Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

স্বাগত সংস্কার

আপাতত কেবল প্রাথমিকে চালু হইলেও আশা করা চলে যে আগামী দিনে সকল স্তরে এই বন্দোবস্ত সম্ভব হইবে। এবং হিন্দু স্কুলের পদাঙ্ক অনুসরণ করিবে আরও বহু সরকারি বাংলা বিদ্যালয়। আশার কারণ ত্রিবিধ।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২৬
Share: Save:

ভাবনাটি দানা বাঁধিয়াছিল দুইশত বৎসর পূর্তির প্রাক্‌কালেই। এত দিনে তাহা ফলপ্রসূ হইল— বাংলার পাশাপাশি ইংরাজি মাধ্যমেও লেখাপড়া করিতে পারিবে হিন্দু স্কুলের ছাত্রেরা। আপাতত কেবল প্রাথমিকে চালু হইলেও আশা করা চলে যে আগামী দিনে সকল স্তরে এই বন্দোবস্ত সম্ভব হইবে। এবং হিন্দু স্কুলের পদাঙ্ক অনুসরণ করিবে আরও বহু সরকারি বাংলা বিদ্যালয়। আশার কারণ ত্রিবিধ। প্রথমত, শিক্ষার্থীদের সম্মুখে যত অধিকসংখ্যক সুযোগ খুলিয়া দেওয়া যায়, তত তাহা পড়াশোনার পরিবেশ বিকাশের অনুকূল। পছন্দ করিয়া লইবার মতো পথের সংখ্যা বাড়িলে ব্যক্তি নিজের ভাবনা অনুসারে বাছিতে শিখিবে। তাহার ভাবনার খোরাক বাড়িবে। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট স্কুলের পক্ষেও পদক্ষেপটি সদর্থক, কেননা এই প্রক্রিয়ায় সমাজের অন্যান্য স্তরের নিকটও আবেদন তৈয়ারি হইবে, যাহাদের সহিত এত কাল যোগাযোগ অসেতুসম্ভব ছিল। যে হেতু মেধাবী পড়ুয়ার অন্বেষণের লক্ষ্যেই পদক্ষেপ, অতএব নূতন পথও দেখিয়া লইতে হইবে। তৃতীয়ত, বিশ্বের সহিত যোগ ঘটাইতে ইংরাজির অপরিহার্যতা তর্কাতীত। উচ্চশিক্ষা করিবার ক্ষেত্রেও এই ভাষা ব্যতীত উপায় নাই। সুতরাং, বঙ্গদেশকে মেধায় বৃহৎ হইতে গেলে ইংরাজি মাধ্যমকে অগ্রহণ চলিবে না।

ইংরাজিকে গ্রহণ করিলেই অনিবার্য ভাবে প্রশ্ন উঠিবে, তবে কি বাংলা ভাষাকে অবহেলা করা হইতেছে? ধারণার ভিত্তিটি হইল, ইংরাজি মাধ্যমে লেখাপড়ার অর্থ ভাল করিয়া বাংলা শিক্ষা না করা, মাতৃভাষাকে অবহেলা করা। কোনও মতেই কিন্তু ইহাকে সঙ্গত ভাবনা বলা চলে না। অভিজ্ঞতা এবং যুক্তিক্রম উভয়েই বলিবে, যদি বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা বাংলা মাধ্যম অপেক্ষা উত্তম হয়, তবে ভাষাশিক্ষাও উন্নততর হইবে। ভাষাশিক্ষার সহিত মাধ্যম ভাষার সম্পর্কটি এত আড়াআড়ি না বলিয়াই অনেকেই বাংলা স্কুলে পড়িয়াও ইংরেজিতে অত্যন্ত সহজ সাবলীলতা অর্জন করিতে পারিতেন/পারেন, আবার ইংরাজি স্কুলে পড়িয়াও ছাত্রছাত্রীরা চমৎকার বাংলা পড়িতে/লিখিতে শেখে। বর্তমান সময়ের সামগ্রিক চিত্রটি যে তাহা নহে, ইহার কারণ ভাষাশিক্ষার প্রতি অমনোযোগ এবং ভাষাশিক্ষকের শিক্ষণকার্যে অপারদর্শিতা। বাংলা মাধ্যম স্কুলে যে ইংরাজি চর্চার হাল এত খারাপ, কিংবা ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে যে বাংলা মাত্রেই ব্রাত্য— তাহা শিক্ষাপদ্ধতির দুর্বলতা এবং মানসিকতার সঙ্কীর্ণতার লক্ষণ। এই দুর্বলতা ও সঙ্কীর্ণতা কাটানোই হইল দ্বিভাষিক বৃহৎ বাঙালি তৈয়ারি করিবার একমাত্র পথ।

সেই পথে হিন্দু স্কুল ফিরিতে পারিবে কি না, বিস্তৃত পরিসরে পৌঁছাইবার ফলে সেরা ছাত্রেরা ফের সেখানে পড়িতে আসিবে কি না— ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর এখনই দেওয়া যাইবে না। নূতন সংস্কারের জন্য নূতন প্রশিক্ষণ লাগিবে, পরিকল্পিত ও সুচারু ভাবে সেই কাজ করিতে হইবে। নূতন শিক্ষক আনিতে হইবে। কেবলমাত্র তাহা হইলেই পুরা ব্যবস্থাটি চালনা করা যাইবে। তবে একটি বিষয় লইয়া কোনও দ্বিধা নাই— লেখাপড়ার মানোন্নয়নে ভাষা বিষয়ে ছুতমার্গতা যত দ্রুত কাটানো যায়, ততই মঙ্গল। ইংরাজি মাধ্যম বা বাংলা মাধ্যম যে যাহাই পছন্দ করুক, দ্বিভাষিক বাঙালি যে বহু অর্থেই একভাষিক বাঙালির অপেক্ষা সমৃদ্ধতর, তাহা তর্কাতীত।

অন্য বিষয়গুলি:

Hindu School Education Policy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy