—ফাইল চিত্র
বেতন বকেয়া থাকিবার কারণেই বিএসএনএল-এর অস্থায়ী কর্মী কে রামকৃষ্ণন নিজের দফতরে আত্মঘাতী হইলেন কি না, সেই জল্পনার প্রয়োজন নাই। গত দশ মাসে অন্তত সাত জন অস্থায়ী কর্মী এই একই কারণে আত্মঘাতী কি না, সেই প্রশ্নও মুলতুবি থাকুক— কারণ, দাবিটির পক্ষে বা বিপক্ষে অকাট্য প্রমাণ পেশ করা অসম্ভব। কিন্তু, রাষ্ট্রায়ত্ত বিএসএনএল যে গত দশ মাস তাহার অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দেয় নাই, এই কথাটি তর্কাতীত। এবং, অক্ষমণীয়। সমস্যা কর্মসংস্থানের চরিত্র লইয়া নহে— সমস্ত কর্মীর চাকুরিই পাকা হইবে, সেই দিন গিয়াছে। বস্তুত, সেই ব্যবস্থার প্রয়োজনও নাই। শ্রমের বাজারে নমনীয়তা থাকা ব্যবসায়িক সাফল্যের অতি জরুরি শর্ত। যখন কাজ থাকিবে, তখন কর্মী নিয়োগ করা হইবে, এবং যখন যথেষ্ট কাজ থাকিবে না, তখন কিছু শ্রমিককে ছাঁটাই করা হইবে— ইহাই পুঁজিবাদের নীতি, তাহাতে নৈতিক আপত্তির অবকাশ নাই। বিএসএনএল-এ যদি অস্থায়ী কর্মীদের যথেষ্ট কাজ না থাকে, তবে তাঁহাদের চুক্তি শেষ করিয়া দেওয়াই বিধেয়। কিন্তু, কাজ থাকুক আর না-ই থাকুক, কর্মীদের কাজে রাখিয়া দশ মাস বেতন না দেওয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। শ্রমিকের বেতনের সামান্যতম অংশ বকেয়া রাখাও অন্যায়। বিএসএনএল সেই অন্যায়টিই করিয়াছে। অবশ্য, তাহারাই একমাত্র, বলিলে অনৃতভাষণ হইবে।
বিএসএনএল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হইতে পারে, কিন্তু তাহা ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থারই অঙ্গ। সমাজতন্ত্রের সহিত ধনতন্ত্রের বৃহত্তম ফারাক হইল, এই ব্যবস্থায় চুক্তির মূল্য অসীম। যে চুক্তি রচিত হইতেছে, তাহা রক্ষিত হইবে— এই বিশ্বাসের উপরই গোটা ব্যবস্থা দাঁড়াইয়া আছে। এবং, শ্রমশক্তি সেই বাজারে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাহার সহিত চুক্তিভঙ্গ করা প্রকৃত প্রস্তাবে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলে অন্তর্ঘাত। বিএসএনএল বা অন্য কোনও সংস্থা এই কাজ করিলে ক্ষতি শুধু সংশ্লিষ্ট সংস্থাটিরই নহে, গোটা ব্যবস্থার। কারণ, চড়া বিশ্বাসের সাম্যাবস্থা হইতে অর্থব্যবস্থা এক বার চ্যুত হইলে ফের সেখানে ফিরিয়া যাওয়া দুষ্কর— তখন স্বল্প বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের সাম্যাবস্থা উপস্থিত হয়। তাহাতে সকলেরই ক্ষতি। বিএসএনএল-এর ঘটনাটি আরও এক পর্দা চড়া— এখানে নিয়োগকর্তা কোনও ব্যক্তিবিশেষ নহে, স্বয়ং রাষ্ট্র। যাহার উপর বিশ্বাস আছে বলিয়াই গোটা অর্থব্যবস্থা চলিতেছে। রাষ্ট্র যদি চুক্তিভঙ্গ করে, তবে সেই বিশ্বাস ভাঙিতে বাধ্য। প্রশ্নটি শুধু অস্থায়ী কর্মীদের নহে— প্রশ্ন গোটা দেশের অর্থব্যবস্থার। নরেন্দ্র মোদীরা বহু ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিতেছেন। এই ক্ষেত্রটিকে রেহাই দিলে উপকার হয়।
ক্ষমতার উচ্চাবচতা একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নিয়োগকর্তার ক্ষমতা স্বভাবতই শ্রমিকের অধিক। রাষ্ট্রীয় পেশিশক্তির তুলনায় অস্থায়ী শ্রমিকদের জোর সামান্য। সেই কারণেই ক্ষমতা ব্যবহার সম্বন্ধে সাবধানি হওয়া বিধেয়। এই অবস্থানটি বামপন্থী নহে— পুঁজিপতি যে উদ্বৃত্ত শ্রম আহরণ করিবেন, সেই স্বাভাবিকতাকে প্রশ্ন করিবার কোনও কারণ নাই। সেই আহরণের ব্যবস্থা আছে বলিয়াই অর্থব্যবস্থার চাকা অগ্রসর হয়। অন্য রকম হইলে, গোটা ব্যবস্থাটিই সম্ভবত ভাঙিয়া পড়িত। আপত্তি পুঁজিবাদের স্বার্থেই। শ্রমশক্তি ব্যতিরেকে উৎপাদন অসম্ভব। এমনকি এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর জমানাতেও। স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের কথা ভাবিয়া যদি ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অন্যায্য ভাবে শ্রমিকের স্বার্থহানি করা হয়, তবে তাহা গোটা ব্যবস্থাটিকেই বিপন্ন করিতে পারে। বিপজ্জনক সব শক্তিকে জায়গা করিয়া দিতে পারে, যাহাদের উদ্দেশ্য ধনতন্ত্রের ক্ষতিসাধন করা। সাধিয়া সেই বিপদ ডাকিয়া আনিবার কোনও প্রয়োজন আছে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy