ব হুবিধ উপলক্ষে উন্নত রাষ্ট্রের সহিত ভারতের তুলনা অধুনা এক বহুচর্চিত বিষয়। অলিম্পিক ক্রীড়ায় আমাদিগের রেকর্ড কত পিছনে, সেই মর্মে হা-হুতাশ শুনা যাইতেছে। কট্টর দেশপ্রেমিকগণ নিজেদের এই মর্মে প্রবোধ দিতেছেন যে, আর যাহাই হউক, আমেরিকা, চিন কিংবা জাপান তো ক্রিকেট নামক ক্রীড়াটিতে বিশ্বকাপ জিতে নাই। পশ্চিম হইতে কেবল বেশভূষা বা খাদ্যাভ্যাসের শৈলী নকল করিতে যাঁহারা সদা-উন্মুখ, তাঁহারা এমত প্রবোধে স্বস্তি পাইতে পারেন, কিন্তু ইহাতে বাস্তবকে ফাঁকি দিবার প্রবণতা ভিন্ন আর কিছু প্রকট হয় না। কঠিন সত্য এই যে, চিন্তাশক্তিতে আমরা সত্যই পিছনে। সত্যটি আরও এক বার উদ্ভাসিত হইল সাম্প্রতিক এক খবরে।
তিনটি শিম্পাজিকে আলিপুর চিড়িয়াখানা হইতে এক পশু-ব্যবসায়ীকে প্রত্যপর্ণের নির্দেশ দিয়াছে শুল্ক দফতর। খবরে প্রকাশ, ওই ব্যবসায়ী আরও পশুর সহিত ওই তিনটি শিম্পাঞ্জিকেও বেআইনি ভাবে আটক করিয়া রাখিয়াছিল। জানিতে পারিয়া আড়াই বৎসর পূর্বে শুল্ক দফতরের অফিসারেরা উহাদের উদ্ধার করেন, এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদালতের নির্দেশবলে আলিপুর চিড়িয়াখানায় প্রেরণ করেন। কোনও রহস্যে শুল্ক দফতর ওই অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আদালতে আনীত মামলাটি প্রত্যাহার করিয়াছে, এবং চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে শিম্পাঞ্জিত্রয় ব্যবসায়ীর হাতে প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিয়াছে। প্রমোদাকাঙ্ক্ষী দর্শককূলের রীতিমত আকর্ষণের জীবত্রয়কে হারাইবার ভয়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। তাঁহারা শোরগোল তুলিয়াছেন, আলিপুরে মাঠে বিচরণের পরিবর্তে ব্যবসায়ীর গৃহে খাঁচায় বন্দিদশা শিম্পাঞ্জিদিগের উপর অত্যাচারের শামিল। যেন চিড়িয়াখানায় দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকা বন্দিদশা নহে। খাঁচায় বন্দিদশা যে ঘেরা মাঠের বিচরণের অধিকার অপেক্ষা অত্যাচারী আয়োজন, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সম্ভবত এই ব্যাপারে পশ্চিমি— বিশেষত মার্কিন— চিন্তার খোঁজ রাখেন না। রাখিলে জানিতেন একাধিক শিম্পাঞ্জিকে বন্দি রাখার পরিবর্তে এখন অভয়ারণ্যে প্রেরণ করা হইতেছে।
এতদুপলক্ষে সম্মুখে আসিয়াছে এ নূতন বিতর্ক। পশুক্লেশ নিবারণী সমিতিগুলি বন্দি পশুর মুক্তির দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ। বিচারকালে উঠিতেছে ‘পার্সনহুড’ বা ব্যক্তিত্বের প্রশ্ন। শিম্পাঞ্জি কি ব্যক্তি মর্যাদার যোগ্য? ব্যক্তিত্ব কাহাকে বলে? কী কী গুণ থাকিলে কোনও প্রাণী ‘পার্সন’ বা ব্যক্তি গণ্য হইতে পারে? প্রশ্নগুলি বিচার করিতেছেন বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরাও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া শহরে ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন কগনিটিভ সায়েন্স আয়োজিত সম্মেলনে উপরোক্ত প্রশ্নগুলি লইয়া বিশেষজ্ঞদের আলোচনা মূলত যে বিষয়ে আবর্তিত হয় তাহা মানুষের সহিত বিভিন্ন পশুর মানসিক প্রভেদ। পণ্ডিতদের মতে, যে সব লক্ষণে প্রাণিকুলে মনুষ্য বিশেষত্ব দাবি করিয়াছে, সেগুলি হইল নিজস্বতা, যুক্তিক্ষমতা, আত্মীয়তাবোধ, সময়ের বহমানতা সম্পর্কে জ্ঞান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইচ্ছা। পশুদের বুদ্ধিবৃত্তি গবেষণা করিয়া বিজ্ঞানীরা লক্ষ করিয়াছেন শিম্পাঞ্জি তো বটেই, মৎস, পাখি, বানর, ডলফিন, হস্তী প্রভৃতিও ওই সব গুণের অধিকারী। সুতরাং, জীবকুলে মনুষ্যই যে কেবল ব্যক্তিমর্যাদার অধিকারী, সে কথা আর বলা চলে না। হয়তো চিড়িয়াখানাকে পশুপক্ষীর আশ্রয় গণ্য করিবার দিন শেষ হইতেছে। অবশ্য কেহ যদি বলেন, মনুষ্যসংসারও চিড়িয়াখানামাত্র, তাহাও ভাবিবার কথা বটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy