সে এক সময় ছিল যখন বড়দিনের কেক মানেই ছিল কাজু আর কিশমিশে ভর্তি সান্তার ছবি দেওয়া বাক্সে মোড়ানো একটা নরম-শক্ত ব্যাপার। বড় বড় সব স্টেশনের আশপাশে বসত মেক শিফ্ট দোকান। বছরের এই ক’টা দিন বাদে দেখা মিলত না তাদের। তার পরে অনেকটা পথ হেঁটেছে বাঙালি মধ্যবিত্ত। নিউ মার্কেটের বিশেষ দোকানের প্লেন কেক, বো বারাকের প্লাম কেক, এ পাড়া-সে পাড়ার গজিয়ে ওঠা অনামী বেকারির ময়দার মণ্ড, নামী বেকিং চেনের ডান্ডি, পাঁচ তারার মাফিন, আরও কত কী। সেই জমানা পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকেছে ইলেকট্রিক চালিত কেক-আভেন। কখনও ময়দা বেশি তো কখনও ধৈর্য কম। মাঝেমধ্যে সাকসেসফুলও বটে। এত সব কাণ্ড করে তবে হাতে এসেছে মাক্রোওয়েভ। ইন্টারনেটও। দু’টিতেই সড়গড় হয়ে উঠতে সময় পেরিয়েছে আরও প্রায় এক দশক।
এখন কিন্তু পাড়ার মোড়ের দোকানেও কোকো পাউডার থাকে, থাকে বেকিং ট্রে। রাখতে বাধ্য যে তারা, না হলে বড় ডিপার্টমেন্টাল চেনগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেবে কী ভাবে! মধ্যবিত্ত এখন বাড়িতে কেক বানায়, ক্রিসমাস কেকও। সেইটাই ফ্যাশন। বাড়িতে অতিথি এলে সানন্দে শাশুড়িমা পুত্রবধূর হাতে তৈরি কেক দেন চায়ের সঙ্গে। তা এখন যে অতি সহজেই খেতে হয় দোকানের মতো। গত শতকের আটের দশক ছিল এক্কেবারে উল্টো। বাড়িতে মহিলারা রান্না করলেও অনেকেই নিজেকে ‘রান্না পারি না ’ বলে আধুনিক প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন। তার পরে রান্নায় হাত পাকালো ছেলেরাও। কী করবে, কাউকে যে রাঁধতে হবে, নইলে খাবেন কী? ব্যাস, ছেলেরা পারলে মহিলাদের আবার নিজেদের প্রমাণ করার পালা। এখন ‘হোমমেড স্টাফ’ হই হই করে বিকোয়। তা সে পটলের তরকারিই হোক না কেন! কুকিং এবং বেকিং এখন ইন থিং। পুরুষে করলে তো কথাই নেই, এমনকী মহিলারা করলেও কম কদর পান না। সে হেন সময়ে বড়দিনের কেক কেনার হিড়িক যতই থাকুক না কেন বাজারে বাজারে, নিজের কেক নিজে বানিয়ে ফেলা কিন্তু একটা স্টেটমেন্টও বটে।
বাড়িতে ক্রিসমাস পালন করতে আসা বন্ধুদের ওয়াইনের সঙ্গে পরিবেশন করুন হাতে বানানো কয়েক রকম কেক ও কুকিজ। মাইক্রোওয়েভের সৌজন্য সাকুল্যে ব্যায় হবে বড়জোর আধঘণ্টা। কয়েকটা জিনিস শুধু অফিস থেকে ফেরার পথে কিনে আনলেই হল। রেসিপি তো রয়েইছে ইন্টারনেটের ছত্রে ছত্রে। বেকিং টাইম ৫ মিনিট, আর বাকি ব্যবস্থাপনা আরও মিনিট পনেরো। হাতের কাছে যা থাকে, চকোলেট চিপস্জ় হোক বা কাজু-কিশমিশ-আমন্ড, মিশিয়ে নিন ময়দা, ডিম, চিনির ব্যাটারের সঙ্গে। রাম কেক থেকে প্লাম কেক সবই এখন হাতের মুঠোয়। এই বড়দিনে পছন্দ মতো বেছে নিন শুধু নিজের স্টেটমেন্টটা!
ছবি সৌজল্যে: সুচন্দ্রা ঘটক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy