Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

ছুটি-পঞ্চমী

হাল্লার রাজা তাঁহার প্রাসাদ হইতে প্রবল নৃত্যে দৌড়াইতে দৌড়াইতে একটিই শব্দ বার বার উচ্চারণ করিয়াছিলেন: ‘ছুটি’! গনিয়া গনিয়া পাঁচ বার।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

হাল্লার রাজা তাঁহার প্রাসাদ হইতে প্রবল নৃত্যে দৌড়াইতে দৌড়াইতে একটিই শব্দ বার বার উচ্চারণ করিয়াছিলেন: ‘ছুটি’! গনিয়া গনিয়া পাঁচ বার। ছুটির আনন্দ কাহাকে বলে, ওই একটি দৃশ্যে তাহা অমর হইয়া আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাল্লার রাজা নহেন, তিনি ছুটি লইয়া আনন্দ করেন না, তাঁহার আনন্দ ছুটি দিয়া। তাঁহার রাজত্বে আর যাহারই অভাব থাকুক, ছুটির কোনও অভাব নাই। মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বভাবত পরিশ্রমী, কিন্তু তাঁহার কৃপায় সরকারি ছুটির সম্ভার বছরে বছরে সমৃদ্ধ হইয়া চলে। নির্ধারিত ছুটির সংখ্যা বাড়িতেই থাকে, তাহার সহিত যোগ হয় রকমারি অ-নির্ধারিত ছুটি, আকস্মিক বলিয়াই যাহা আরও মধুর। এই রাজ্যে বৃষ্টি আসিতে দেরি হইলে গ্রীষ্মের ছুটি এমনই দীর্ঘ মেয়াদে প্রলম্বিত হয় যে ইতিমধ্যে বর্ষা নামিয়া যায় এবং বাড়তি ছুটি কমাইবার নির্দেশ রদ করিতে হয়। এই রাজ্যে ছুটিতে আনন্দ করিয়া মানুষ ক্লান্ত হইয়া পড়িবে বলিয়া ক্লান্তি দূর করিবার জন্য এক দিন বাড়তি ছুটি মঞ্জুর হয়।

সেই ধারাতেই মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এক দিনের সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বৃহস্পতি ও শুক্রবার, দুই দিন সরকারি ছুটি নির্ধারিত হইয়াছিল। কিন্তু ক্রমে দিকে দিকে বার্তা রটিয়া গেল যে, সরস্বতী পূজার তিথি বুধ-বৃহস্পতি দুই দিনে ভাগ হইয়া গিয়াছে, অনেক স্কুলেই বুধবার পূজা হইবে, অথচ বুধবার ছুটি নাই। তবে উপায়? উপায় সহজ এবং সরল। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় সরকারি সিদ্ধান্ত স্থির হইল: বুধবারও ছুটি। অর্থাৎ এক দিনের পূজায় তিন দিন ছুটি। এবং, বাঙালি ভুলিবে না, ভুলিতে পারে না, এই তিন দিনের পরে আসিবে শনি ও রবি। সুতরাং, এই সরস্বতী পূজায় ছুটি আসলে গনিয়া গনিয়া পাঁচ দিন। বসন্তপঞ্চমী তো প্রতি বারের ব্যাপার, এ বার ছুটি-পঞ্চমী। কে বলিতে পারে, পরের বছরে হয়তো এই ঐতিহ্যকে সম্মান জানাইয়া সরস্বতী পূজায় পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষিত হইবে। বাগ্‌দেবী তাহা পছন্দ করিবেন কি না, বলা শক্ত। তবে হ্যাঁ, পশ্চিমবঙ্গে তাঁহার পূজার ছুটি কয় দিন হইবে, সেই বিষয়ে তাঁহার পছন্দ-অপছন্দের খোঁজ রাখিবার বোধ করি কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই।

যে কেবল কাজ করে এবং একেবারে খেলাধুলা করে না, সে মানুষ হিসাবে বিবর্ণ বা নিস্তেজ হইয়া পড়ে, ইংরেজি ভাষায় এমন একটি প্রবচন অন্তত সপ্তদশ শতক হইতে সুপ্রচলিত। যে জাতির ছুটির দিনের সংখ্যা বছরে বছরে বাড়িতে থাকে এবং কাজের সময় সেই অনুপাতে কমিয়া চলে, তাহার পরিণতি কী হয়, পশ্চিমবঙ্গ নিষ্ঠা সহকারে তাহার সন্ধান করিয়া চলিতেছে। কথায় কথায় ছুটি ঘোষণার এই বিচিত্র রীতি কেবল কাজের সময় কমায় না, কাজের মানসিকতাকে নষ্ট করে। পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত তাহার মধ্যবিত্ত সমাজে, কাজের মানসিকতার সুনাম নাই। বাঙালি প্রবাসে কর্মঠ এবং স্বভূমিতে কর্মবিমুখ, তাহার এই খ্যাতি অত্যন্ত সুপরিচিত। সরকারি কর্মীদের কর্মবিমুখতার অপবাদ কয়েক গুণ বেশি। ছুটির বাহুল্য সেই কর্মবিমুখতায় ইন্ধন জোগায়। আরও বেশি উদ্বেগজনক স্কুলের ছুটি বাড়াইবার এই যথেচ্ছাচার। যে বয়সে মানসিকতা তৈয়ারি হয়, সেই বয়সেই যদি ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় এই ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটে যে, যখন-তখন যে কোনও অজুহাতে স্কুল ছুটি করিয়া দেওয়া চলে, তবে তাহারা কেমন কর্মব্রতী তৈয়ারি হইবে? পরিশ্রমী মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার ক্রমব্যস্ততার অবকাশে বারেক ভাবিয়া দেখিবেন কি?

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Saraswati Puja Leave
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy