জখম: বিষ্ণুপুর হাসপাতালে বৃষ্টি বাউড়ি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
বাবা-মায়েরা বাড়িতে ছিলেন না। প্রতিদিনের মতোই খেলতে বেরিয়েছিল খুদেরা। রাস্তার ধারে মাটি চাপা পড়ে মৃত্যু হল তাদের তিন জনের। জখম আরও দু’জন। তারা সবাই তুতো-ভাইবোন। পাত্রসায়রের জামকুড়ি পঞ্চায়েতের আখরাশাল গ্রামের এই ঘটনায় উঠছে নানা প্রশ্ন।
দ্বারকেশ্বরের চর ঘেঁষে জামকুড়ি অঞ্চলের বারাবন থেকে আখড়াশাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। পাশেই মেটেপাড়া। দূরত্ব মেরেকেটে ৩০ মিটার। সেখানকার কয়েক জন খুদে গিয়েছিল রাস্তার ধারে খেলতে। গর্তের পাশের মাটি ধসে পড়ে তাদের উপরে। মৃত্যু হয় শিল্পা বাউড়ি (১৩), পূজা বাউড়ি (১০), রিয়া বাউড়ির (৯)। পূজার বছর পাঁচেকের ভাই কৃষ্ণ বাউড়ি আর বৃষ্টি বাউড়ি নামে এলাকার বছর ছয়েকের এক বালিকাও জখম হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শিল্পা স্থানীয় হাইস্কুলে এবং পূজা ও রিয়া স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে পড়ত।
এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস দাবি করেছেন, এলাকার ছেলেমেয়েরা খেলাচ্ছলে মাটির ঢিপিতে গুহার মতো গর্ত করেছিল। তার মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে তবে আইএনটিটিইউসির পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, দিন পনেরো আগে রাস্তার কাজের জন্য ঠিকাদার পাশে গর্ত খুঁড়ে মাটি তুলিয়েছিলেন। সেখানেই খেলতে নেমে চাপা পড়েছে ওই বালক-বালিকারা। তিনি বলেন, ‘‘বাইরে থেকে মাটি আনালে এমনটা হত না।’’ বৃষ্টির বাবা উত্তম বাউড়ি জানান, তিনি বালি তোলার কাজ করেন। বাড়িতে ছেলে মেয়েরা একা একাই খেলাধুলো করে। উত্তমবাবু বলেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন ধরে মাটি কেটে গর্ত করা ছিল। বাচ্চারা খেলার ছলে সেখানে নেমেছে। উপরে পলি মাটি থাকলেও নীচে ছিল বালি। ধসে গিয়ে তারা চাপা পড়ে।’’
খেলার সঙ্গীসাথীদের মধ্যে এক জন ঘটনার সময়ে গর্তের বাইরে ছিল। সে-ই ছুটে গিয়ে খবর দেয়। সঙ্গে সঙ্গে কোদাল আর বেলচা নিয়ে উদ্ধারে নেমে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। উত্তমবাবু বলেন, ‘‘একেবারে উপরে ছিল আমার মেয়ে বৃষ্টি। কোদালের আঘাত ওর মাথায় লাগে। বৃষ্টির নীচেই চাপা ছিল কৃষ্ণ।’’ ওই দু’জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে অন্যদের আর বাঁচানো যায়নি। বৃষ্টি আর কৃষ্ণকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ওই হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক শৈবাল বেরা জানান, বৃষ্টির মাথায় গুরুতর চোট থাকায় তাকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কৃষ্ণ বিষ্ণুপুর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা স্থিতিশীল।
ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গর্তের পাশে পাহারা থাকলে এই ঘটনা এড়ানো যেত। স্থানীয় বাসিন্দা বাপি বাউড়ি বলেন, “ রাস্তা করার জন্য মাটি খুঁড়ে গর্ত করেছিল ঠিকাদার সংস্থা। আর তাতেই জীবন গেল আমাদের ছেলে-মেয়েদের। আমরা দিনমজুরি করে খাই। সকালে বাড়ি ছাড়ি। রাতে ফিরি। ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার কেউ নেই।’’
তবে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু এবং পূর্ত দফতরের ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দিন খান দাবি করেছেন, দুর্ঘটনার খবর তাঁদের কাছে আসেনি। তাঁরা বলেন, ‘‘এমনটা ঘটে থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে।’’
সহ-প্রতিবেদন: তারাশঙ্কর গুপ্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy