Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
প্রবন্ধ ১

সাংসদের দায়িত্ব সংসদেই সীমিত নয়

‘সংসদের বাইরেও সাংসদদের যে আচরণ প্রত্যাশিত, তার অভাব প্রকট।’ তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ তাপস পালের বিদ্বেষ-ভাষণ সংক্রান্ত মামলায় নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। নির্দেশের নির্বাচিত অংশ।গত এক বছরে এই রাজ্যের মানুষ বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দলের অনুগামী নেতাদের মুখে বহু ভাষণ শুনেছেন। তার মধ্যে কৃষ্ণনগর থেকে নির্বাচিত লোকসভা সদস্য তাপস পালের একটি বক্তৃতা বিতর্কের কেন্দ্রে।

সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মন্দির। সংসদে প্রবেশের আগে নরেন্দ্র মোদী। ২০ মে, ২০১৪।

সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মন্দির। সংসদে প্রবেশের আগে নরেন্দ্র মোদী। ২০ মে, ২০১৪।

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

গত এক বছরে এই রাজ্যের মানুষ বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দলের অনুগামী নেতাদের মুখে বহু ভাষণ শুনেছেন। তার মধ্যে কৃষ্ণনগর থেকে নির্বাচিত লোকসভা সদস্য তাপস পালের একটি বক্তৃতা বিতর্কের কেন্দ্রে। তাপস পাল সম্পর্কে সংবাদপত্রে এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমে অভিযোগ করা হয়েছে যে, নদিয়া জেলার তেহট্ট মহকুমার চৌমাহায় একটি জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উদ্দেশে, বিশেষত সিপিআই(এম) দলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। আদালতে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এবং ভিডিয়ো ফুটেজ-এর যে নমুনাগুলি পেশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, তাপস পাল তাঁর সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন যে, বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের অনুগামীরা যদি তাঁদের (তাঁর সমর্থকদের) স্পর্শ করে, তা হলে তাদের হত্যা করতে হবে, এমনকী তাদের মেয়েদের ধর্ষণ করতে হবে।...

আমি মনে করি, সংসদ হল সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মন্দিরের গর্ভগৃহ, সংবিধান হল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ এবং সাংসদরা হলেন যাজকস্বরূপ। যথাযথ আইন প্রণয়ন করে একটি সুশৃঙ্খল সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি করাই সাংসদদের কাজ। স্বভাবতই তাঁদের কাছে এই প্রত্যাশা করা হয়েছে যে, তাঁরা সংবিধানের প্রতি যথার্থ আস্থা ও আনুগত্য পোষণ করবেন এবং তাঁদের সাধারণ বা স্বাভাবিক মানবিক আচরণে সৌজন্য, নীতিনিষ্ঠা, চারিত্রিক সংহতি এবং ভদ্রতার প্রকাশ ঘটবে।...

... কালক্রমে সংসদ বিভিন্ন সদস্যকে নিয়ে নানা বিতর্কে আলোড়িত হয়েছে, আইনসভার ভিতরে এবং বাইরে তাঁদের আচরণ নৈতিকতার শর্ত লঙ্ঘন করেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অকারণ। মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির প্রসার ঘটানোর বদলে অনেক সময়েই সংঘাতের পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু জনপ্রতিনিধির হিংসাশ্রয়ী আচরণ এবং ভীতিপ্রদর্শনের মানসিকতা অথবা আইন লঙ্ঘন করে পেশিশক্তির জোরে কার্যসিদ্ধির চেষ্টা সংবাদের শিরোনামে এসেছে, অর্থাত্‌ তাঁরা ভুল কারণে খ্যাতিমান হয়েছেন। এখনও পরিস্থিতিতে কোনও উন্নতি ঘটেছে, এমন কথা বলা যাবে না। সংবিধানের প্রস্তাবনায় জনকল্যাণ এবং প্রগতির যে প্রতিশ্রুতি ছিল, সংসদকে যে সব প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বিশেষ ভাবে সংশ্লিষ্ট হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে, তাকে সম্মান জানানোর, ধারণ করার এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সমৃদ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিসর্জন দেওয়া হয়েছে বলেই মনে হয়।...

সংসদের বাইরেও সাংসদদের যে অনুকরণযোগ্য আচরণ প্রত্যাশিত, তার অভাব প্রকট। আমি যদি একটি অপ্রিয় সত্য স্পষ্ট করে না বলে নীরব থাকি, তা হলে, আমি মনে করি, প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অপরাধ ঘটবে। জনপ্রতিনিধিদের একটি খুব ছোট অংশ সাংসদের উচ্চ এবং সম্মানিত ভূমিকা পালনের যোগ্য নন, নৈতিকতা সম্পর্কে কোনও ধারণাই তাঁদের নেই, তাঁদের সম্পূর্ণ দায়িত্ববোধহীন এবং নিন্দনীয় আচরণের ফলে গোটা সংসদ কলঙ্কিত হয়েছে এতটাই যে, দেশের মানুষকে গভীর হতাশায় বলতে শোনা গিয়েছে, সংসদ তাঁদের ব্যর্থ করেছে। দায়িত্বপরায়ণ, নিষ্ঠাবান এবং সংবেদনশীল সাংসদরা তাঁদের সাংবিধানিক ভূমিকা পালনে যত আন্তরিক ভাবেই চেষ্টা করুন, সাধারণ ভাবে রাজনীতিক নামক বর্গটির প্রতি দেশের সমাজে একটা বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে, অবিলম্বে এর মোকাবিলা না করলে ভবিষ্যতে এই প্রবণতা বিপজ্জনক আকার ধারণ করতে পারে।...

সংবিধান অনুসারে, আইনের শাসন প্রশাসনের সমস্ত পরিসর জুড়েই প্রাসঙ্গিক এবং রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি অঙ্গই তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বস্তুত, সংবিধান আইনের শাসনের কথা বলেছে, রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে পরিপুষ্ট গুণ্ডাদের শাসনের কথা বলেনি। সংবিধান রচনার সময় গণপরিষদে বি আর অম্বেডকর স্বাধিকার, সমতা এবং ভ্রাতৃত্বের যে ত্রয়ীর কথা বলেছিলেন, সেই আদর্শকে সত্য করে তোলা এবং দেশের সংহতি রক্ষা করার মৌলিক নীতিই সংবিধানে বিধৃত। এই আদর্শত্রয়ীকে এক সঙ্গেই দেখতে হবে এবং তার নির্দেশ লঙ্ঘন করলে সেটা হবে সংবিধানকে টুকরো টুকরো করে ফেলার শামিল।...

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বলেছিলেন, ‘যে কোনও জায়গায় অন্যায় ঘটলে সেটা সব জায়গায় ন্যায়ের পক্ষে বিপজ্জনক।’ সুপ্রিম কোর্ট এই আদর্শ স্বীকার করে নিয়েছেন এবং এই সূত্র ধরে এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, বিচারব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের আস্থার ক্ষয় হতে দেওয়া চলে না। (দ্র: এন কন্নদাসন বনাম অজয় খোসে (২০০৯), ৭ এসসিসি ১)...

তাঁর দলের কাছে মার্জনা ভিক্ষা করা ছাড়া তাপস পাল জনসমক্ষে কোনও ভাবে তাঁর আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন, এমন কোনও যুক্তিগ্রাহ্য নিদর্শন আমার কাছে পেশ করা হয়নি। বস্তুত, তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যদি সেখান থেকেই জনসমক্ষে মার্জনা চাইতেন এবং নিজের আচরণের জন্য অনুতাপ জানাতেন, তা হলে এই বিষয়ে অন্য রকম বিবেচনার অবকাশ থাকত। আমি মনে করি, যে আচরণ আইনত নিষিদ্ধ, তাকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট আইনি ব্যবস্থাটাই অর্থহীন হয়ে পড়ে এবং অব্যবস্থা ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। এর পরিণামে সমাজে আইনের শাসন ভেঙে পড়তে পারে এবং, যে অপরাধ প্রত্যাহার করা যায় না তাকেও যদি প্রশ্রয় দেওয়া হয় তা হলে বিচারব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। এ ধরনের গর্হিত আইনলঙ্ঘনকে উপেক্ষা করার তাই কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

এই বক্তৃতা যদি তাপস পাল না হয়ে কোনও সাধারণ নাগরিকের মুখে শোনা যেত, তা হলে হয়তো সেটা একটা আকস্মিক বিচ্যুতি হিসেবেই গণ্য করা যেত। কিন্তু তাপস পালের মতো প্রত্যেক রাজনীতিককে বুঝতে হবে, তাঁদের উপর সব সময় জনসমাজের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে এবং তাঁদের জন্য ভুল করার কোনও ছাড় নেই। নাগরিকের জীবন সস্তা নয়, জীবন মূল্যবান এবং আইনি রক্ষাকবচ সরিয়ে নিয়ে নাগরিকদের একটা অরাজকতার মধ্যে ঠেলে দেওয়া যায় না। যেটা সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক এবং মর্মান্তিক ব্যাপার তা হল এই যে, তাপস পাল যখন কী কী করতে পারেন সেটা বড়াই করে বলছেন এবং প্রতিপক্ষের লোকদের ধ্বংস করার জন্য তীব্র বাক্যবাণ নিক্ষেপ করছেন, তখন সে-সব শুনে সভাস্থলে সমবেত তাঁর অনুগামীরা হাততালি দিচ্ছিলেন। সাংসদরা বহু ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেন, কিন্তু এক জন সাংসদ কোনও সহনাগরিকের সর্বনাশ করার আহ্বান জানিয়ে জনপ্রিয় হতে চাইছেন, এটা প্রত্যাশিত নয়। মনে হয়, সাংবিধানিক মূল্যবোধ তাপস পালের উপর কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি, তা না হলে তিনি এ রকম কুত্‌সিত ভাবে সংবিধানের অমর্যাদা করতে পারতেন না। এই ধরনের একটা মামলায় আদালত যদি নাগরিকদের স্বার্থ তুলে ধরার এবং বাঁচানোর জন্য প্রভূত মনোযোগ এবং একান্ত হিতাকাঙ্ক্ষা না দেখায়, তা হলে তার সম্পর্কে এই অপবাদের ঝুঁকি থেকে যাবে যে, আদালতও অন্যায়ের অংশীদার হয়ে পড়েছে।

তাপস পালের সৃষ্টিছাড়া আচরণের মধ্য দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার একটা অশুভ প্রবণতা প্রকট হয়ে উঠেছে। এই প্রবণতা যদি অঙ্কুরে বিনাশ করা না যায়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং রাজ্যের পক্ষে তার ফল ভাল হবে না। আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞা জন্ম নেবে এবং তাপস পালের মতো রাজনীতিকদের অনুগামীরা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে উত্‌সাহিত হবে। আইন তৈরি করা যাঁদের কাজ তাঁরা যদি আইন ভাঙতে প্রবৃত্ত হন এবং আইনের শাসন বলবত্‌ করা যাঁদের কাজ তাঁরা যদি সব জেনেশুনেও চোখ বুজে থাকেন, একটা সভ্য দেশ কি সেটা মেনে নিতে পারে? এ বিষয়ে কেউ আদালতে নালিশ জানালে আদালতের কী করা উচিত? সে কি আইনের শাসনের বদলে সুবিধাবাদী নীতি অবলম্বন করে হাত গুটিয়ে থাকবে, না কি, নাগরিকদের মৌলিক এবং অন্যান্য প্রাথমিক অধিকারের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে কোনও দ্বিধার অবকাশ নেই, এবং পক্ষে ও বিপক্ষে সমস্ত যুক্তি তথ্য বিচার করার পরে আমার দৃঢ় অভিমত এই যে, কোনও আদালত হাত গুটিয়ে বসে থেকে নৈরাজ্যকে আইনের শাসন লঙ্ঘন করতে দিতে পারে না।...

হিংসা এবং অপরাধমূলক আচরণ সামাজিক শৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক এবং সভ্য সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শামিল। আইনশৃঙ্খলার প্রহরীরা যথেষ্ট সচেতন নন, কর্তব্য পালনের চেয়ে রাজনৈতিক গুকুম মেনে চলতেই তাঁরা বেশি আগ্রহী। দেশটা কোথায় চলেছে? প্রকাশ কদম বনাম রামপ্রসাদ বিশ্বনাথ গুপ্ত মামলায় (২০১১, ৬ এসসিসি ১৮৯) সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ক্রমবর্ধমান নৈরাজ্যের পিছনে মাত্‌স্যন্যায়ের আশঙ্কা ঘনিয়ে উঠছে (রাজদণ্ড দুষ্টের দমন না করতে পারলে প্রবল দুর্বলকে গ্রাস করে, ঠিক যেমন বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে নেয়)।

সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিধান করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে পুলিশের একটা বড় ভূমিকা আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে পুলিশ সেই ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনীতিকরা লজ্জাকর বক্তৃতার মাধ্যমে অপরাধে উত্‌সাহ দিচ্ছেন, এ রাজ্যে এমন ঘটনা বেড়েছে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থেকেছে। দ্রুত তত্‌পর হতে পুলিশের অনীহা এবং ঔদাসীন্য দেখিয়ে দেয়, পশ্চিমবঙ্গে নৈরাজ্য কোন অতলে পৌঁছেছে। বর্তমান মামলাটিও কোনও ব্যতিক্রম নয়।

তাপস পালের বক্তৃতাটি জঘন্য, সেটি ভব্যতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে, এবং এই মামলা যে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেটাই খুব দুর্ভাগ্যজনক। রাজ্য এবং তার নাগরিকদের বৃহত্তর স্বার্থে প্রশাসনের উচিত ছিল আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে মামলা এড়ানো যায়। সরকার দায়িত্বজ্ঞানহীন অবস্থান না নিলে এত কথা বলার দরকার হত না। আমি আম্তরিক ভাবে আশা করি, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করার প্রয়োজন হবে না।

আদালতের নিজের সীমাবদ্ধতা আছে এবং প্রশাসনকে সমস্ত গ্লানি থেকে মুক্ত করা আদালতের একার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু কাজটা শুরু করা দরকার। এই নির্দেশ অন্তত তাপস পালের মতো রাজনীতিকদের চোখ খুলে দিক, তাঁরা উপলব্ধি করুন যে, যিনি যত উঁচুতেই অধিষ্ঠিত হোন, আইন তাঁরও উপরে, এবং তাঁরা পুলিশকে তাঁদের বশে আনতে পারলেও আদালত সতত সজাগ, পুলিশের বিপুল নিষ্ক্রিয়তা এবং ঔদাসীন্যকে বিচারবিভাগ প্রশ্রয় দেবে না, বিপথগামী রাজনীতিকদের ছেড়ে দেবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

post editorial duties of members of parliament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy