Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

যে কোনও মুহূর্তে

ডোনাল্ড ট্রাম্প যে এমন ঝুঁকি লইতে পারেন, তাহা অপ্রত্যাশিত ছিল না। প্রথমত, রাষ্ট্রনীতির ব্যাকরণকে সম্পূর্ণ তুচ্ছ করিয়া বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুঃসাহসে তিনি অনন্য।

জেনারেল সোলেমানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার মিছিল। সোমবার তেহরানে। ছবি- এএফপি।

জেনারেল সোলেমানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার মিছিল। সোমবার তেহরানে। ছবি- এএফপি।

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০০
Share: Save:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঝুঁকি লইলেন। বড় রকম ঝুঁকি। কাসেম সোলেমানি কেবল ইরানের অন্যতম সামরিক কর্তা ছিলেন না, তিনি ছিলেন ইরাকে ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে সফল অভিযানের প্রধান সেনাপতি এবং পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের সামরিক প্রভাববলয়ের প্রধান কারিগর ও পরিচালক। শুক্রবার ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে সরাসরি আক্রমণে তাঁহাকে হত্যা করিবার সিদ্ধান্ত লইবার সময় মার্কিন প্রশাসন অবশ্যই জানিত, এমন এক জনের হত্যাকাণ্ডের পরে তেহরানের পক্ষে নীরব এবং নিষ্ক্রিয় থাকা কঠিন। ইরান সরব হইয়াছে— ‘সর্বোচ্চ নায়ক’ আয়াতোল্লা আলি খামেনেই ঘোষণা করিয়াছেন: আমেরিকা ‘শক্তিশালী প্রতিশোধ’-এর জন্য প্রস্তুত থাকুক। প্রাথমিক সক্রিয়তাও দেখা গিয়াছে— বাগদাদে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি এবং দূতাবাসের সন্নিহিত এলাকায় শনিবার ক্ষেপণাস্ত্র আসিয়া পড়িয়াছে। সোমবার সোলেমানির শেষকৃত্যে তাঁহার কফিনের সামনে খামেনেইকে অশ্রুসজল হইতে পড়িতে দেখা গিয়াছে। ওয়াশিংটন নিশ্চয় জানে যে, এই সব প্রতিক্রিয়াই উপক্রমণিকামাত্র। ইরাকে ইতিমধ্যেই আরও সাড়ে তিন হাজার মার্কিন সেনা পাঠানো হইতেছে। অন্য দিকে, কূটনীতির পথও ঘুলাইয়া উঠিতেছে। ইরানের এক সেনানায়কের দাবি: মার্কিন প্রশাসন তৃতীয় দেশ মারফত তেহরানকে বলিয়াছে এই আঘাতের ‘সমানুপাতিক প্রত্যাঘাত’-এ সীমিত থাকিতে, অর্থাৎ, প্রতিশোধ যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়! ইরানের বিদেশমন্ত্রী পত্রপাঠ জানাইয়াছেন: আমেরিকা একটি ‘নির্বোধ বার্তা’ দিয়াছে। ইরানকে রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে যাইবার জন্য প্রয়োজনীয় মার্কিন ভিসা দিতে অস্বীকার করিয়াছে ট্রাম্পের দেশ। সব মিলাইয়া পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝঞ্ঝাসঙ্কুল। পশ্চিম এশিয়ায় আক্ষরিক অর্থে যে কোনও মুহূর্তে বড় সংঘর্ষ শুরু হইতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যে এমন ঝুঁকি লইতে পারেন, তাহা অপ্রত্যাশিত ছিল না। প্রথমত, রাষ্ট্রনীতির ব্যাকরণকে সম্পূর্ণ তুচ্ছ করিয়া বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুঃসাহসে তিনি অনন্য। বারাক ওবামা অনেক কাঠখড় পুড়াইয়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি মূল্যবান নজির গড়িয়া ইরানের পারমাণবিক প্রচেষ্টা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে যে চুক্তি সম্পাদন করিয়াছিলেন, গত বছর ট্রাম্প যখন তাহা হইতে সরিয়া আসিয়া ইরানের বিরুদ্ধে নূতন নিষেধাজ্ঞা জারি করিতে শুরু করেন, তখনই ঝুঁকির নূতন পর্বের সূচনা হয়। এক অর্থে সোলেমানি হত্যা তাহার পরিণতি। দ্বিতীয়ত, এই বছরের শেষে নির্বাচনে ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হইবার পথে অনেক কাঁটা। তিনি স্বভাবতই একটি (বা একাধিক) ট্রাম্প কার্ড খুঁজিতেছেন। ‘শত্রুপক্ষ’-এর সেনাপতিকে শেষ করিবার কৃতিত্ব তাঁহার নিজস্ব ভোটব্যাঙ্কের পরম আদরণীয় হইতে পারে। ইরানের সহিত যুদ্ধপরিস্থিতি ঘোরতর আকার ধারণ করিলে ভোটব্যাঙ্ক প্রসারিত হইতে পারে— যুদ্ধ-উন্মাদনা শাসকের পক্ষে পরম সহায়ক, কি ভারতে, কি আমেরিকায়। কিন্তু, তৃতীয়ত, পশ্চিম এশিয়ার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিকে আরও ভয়াল করিয়া তুলিবার দায় একা ট্রাম্পের নহে। স্পষ্টতই, এই সিদ্ধান্ত সামগ্রিক ভাবে মার্কিন প্রশাসনের, এবং বহুলাংশে রিপাবলিকান পার্টির। তথাকথিত বাস্তববাদী কূটনীতির প্রেরণায় ‘সর্বাধিক চাপ’ সৃষ্টি করিয়া ইরানকে বশ্যতা স্বীকার করাইবার যে পথ রিপাবলিকান প্রশাসন অনুসরণ করিয়াছে, তাহাতে বিপদের ঝুঁকি উত্তরোত্তর বাড়িতেছে, বাড়িবে। ভারতের শাসকেরা আপাতত সেই বিপদের সম্ভাবনা মাপিতেছেন, আমেরিকা এবং ইরান কাহারও রোষ উৎপাদন না করিয়া কত দূর চলা যায় তাহার হিসাব কষিতেছেন। কে জানে, তাঁহারা হয়তো মনে মনে ভাবিতেছেন, যুদ্ধের জিগির তুলিতে বেশ লাগে, যুদ্ধের কোপে না পড়িলেই মঙ্গল।

অন্য বিষয়গুলি:

USA Donald Trump Soleimani Iran
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy