অরুণ জেটলিকে প্রবীণ আর নির্মলা সীতারামনকে নবীন বলিলে উভয়েই আপত্তি করিতে পারেন। অঙ্কের হিসাবে এই দুই জনের বয়সের ফারাক সাত বৎসর। কিন্তু, বয়স কি আর বয়সে হয়? বয়স হয় অভিজ্ঞতায়। সেই হিসাবে দুই জনের তুলনা হয় না। অভিজ্ঞতা মূল্যবান। রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে, মহামূল্যবান। কোন প্রশ্নের উত্তর করিতে নাই, অথবা বহু কথা বলিয়াও কী ভাবে কিছু না বলা যায়, অভিজ্ঞতায় পুষ্ট না হইলে সেই বিবেচনাশক্তি জন্মায় না। তখনই বেফাঁস কথা বলিয়া ফেলিবার আশঙ্কা বাড়ে। যেমন, খুচরা বিপণনে বিদেশি পুঁজির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত প্রশ্নে নির্মলা বলিলেন, তাঁহার নিকট এই ক্ষেত্রে নূতন বিনিয়োগের প্রস্তাব আসিলেই তিনি পত্রপাঠ নাকচ করিয়া দিবেন। নাগপুরের সদর দফতর খুশি হইবে, সন্দেহ নাই। অশোক রোডেও তাঁহার সমর্থনে অনেক হাত উঠিবে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী যে সংস্কারের পথে চলিতে চাহেন, নির্মলার এই উক্তি তাহার পরিপন্থী। বস্তুত, গত এক বৎসরে কেন্দ্রীয় সরকার যে ভঙ্গিতে চলিয়াছে, তাহাতে আঁচ করা চলে, রিটেলে বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে নির্মলার ব্যক্তিগত অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ না হইতেই পারে। অর্থাৎ, নির্মলা যে বলে ব্যাট চালাইয়াছেন, তাহা অফ স্টাম্পের বাহিরে ছিল। কোন দিকে সুইং করিবে, তাহাও অনিশ্চিত। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান বলটি ছাড়িয়া দিতেন। জেটলি যেমন ছাড়িয়াছেন। একই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলিয়াছেন, তেমন প্রস্তাব আসিলে না হয় ভাবা যাইবে। এবং পরমাণু চুক্তির উদাহরণ সহকারে সরকারি নীতির ধারাবাহিকতা বিষয়েও উচ্চাঙ্গের নীতি শিখাইয়া দিয়াছেন।
নির্মলা সীতারামনের যোগ্যতা যথেষ্ট। বিজেপি-র অভ্যন্তরে তাঁহার উত্থানও সেই যোগ্যতারই প্রমাণ। তাঁহার যোগ্যতার স্বীকৃতি হিসাবেই তিনি যে দফতরের স্বাধীন দায়িত্ব পাইয়াছেন, এই মুক্ত অর্থনীতির যুগে তাহার গুরুত্ব অসামান্য। কিন্তু, সেই দায়িত্ব বহনের জন্য তিনি বোধহয় এখনও যথেষ্ট তৈরি নহেন। তাঁহার এক জন যোগ্য অভিভাবক প্রয়োজন। জয়ন্ত সিন্হা যেমন অরুণ জেটলিকে পাইয়াছেন। সেই অভিভাবক না থাকিলে দ্বিবিধ অবিচার হয়। এক, দায়িত্বটি যথাযথ ভাবে পালন করা হয় না। দুই, নির্মলারাও পোক্ত হইয়া উঠিবার জন্য প্রয়োজনীয় আশ্রয়টি পান না, ফলে তাঁহাদের রাজনৈতিক প্রতিভাও যথেষ্ট বিকশিত হইবার সুযোগ পায় না। নরেন্দ্র মোদী লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী বা যশবন্ত সিন্হাদের ন্যায় প্রবীণ নেতাদের বাদ রাখিয়া নবীনতর মন্ত্রিসভা গড়িয়াছেন। তাঁহার অনভিজ্ঞ মন্ত্রীরা যাহাতে তৈরি হইয়া উঠেন, তাহা নিশ্চিত করাও মোদীরই কর্তব্য।
প্রশ্ন শুধু নির্মলা সীতারামনকে লইয়া নহে। স্মৃতি ইরানি বা নিরঞ্জন জ্যোতির ন্যায় অনেকেই অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়াইয়াছেন। মন্ত্রিসভায় সকলের গুরুত্ব সমান নহে। সকলে নির্মলার ন্যায় শিক্ষিত বা পেশাদারি অভিজ্ঞতায় পুষ্টও নহেন। কিন্তু, দেশের ক্ষমতার শীর্ষকেন্দ্রে তাঁহারা প্রত্যেকেই নবীন। গড়িয়া-পিটিয়া লইলে তাঁহাদের অনেকের সামনেই উজ্জ্বল রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রহিয়াছে। এই দায়িত্বটি নরেন্দ্র মোদীকেই লইতে হইবে। অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞ যে সদস্যরা রহিয়াছেন, প্রয়োজনে তাঁহাদের ‘মেন্টর’ রূপে নিয়োগ করুন। প্রয়োজনে পূর্বতন এনডিএ সরকারের অভিজ্ঞ নেতাদের শরণ লউন। তাঁহার সরকারের এক বৎসর হইল। এই একটি বৎসরে সরকার কী পারিয়াছে, কী পারে নাই, তাহার বহু চর্চা হইতেছে। কিন্তু, যাঁহাদের লইয়া সরকার, তাঁহারা এই এক বৎসরে কতখানি শিখিলেন, সেই হিসাবও কষা প্রয়োজন। তাঁহারা অভিজ্ঞ হইলে তবেই তো সরকার গতিশীল হইবে। পরিণতি বয়সের প্রশ্ন নহে, অভিজ্ঞতার প্রশ্ন, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy