিয়াছে শুধু ভোটের অঙ্কে। ফলে, কৃষিঋণ মকুব হইয়াছে বারংবার, কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লগ্নি হয় নাই। কৃষির সহিত বৃহত্তর অর্থনীতির সংযোগসূত্রগুলি তেমন ভাবে গড়িয়াই উঠে নাই। এখনও অধিকাংশ কৃষকই বাজারের নাগাল পান না। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ অধিকাংশের ধরাছোঁয়ার বাহিরে। তাহার পাশাপাশি, অর্থনীতির মূল্যশৃঙ্খল বাহিয়া কৃষিপণ্যের উঠিবার উপায়ও তেমন তৈরি হয় নাই। তাহার জন্য কৃষিতে প্রতিযোগিতামূলক বেসরকারি পুঁজি প্রয়োজন ছিল। মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণিকে সরাইয়া কৃষকের সহিত প্রকৃত বিক্রেতার প্রত্যক্ষ স্থাপন করা বিধেয় ছিল। কিছুই হয় নাই। ফলে, কৃষিক্ষেত্রটি বিচ্ছিন্নই থাকিয়া গিয়াছে— সেই মাঠের ফসল লইয়া অর্থব্যবস্থার মহাসড়কে উঠিবার পথ অতি সীমিত।
এখনও শিক্ষাগ্রহণ করা চলে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পই হউক বা সংগঠিত খুচরা বিপণন, কৃষিতে চুক্তিচাষ চালু করিতে না দিবার কোনও কারণ নাই। সেই পুঁজির পাসপোর্টের রংবিচারও অনর্থক— সংগঠিত খুচরা বিপণনে বিদেশি লগ্নির উপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কৃষকের উপকার করিতেছে না। বৃহৎ পুঁজি যদি কৃষকের সহিত সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে, তাহাতে কৃষকের লাভ, অর্থনীতিরও লাভ। অর্থব্যবস্থা চালিত হয় চাহিদার দ্বারা। কৃষকের যথেষ্ট আয় হইলে, কৃষিকে লাভজনক পেশায় রূপান্তরিত করা গেলে আজ ভারত নিশ্চিন্ততর হইতে পারিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy