দেশের রাজধানীতে যে শ্বাস লইবার যোগ্য বাতাসের অভাব হইয়াছে, তাহা কি যথোপযুক্ত আইনের অভাবে? পরিবেশ সুরক্ষার আইন কম নাই, দূষণ নিয়ন্ত্রণের ভারপ্রাপ্ত সংস্থাও নির্মিত হইয়াছে যথেষ্ট। তৎসত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার জানাইল, রাজধানীতে বায়ুদূষণ কমাইতে কেন্দ্র নূতন আইনের ব্যবস্থা করিবে, নূতন সংস্থা বানাইবে। প্রশ্ন উঠিবে, আগের আইনগুলির কী হইল তবে? ১৯৮৬ সালের পরিবেশ (সুরক্ষা) আইনে দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ধারা রহিয়াছে। নির্দিষ্ট ভাবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য রহিয়াছে বায়ু (দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন (১৯৮১)। কেন্দ্র এবং রাজ্য, উভয়ই এই আইনগুলির বলে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারে, দূষণকারীর শাস্তি বিধান করিতে পারে। দূষণ কমাইবার আইন কম পড়িয়াছে, এমন অভিযোগ কখনও উঠে নাই। আইন করিয়া নূতন দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করিবার যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছে কেন্দ্র, তাহার সম্পর্কেও ওই একই প্রশ্ন উঠিবে। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত সংস্থা (এনভায়রনমেন্ট পলিউশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অথরিটি) ব্যতীত বিবিধ ‘টাস্ক ফোর্স’ কাজ করিতেছে নানা সরকারি দফতরের অধীনে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদেরও রহিয়াছে নিজস্ব ‘টাস্ক ফোর্স’। কেন্দ্র বা রাজ্যের প্রশাসন দূষণ নিয়ন্ত্রণ করিতে গিয়া আইনি ক্ষমতার অভাব অনুভব করিয়াছে কি? দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সীমাবদ্ধতা কি আইনের ফাঁকের জন্য? কেন আরও একটি আইন, আরও একটি আইনসিদ্ধ সংস্থার প্রয়োজন? বরং একই কাজের ভারপ্রাপ্ত একাধিক সংস্থার মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়াছে।
অতিরিক্ত আইন প্রণয়নের এই প্রবণতা ভারতে বরাবরই দেখা গিয়াছে বিবিধ ক্ষেত্রে। যে কোনও সমস্যার মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ হইলে, উদ্যমের অভাবের জন্য প্রশাসন সমালোচিত হইলে, সরকার তড়িঘড়ি একটি আইন প্রণয়ন করিয়া ফেলে। যেন তাহাতেই সরকারের তৎপরতা ও কর্তব্যপরায়ণতা প্রতিষ্ঠা হইয়া গেল। আইন যে সমাধানের সূত্রমাত্র, তাহা যে সমাধান নহে, আইনের পক্ষে ও বিপক্ষে বিতর্কের শোরগোলে সে সত্যটি চাপা পড়িয়া যায়। অস্ত্রভান্ডারে বিবিধ অস্ত্র মজুত করিলেই যুদ্ধে জয় হয় না, অস্ত্র প্রয়োগ করিবার শক্তি ও কৌশল প্রয়োজন। প্রকৃত যোদ্ধা একটি মাত্র অস্ত্রের যথাযথ প্রয়োগে শত্রুকে নিপাতিত করিতে পারে। প্রয়োগ না করিলে অতি উত্তম আইনও অর্থহীন। বর্তমান দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ দুঃসাধ্য, তাহাতে বিবিধ রাজনৈতিক সংঘাত ঘটিবার সম্ভাবনা। নূতন আইন প্রণয়ন করিতে বিশেষ পরিশ্রম নাই, ঝুঁকিও নাই। সেই জন্যই কি আরও একটি আইন আবশ্যক হইল? কেন্দ্রীয় সরকার তিন দিনের মধ্যে নূতন আইনের খসড়া তৈয়ারি করিবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছে শীর্ষ আদালতকে। এমন তৎপরতার প্রতিশ্রুতি শুনিয়া সন্দেহ হয়, কাজ করা অপেক্ষা দায় সারিবার প্রেরণাই বুঝি প্রবলতর।
আইন প্রণয়ন সরকারের কর্তব্য। তাহা যেন কর্তব্য এড়াইবার অজুহাত না হইয়া উঠে। বায়ুদূষণে রাজধানী কতটা বিপন্ন হইয়াছে, জনস্বাস্থ্য সঙ্কট কত তীব্র হইয়াছে, তাহা জানা। দূষিত বায়ু যে কোভিডের মৃত্যুহার বাড়াইয়া দেয়, তাহাও আর অজানা নহে। দূষণের কারণগুলিও সুবিদিত— ফসলের গোড়ায় অগ্নিসংযোগ, দূষণকারী শিল্প ও পরিবহণ, দীপাবলির আতশবাজি। এগুলি থামাইবার উপায়ও বহু দিন জানা হইয়াছে, কিন্তু সেই জ্ঞান কার্যে পরিণত করিতে প্রশাসনিক তৎপরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন রাজনীতির সাংগঠনিক ক্ষমতার দ্বারা সহমত নির্মাণ। তার প্রতিটি কাজই কষ্টসাধ্য। তাহার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। তুলনায় অনেক সহজ আরও একটি আইন প্রণয়ন করা। তাহাতে সমস্যা মিটিবে না, কিন্তু দায়টি মিটিবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy