Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
terrorism

অনিশ্চয়তা

ইরাক ও আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চয়তার গর্ভে তলাইয়া যাইতেছে, তাহা ভারতীয় উপমহাদেশের পক্ষে সুসংবাদ হইতে পারে না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:২০
Share: Save:

আমেরিকার বিদায়ী ট্রাম্প প্রশাসন ইরাক ও আফগানিস্তান হইতে সেনা কমাইয়া আনিবার কথা ঘোষণা করিবার অব্যবহিত পরেই দুই দেশে ক্রমাগত রকেট হামলা চালাইল জঙ্গিরা। প্রতিটি হামলাতেই বহু মানুষ নিহত হইবার খবর মিলিতেছে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠী কোনও কোনও হামলার দায় স্বীকার করিলেও আফগান প্রশাসন তালিবানদেরও অভিযুক্ত করিয়াছে। ‘আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধ’ থামাইয়া সেনাবাহিনীর অন্তত অর্ধাংশকে দেশে ফিরাইবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন ট্রাম্প। এক্ষণে যাহা ঘটিতেছে, তাহা সেই রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণেরই উদ্যোগ। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ ক্রমশ আরও হিংসাত্মক চেহারা লইতেছে, পশ্চিম এশিয়ার দৈনন্দিন পরিস্থিতিও জটিল হইতে জটিলতর হইয়া যাইতেছে। সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার উপস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে বসিয়াও আফগান প্রশাসন ও তালিবান গোষ্ঠীর কোনও রফা হয় নাই। আমেরিকার অনুপস্থিতিতে সমাধানের আশা ক্ষীণতর হইবে বলিয়াই আশঙ্কা।

আশঙ্কাটি ভারতকে চিন্তায় ফেলিবার মতো। ইরাক ও আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চয়তার গর্ভে তলাইয়া যাইতেছে, তাহা ভারতীয় উপমহাদেশের পক্ষে সুসংবাদ হইতে পারে না। আফগানিস্তানে যে ‘কাউন্টারটেররিজ়ম’ বা সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা দেখা যায়, তাহার ভিত্তি আমেরিকা নির্মিত তথ্যভান্ডার; বিধ্বস্ত আফগান বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সমর্থনদাতাও তাহারাই। কাবুলের শেষতম রকেট হামলা তালিবানকৃত বলিয়া অভিযোগ তুলিলেও তাহা প্রমাণ করিবার ক্ষমতা আফগান প্রশাসনের নাই, প্রতিরোধ তো দূরস্থান। ইরাকের সঙ্কটও সমরূপ। পুনরুত্থিত আইএস-কে রুখিবার ক্ষমতা নানা সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ ইরাকি রাজনীতির নাই। এমনকি, সংস্কারপন্থী ইরাকি প্রধানমন্ত্রীরও আমেরিকার মিত্রতা ব্যতীত তেমন কোনও রাজনৈতিক পুঁজি নাই। অতএব, আমেরিকা না থাকিলে দুই দেশেরই ভবিতব্য সীমাহীন অস্থিরতা ও হিংসা।

কূটনীতি ও অর্থনীতির স্বার্থেও কি দুই দেশ হইতে সম্পূর্ণ হাত তুলিয়া লওয়া আমেরিকার পক্ষে যথাযথ হইবে? উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিভিন্ন উদ্যোগ এবং নানা প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখিবার স্বার্থে সকল বৃহৎ শক্তিই এই অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রাখিতে চাহিবে। ভারতের পক্ষেও সেই কূটনীতির বাহিরে থাকা অসম্ভব। কাবুল হামলার পরে নয়াদিল্লি রাষ্ট্রপুঞ্জকে জানাইয়াছে, যাহারা দেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেয়, তাহাদের দোষী সাব্যস্ত করা উচিত। সেই বার্তায় ‘ডুরান্ড লাইন বরাবর সন্ত্রাস’ বন্ধ করিবার প্রসঙ্গও উল্লিখিত হইয়াছে। ইঙ্গিতের অভিমুখ স্পষ্টতই পাকিস্তান। যে হেতু এই অঞ্চলে আমেরিকা ও চিন, দুই দেশেরই প্রভাবক্ষেত্র বিস্তৃত, সুতরাং এই রূপ কূটনৈতিক চাল নয়াদিল্লির পক্ষে অতি জরুরি। অপর পক্ষে, পশ্চিম এশিয়ায় অনিশ্চয়তা বজায় থাকিলে তাহাও ভারতকে চিন্তিত করিবে। ভারতের তৈল আমদানির দুই-তৃতীয়াংশ এই অঞ্চলের উপর নির্ভরশীল, সম্প্রতি পারস্য উপসাগরীয় একাধিক দেশের সহিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হইয়াছে। সব মিলাইয়া, বারংবার উগ্রপন্থী হামলা আন্তর্জাতিক মহলের পক্ষেও সমান উদ্বেগের কারণ হইয়া উঠিতেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

terrorism America
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy