শব্দবাজি। —ফাইল চিত্র
শব্দবাজির ক্ষেত্রে ‘স্পট ফাইন’ চালু করিবার দাবি জানাইয়াছেন পরিবেশকর্মীরা। অর্থাৎ, কাহাকেও শব্দবাজি তৈয়ারি, সরবরাহ, বণ্টন অথবা ফাটাইতে দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ সর্বোচ্চ পাঁচ বৎসর অবধি জেল এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানা করিতে হইবে। পাল্টা প্রশাসনের বক্তব্য, দেশব্যাপী শব্দবাজির মাত্রা ১২৫ ডেসিবেল হইলেও রাজ্যে উহা ৯০ ডেসিবেলে বাঁধা হইয়াছে, এবং কারখানা বা অন্যান্য নির্মাণ স্থলে পুলিশ আইনি পদক্ষেপ করিতেছে। কিন্তু এই সমগ্র চাপানউতোরের গোড়াতেই গলদ আছে। বাজি বানাইবার ছাড়পত্র দিলে, বেচিবার বাজার খোলা রাখিলে এবং ফাটাইবার অধিকার থাকিলে পরিবেশের বিপদ ঠেকাইবার পথ আর বাকি থাকে কোথায়? অন্যায় করিবার পরে শাস্তি দেওয়াই বিধেয়, কিন্তু বাজি ফাটাইবার অপরাধে শাস্তি আদৌ হয় কি না, হইলেও তাহা যথেষ্ট কঠোর কি না, এবং সেই শাস্তির কথা বৃহত্তর জনসমাজকে জানাইবার ব্যবস্থা হয় কি না— পরিবেশের উপকারের সম্ভাবনা এই প্রশ্নগুলির উত্তরের উপর নির্ভর করিতেছে।
সঙ্কট কেবল শব্দদূষণে নহে, সামগ্রিক ভাবে দূষণে, এবং সেই ক্ষেত্রে বায়ুদূষণের পাল্লাটিই ভারী। এবং তাহা হইলে, কেবল শব্দবাজি নহে, সকল প্রকার বাজিই নির্মাণ এবং প্রদর্শন নিষিদ্ধ করিতে হয়। গত কয়েক দশকে এই জগৎ স্বাভাবিক নিয়মেই শিক্ষা ও সচেতনতায় অগ্রসর হইয়াছে। বিশ্বজনীন বায়ুদূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে জনতা এখন অধিক ওয়াকিবহাল। ভারতীয়রাও জগতের বাহিরে নহে। সম্প্রতি গ্রেটা থুনবার্গের জলবায়ু ধর্মঘটেও তাঁহাদের যথেষ্ট উদ্বেলিত হইতে দেখা গিয়াছে। তবু সংবৎসর বাজি বানাইবার, ফাটাইবার এবং জ্বালাইবার বিরাম নাই দেখিয়া বুঝা যায়, ইহা জাতির সংস্কারস্বরূপ। পরিবেশকর্মী ও প্রশাসন উভয়ের আচরণেও সেই মানসিকতা প্রতিফলিত হয়। কুটিরশিল্পের ন্যায় ঘরে ঘরে বাজি নির্মাণ থামাইতে প্রকাশ্যেই অনীহা প্রকাশ করিয়া থাকেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু সামাজিক ভাবে বাজির মান্যতা ভাঙিতে না পারিলে এই অসংগঠিত উদ্যোগকে রোখা সম্ভব নহে, এবং তাহা না হইলে পরিবেশ বাঁচানোও অসম্ভব। বাজিকে উৎসবের অংশ বলিবার অর্থ, এক অন্যায়কে সামাজিক যাপনে পরিণত করিয়া রাখা। স্থবিরতা ভাঙিয়া বুঝিতে হইবে, বাজি পোড়ানো কোনও সুস্থ উদ্যাপনের অঙ্গ হইতে পারে না।
তবে কি আতসবাজির আনন্দ হইতে মানুষ বঞ্চিত থাকিবেন? পশ্চিমি দুনিয়ার উন্নত দেশগুলিতে বর্ষবরণ-সহ নানা উৎসবে যে আতসবাজির খেলা দেখা যায়, তাহার দায়দায়িত্ব সরকারের, বা সরকার-অনুমোদিত সংস্থার। শহর হইতে দূরে কেবল একটি নির্দিষ্ট স্থলে, জলাধারের নিকটে, নির্দিষ্ট পরিমাণে বাজি পোড়াইবার ব্যবস্থা হয়। যাঁহারা আনন্দ উপভোগ করিতে চাহেন, তাঁহারা সেই স্থানে উপস্থিত হইয়া রোশনাইয়ের সাক্ষী থাকিতে পারেন। তীব্র আনন্দ হইলেও কোনও নাগরিক মর্জিমাফিক যে কোনও স্থলে— হাসপাতাল হউক কিংবা শিক্ষাঙ্গন— বাজি পোড়াইতে পারেন না। এই অভ্যাসের শিক্ষাটি হইল, বাজি ঠেকাইতে ডেসিবেলের নাগাল বাঁধিয়া লাভ নাই, বাজি বস্তুটিকেই জনতার নাগালের বাহিরে লইয়া যাইতে হইবে। পরিবেশ রক্ষায় আরোগ্যে নহে, প্রতিষেধকই একমাত্র পথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy