নিসর্গ: অ্যাকাডেমিতে প্রদর্শিত কাকলি দে’র একটি ছবি
কাকলি দে তাঁর ৭১টি আলোকচিত্র নিয়ে যে তৃতীয় একক প্রদর্শনী করলেন অ্যাকাডেমিতে, তার শিরোনাম ছিল ‘পার্ট স্টোরিজ’। তাঁর ছবি স্বাভাবিকতাবাদী এবং বাস্তবানুগ। অনেক সময়ই বাস্তবের ভিতর কোনও আখ্যান জড়িয়ে থাকতে পারে। আখ্যান নির্মাণ করে নেওয়ার সুযোগও থাকে। দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখ করা যায় দুই প্রখ্যাত আলোকচিত্রীর কথা—দীনদয়াল ও সুনীল জানা। দীনদয়াল ভারতীয় আলোকচিত্রের প্রথম দিকের পথিকৃৎ। তাঁর ছবি ছিল স্বাভাবিকতাবাদী। কিন্তু তাঁর আখ্যানে ছিল প্রধানত সম্ভ্রান্ত জীবনের অভিক্ষেপ। আর সুনীল জানার বাস্তববাদী আখ্যানের চরিত্র ছিল প্রতিবাদী।
কাকলি এই সময়ে জীবন ও প্রকৃতির বৈচিত্রকে ধরতে চেষ্টা করছেন সৌন্দর্য ও পূর্ণতার দৃষ্টিকোণ থেকে। পরবর্তী কালে আলোকচিত্র যত চিত্রকলা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে ততই বাস্তবের অন্তর্লীন সত্যকে ধরতে তা অবয়বকে বিশ্লিষ্ট বা বিমূর্তায়িত করতে চেয়েছে। আজকের আলোকচিত্রের একটি বড় অংশে এই প্রবণতা দেখা যায়। এর প্রধান উদ্দেশ্য আলোকচিত্রকে শিল্পিত করার প্রয়াস। রঘু রাই-এর ছবির কথা প্রথমেই স্মরণে আসে।
কাকলি এই পথটি অনুসরণ করেছেন। এবং সফল হয়েছেন বিন্যাসের সৌকর্যের গুণে। নানা বিষয় নিয়ে তিনি ছবি তুলেছেন। যেমন প্রাকৃতিক দৃশ্য, শহরের নিসর্গ, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, প্রকৃতিতে জীবনের সহাবস্থান, নদীর দৃশ্য ইত্যাদি। মুখাবয়বগুলির মধ্য দিয়ে তিনি জীবনের নানা বৈচিত্রকে ধরেছেন। ‘শেডস অব গ্রিন’ নামে একটি পাহাড়ি নিসর্গ আছে। এক দিকে পাহাড়ের ঢাল। নীচে বাড়িঘর। তার পর বিস্তীর্ণ উপত্যকা জুড়ে ফসলের খেত। একটি বৌদ্ধমন্দিরের সামনে অজস্র পায়রা ভিড় করে আছে। হাওড়া ব্রিজ দেখা যাচ্ছে দূর থেকে। তলায় প্রবাহিত গঙ্গা। পাশে অজস্র কাকের জটলা। ভিক্টোরিয়ার ছায়া পড়েছে সম্মুখবর্তী জলাশয়ে। আকাশে মেঘ। জলে তার ছায়া। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে তাজমহল। পাশে যমুনা। দিগন্তব্যাপ্ত নির্জনতায় স্মৃতিচিহ্ন স্তব্ধ হয়ে আছে। ছায়ায় ঘেরা আলোতে হেঁটে যাচ্ছে উটের সারি। এই ভাবে শিল্পী দৃশ্যের ভিতর গল্প বলেন।
মিলে গেল শতকণ্ঠ
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে মেঘমল্লার আয়োজন করেছিল এক সুন্দর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল কাজল সুর ও মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় শতাধিক শিল্পীর গান-পাঠ ও নৃত্য। সম্মেলক গানে অনুষ্ঠানের শুরু। কাজল সুরের পরিচালনায় বিভূতিভূষণের রচনাসমৃদ্ধ ভাষ্য-সহ দুটি সম্মেলক আবৃত্তি এ দিনের বড় প্রাপ্তি। পরে শীলা দাসের পরিচালনায় ‘কিন্নর দল’ শ্রুতিনাটক এবং রাজদীপ ভট্টাচার্যের কবিতার কোলাজ ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ সু-পরিবেশিত। অনুষ্ঠান শেষে ছিল নাটক ‘ময়ূরাক্ষী’।
নানা রূপে
সম্প্রতি ‘নন্দিনী’ আয়োজন করেছিল ‘নানা রূপে রবীন্দ্রনাথ’। এর মধ্যে নজর কেড়েছে ‘সামান্য ক্ষতি’ ও ‘নানা আঙ্গিকে রবীন্দ্রনাথ’। গানে ছিলেন শ্রাবণী নাগ, পাঠে ইনা বাগচি।
এ ছাড়াও ছিলেন শৌভিক মজুমদার, স্বাতী বণিক। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কয়েক জন নবীন শিল্পীর গান মন্দ নয়।
অন্যায় স্বীকারোক্তির বাসনা
পিয়ালী দাস
সত্য মিথ্যেয় ঘেরা মানব জীবন। এ নিয়েই পথ চলা। কিন্তু জীবনের একটা পর্বে আসে মানুষের আত্মোপলব্ধি, অন্যায়ের স্বীকারোক্তির বাসনা। জীবনের ভুলক্রুটিগুলোকে শুধরে পথ চলার ইচ্ছে। এই চলার পথে যদি নিজের আত্মীয় পরিজনদের জীবনে অজান্তে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে? ঠিক এমন ঘটনারই সাক্ষী মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের ‘গুহাচিত্র’ নাটকটি। রঙ্গলোক এর প্রযোজনায় এবং শ্যামল চক্রর্তীর নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হল নাটকটি।
একটা ছোট হার্ট অ্যাটাকের পর অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক করণিক অক্ষয়বাবুর জীবনদর্শনটাই বদলে গেল। হৃদয়ের গোপন প্রকোষ্ঠে লুকিয়ে রাখা চরম মিথ্যেগুলো তাঁকে কুরেকুরে খাচ্ছিল। ঘটনাচক্রে রাস্তা পার হওয়ার সময় তিনি এক তরুণীকে বাঁচান। এর পর এই মেয়েটি এবং তার সমাজবিরোধী স্বামী ভোলার সঙ্গে এক নিবিড় সখ্যে মেতে ওঠেন অক্ষয়বাবু। ভোলাও চায় অসামাজিক কাজ ছেড়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে। অক্ষয়বাবুও জীবনের লুকিয়ে রাখা চরম সত্যকে প্রকাশ করে আত্মশুদ্ধির পথ বেছে নিতে চান। সেই সত্য প্রকাশ করতেই সুখের সংসার ছিন্নভিন্ন হওয়ার উপক্রম। মেয়ের স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হয়। ঘটতে থাকে আরও অনেক কিছু। নাটকে ব্যবহৃত রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং নাচের কোরিওগ্রাফি প্রশংসনীয়। তনুর চরিত্রে মন ছুঁয়ে যান সোনালি চট্টোপাধ্যায়। অক্ষয়বাবুর চরিত্রে সেরাটা দিয়েছেন শ্যামল সরকার, ছেলে পুলুর চরিত্রে কিঞ্জল নন্দ যথাযথ। এ ছাড়া প্রবীর চক্রবর্তী, অচিন্ত্য কুমারমুখোপাধ্যায় প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy