অন্য পৃথিবী: চিত্রকূট গ্যালারিতে প্রদর্শিত ক্ষিতীশ বিশালের ছবি
পরিবেশই তৈরি করে জীবনধারণের রীতিনীতি। ক্রমে আসে বিশ্বাস অবিশ্বাস, নানা সংস্কার তৈরি হয়। তদনুযায়ী দেবদেবী কল্পকাহিনি, বারব্রত। যা ক্রমশ একটি স্থায়ী সংস্কৃতির রূপ পরিগ্রহ করে। সুন্দরবন এ রকমই এক জায়গা, এক অন্য পৃথিবী। জল-জঙ্গল, বাঘ-বাদাবন, বনবিবি-দক্ষিণরায় এখানকার মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে। চিত্রকূট আর্ট গ্যালারিতে এ রকমই কিছু পেন্টিং-এর প্রদর্শনী করলেন শিল্পী ক্ষিতীশ বিশাল। তিনি তৈরি হয়েছেন সুন্দরবনের পরিবেশে। শিল্পীর সত্তায় মিশে আছে সুন্দরবনের প্রকৃতি, সেখানকার জীবন। শিরোনাম ‘বাদাবনের কিছু কথা’। সুন্দরবন নিয়েই তাঁর চিত্রচর্চা, প্রত্নবস্তু সংগ্রহ, ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা তৈরি, বিভিন্ন ভাবে শিল্পচর্চার প্রসারতা বৃদ্ধি। যা নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন অনেক বছর ধরে। তাঁর ছবির বিষয়বস্তু ভাবনাকেন্দ্রিক। সেখানে জল-জঙ্গল-জন-জমি-জানোয়ার সব মিলেমিশে উপস্থিত হয়েছে। বক্তব্য সহজ ভাবে সরাসরি এনেছেন। উল্লেখযোগ্য একটি কাজ—দক্ষিণরায় ও পীর গাজী পয়গম্বর একই শরীরে দ্বৈত প্রকাশ। দেবতাসুলভ চার হাতের দু’হাতে ধরা গীতা এবং কোরান। স্থানীয় লোককাহিনিতে এই মূর্তি ধর্মীয় সমন্বয়ের প্রতীক। ছবির পশ্চাৎপটের ডিম্বাকৃতি হালকা আলোর ব্যবহার সামনের ইমেজে দৈবী মহিমা এনে দিয়েছে। অন্য একটি ক্যানভাস—অস্পষ্ট নীলচে চাঁদের আলোয় জলের উপরে দাঁড়ানো বিশাল আকৃতির মহিষ, পিঠের উপরে বংশীবাদক বালক। নিস্তব্ধ প্রায়ান্ধকার রাত্রে যেন এক আদিম প্রাণী দর্শকের মুখোমুখি। মধুসংগ্রহকারীরা প্রায়শই বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারান। তাই যেন মধুর বদলে মৌচাক থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। জীবিকার পিছনেই আসলে মৃত্যু দাঁড়িয়ে।
অন্য একটি ছবিতে চিত্রপটের মাঝখানে রক্তাক্ত থাবা, পাশে বিপদ সংকেত লাল নিশান। উপরে একটি ক্রূর ব্যাঘ্রমুখ, নীচে একটু জল। সংকেতধর্মী চিত্র। চতুর মৃত্যুদূতের কাছে মানুষ অসহায়। জীবনমৃত্যুর খেলায় বনবিবি দক্ষিণরায়কে জিতিয়ে দেন। শিল্পীর ছবিগুলিতে বক্তব্যই প্রথম এবং শেষ কথা। কিন্তু অবয়বধর্মী ছবিতে রং ডাইমেনশন তৈরি করে। আলোছায়ার ওঠাপড়া এবং বর্ণবিন্যাস একটু প্রধান্য পেলে ভাল হত। অন্যান্য চার-পাঁচটি কাজে পরীক্ষামূলক করণকৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে।
শমিতা নাগ
শিল্পীর উপাসনা
জ্ঞান মঞ্চে মাভৈ নিবেদন করল পাউলো কোয়েলহস নিবেদিত ‘দ্য স্পাই’। বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী মারগারেটা। তাঁকেই ‘মাতাহারি’ বলে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। নানা ভাবে অত্যাচারিত হয়েও যে সুন্দর ভাবে বাঁচার লড়াই করেছে নাটক ও নৃত্য দিয়ে, ‘মাতা’র উপাসনায়। মাতার চরিত্রে নৃত্যশিল্পী তাঁর নিখুঁত অভিনয়ে দর্শকের মন জয় করেছেন। পরিকল্পনা, পরিচালনায় কৌশানি কুণ্ডু। আবহসঙ্গীত প্রদ্যোত মজুমদার। সঙ্গীতে সুছন্দা ঘোষ, মৌসুমী ও প্রিয়ঙ্কর। আলোকসম্পাতে উত্তীয় জানা। প্রত্যেকে তাঁদের নিজ নিজ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন প্রিয়ঙ্কর মজুমদার। মাভৈ-এর প্রয়াস ‘মাতাহারি’ আমাদেরই এক মায়ের গল্প, এক শিল্পীর গল্পকে প্রাধান্য দিয়েছে চিত্রনাট্যে।
পলি গুহ
ফিরে দেখা
সম্প্রতি শিশির মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল মনোময় ভট্টাচার্যের একক গানের আসর ‘আবার ফিরে দেখা’। এ দিন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে দীক্ষিত এই শিল্পী তাঁর নির্বাচিত বেশ কিছু গান শোনালেন শ্রোতাদের। অনুষ্ঠান শুরু করলেন ‘সৃজন ছন্দে আনন্দে’ গানটি দিয়ে। একের পর এক রাগাশ্রয়ী গানে শিল্পী সহজেই মন জয় করে নিলেন উপস্থিত শ্রোতাদের। ঠিক যেন সুরের মায়াজালে বেঁধে রাখা গান। তাঁর প্রতিটি গান অনবদ্য হলেও ‘সহসা কি গোল’, ‘জয় ব্রহ্ম বিদ্যাশিব’ বিশেষ ভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। শিল্পী সময়ের ব্যবধান বজায় রেখেই তাঁর একক গানের ডালি নিয়ে হাজির হয়ে থাকেন। এই অনুষ্ঠানও ব্যতিক্রম নয়। ফলে শ্রোতাদের প্রত্যাশা শিল্পীর জানা। অনুষ্ঠান শেষ করলেন অনবদ্য গান শুনিয়ে ‘মোর ঘুমঘোরে’। অপূর্ব গায়কি। এ দিন সহশিল্পীরা ছিলেন সরোদে দেবজ্যোতি বসু, তবলায় শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
কাশীনাথ রায়
অনুষ্ঠান
• জীবনানন্দ সভাঘরে সম্প্রতি গোল্ডেন ভয়েজ আয়োজন করেছিল ‘মনজ্যোৎস্নায় ভেসে’ শীর্ষক কবিতা ও পাঠের অনুষ্ঠান। শিল্পীরা ছিলেন সুকুমার ঘোষ, মম দে। চাঁদের রোমান্টিকতায় মন ভেসে যায় বিভিন্ন নির্বাচিত কবিতায়।
• সম্প্রতি আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হল ‘কলকাতার গান’ শীর্ষক একটি সুন্দর অনুষ্ঠান। শিল্পী ছিলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী। তিনি অনেকগুলি পুরাতনী বাংলা গান শোনালেন, যা শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। তাঁর কণ্ঠে ‘কাদের কুলের বউ গো তুমি’ গানটি এ দিনের সেরা প্রাপ্তি।
• সম্প্রতি শিশিরমঞ্চে আরতি মুখোপাধ্যায়, অনুপ জালোটা, সৈকত মিত্র, রূপঙ্কর ও দীপশ্রী সিংহের গানের সংকলন প্রকাশ উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। গান শোনালেন জোজো, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, দীপশ্রী সিংহ, বৃষকেতু বাউল ও তাঁর সম্প্রদায়-সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন তাপস রায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy