মাছ-ভাতের বাঙালির শরীর আর পেট দুই রোগা। মকাই কি রোটি আর সর্ষো কি শাগে পঞ্জাবিরা হাট্টা-গোট্টা। বাঙালির এই দুর্নাম মোছানোর আবহ হল বাংলা নববর্ষ। এই বৈশাখে মনে মনে সঙ্কল্প করুন শুধু খাই খাই করে ক্যালোরি আর্ন নয়— সঙ্গে সঙ্গে বার্নও করতে হবে।
শরীরচর্চার জন্য শুধু নিজের ইচ্ছাশক্তিকে সুইচ অন করুন। জিম নেই, সময় নেই— এ সব নেহাতই অজুহাত। বারাক ওবামার মতো ব্যস্ত মানুষ সময় বের করে ওয়ার্কআউট করতে পারলে আপনিও পারেন।
নতুন বছরে অনেকেই তেড়েফুঁড়ে ওয়ার্ক আউট শুরু করেন। সেই স্পিরিট বছরভর জিইয়ে রাখাটাই আসল চ্যালেঞ্জ। শরীরচর্চার সঙ্কল্পটা হিট হতেই হবে। আপনি তবেই হবেন ফিট। এ জন্য তিনটি বাণী মেনে চলুন।
(১) ছোট ছোট লক্ষ্য বা টার্গেট
যেমন প্রথম মাসে সপ্তাহে তিন দিন করে ওয়ার্ক আউট। প্রতি দিন ৩০ মিনিট। দ্বিতীয় মাসে সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন। এ বার ৪৫ মিনিট করে। সহজ এক্সারসাইজ দিয়ে শুরু করুন। একটা উদাহরণ দিই। ধরুন জোর বাড়ানোর ব্যায়াম করছেন। সহজতম হল পুশ-আপ এবং স্কোয়াট। দু’টি ব্যায়াম সহজ থেকে কঠিনতর করার উপায় এ বার বলি।
পুশ-আপ থেকে শোল্ডার ট্যাপ
পুশ আপ বা প্রচলিত বাংলার ডন দেওয়ার কথা সবার জানা। মেরুদণ্ড একদম টান টান রেখে বুক মাটি স্পর্শ করে উপরে ওঠা হল পুশ-আপ। সপ্তাহ তিনেক বাদে করুন পুশ-আপ আর শোল্ডার ট্যাপ। এ বার পুশ-আপ দিয়ে ওঠার সময় একটা হাত মাটি থেকে তুলে উল্টো কাঁধে স্পর্শ করুন। এক বার ডান কাঁধ, তার পর বাম কাঁধ। মোট বারোটা পুশ-আপ। মোট চারটি সেট করুন। সহজ থেকে কঠিনে গেলে আঘাতের সম্ভাবনা কম আর না পারার হতাশা আসবে না।
স্কোয়াট থেকে সুইং
প্রচলিত বাংলায় বলা হত বৈঠক দেওয়া। স্কোয়াটের কায়দা ঠিক রাখার জন্য একটা চেয়ার টেনে নিন। চেয়ারের উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়ান। হাতে নিন দুই লিটারের জল ভর্তি বোতল। হাঁটু ভেঙে নীচে যান। হিপটা চেয়ার স্পর্শ করলেই উঠে দাঁড়ান।
স্কোয়াটের ভঙ্গি সপ্তাহ তিনেক বাদে রপ্ত হলে হাঁটু ভাজ থেকে সোজা হওয়ার সময়ে জলের বোতলটা ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো সামনে দোলান। একে বলে সুইং। মোট বারো বার করে চার সেট করুন।
(২) ভাবনা হোক একদম বাস্তবসম্মত
জীবনে এক কিলোমিটারও দৌড়োননি। তাই প্রথম সপ্তাহেই ম্যারাথন দৌড়নোর কথা ভাববেন না। দুমদাম যন্ত্রপাতি কিনবেন না। বরং ঘরে থাকা জলভর্তি বোতল, টুল-চেয়ারকে ওয়ার্কআউটের যন্ত্র বানিয়ে ফেলুন। নিজের বডি ওয়েট তো আছেই। আগে মাসখানেক ওয়ার্কআউট চালান। ইচ্ছেশক্তির পারদটা থিতু হলে তবেই ডাম্বেল, বারবেল কিনুন। সলমন-ক্যাটরিনার ফিগার বাদ দিন। আপনি আপনার আন্দাজে কতটা বদলাতে পারেন সেটা ভাবুন। সিক্স প্যাকের মোহে কঠিন এক্সারসাইজ করবেন না। বরং আপনার সাধ্যের মধ্যে পড়ে এমন দু’টি এক্সারসাইজ করুন।
ডেড বাগ
চিৎ হয়ে শুয়ে সাইক্লিং-এর ভঙ্গিতে দুটো পা পর্যায়ক্রমে বুকের দিকে নিন আর সোজা করুন। একই সঙ্গে হাত দুটো পর্যায়ক্রমে মাথার পিছনে আর সামনে নিন। হাত-পায়ের অবস্থান বদলে দু’দিকেই ১২ বার করে করুন। খুব ভাল হয় দু’হাতে দুটো এক লিটারের জলের বোতল নিয়ে করলে। এটা শিক্ষানবীশদের জন্য সহজ আর কার্যকরী পেটের ব্যায়াম।
ওয়াইপার
চিৎ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন। একটা বালিশ দুটো হাঁটুর মাঝে চেপে ধরুন। হাঁটু দুটো ভাঁজ করে রাখুন। এ বার গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের কাটার মতো হাঁটুজোড়া কোমর বরাবর মাটির দিকে পর্যায়ক্রমে ডান আর বাম দিকে নামান এবং ওঠান। দু’ দিকেই মোট বারো বার করে। পেটের পাশাপাশি পেশিকে টানটান করার খাসা ব্যায়াম। এ রকম ব্যায়াম বাছলে পেটটা টানটান হবার অনুভূতি আসবে সঙ্গে সহজেই করতে পারছেন ভেবে অনুপ্রাণিত হবেন।
(৩) ওয়ার্কআউটে বৈচিত্র আনুন
মানুষের জীবনের সর্বক্ষেত্রেই বৈচিত্র চাই। রোজ হাঁটা বা জগিং-এর একঘেয়েমিতে ভুগবেন না। এর বদলে কার্ডিও ওয়ার্কআউট করার কথা ভাবতে পারেন।
মাউন্টেন ক্লাইম্বার
পুশ-আপের ঠিক শুরুর অবস্থায় শরীরটা ধরে রাখুন। মানে বুকটা উপরেই থাকবে। এ বারে পাহাড়ে চড়ার ভঙ্গিতে দুটো পা পর্যায়ক্রমে বুকের দিকে আনুন আর সোজা করে পায়ের দিকে নিন। দু’পায়ে মোট ২০-৩০ বার করে। এখানে হাঁটা জগিং-এর থেকে বেশি ক্যালোরি ঝরছে আবার ওয়ার্কআউটে নতুনত্ব আছে। দু’মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তিন থেকে পাঁচ বার রিপিট করতে পারেন।
বোতল নিয়ে জাম্পিং জ্যাক
দু’হাতে দুটো এক লিটারের জলভর্তি বোতল নিয়ে অল্প লাফিয়ে পা দুটো ফুটখানেক ফাঁক করুন। সঙ্গে সঙ্গে দু’হাত মাথার উপর তুলুন। দ্রুত পা জোড়া করে শুরুর অবস্থায় ফিরুন। মোটামুটি একটা গতিতে এটা ৩০-৪০ বার করুন। দু’মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তিন থেকে পাঁচ বার রিপিট করুন। হাঁটা বা জগিংটাও ভাল লাগবে। যদি মাঝে মাঝে হাঁটার রাস্তা বা জগিং-এর পার্ক বদল করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy