Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
book review

অভিজ্ঞতার চিহ্ন, অতিক্রমী চেতনা

অনিতা অগ্নিহোত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা-য় চন্দন গাছ, বৃষ্টি আসবে, কৃতাঞ্জলি মেঘ থেকে আয়না মাতৃসমা পর্যন্ত কাব্যগ্রন্থ থেকে নির্বাচিত কবিতা এখানে সঙ্কলিত, আছে অগ্রন্থিত কবিতাও।

সৃজিতা সান্যাল
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪৯
Share: Save:

কবিতা সংগ্রহ
কবিতা সিংহ
সম্পা: সুমিতকুমার বড়ুয়া
২৯৯.০০

নারী-অভিজ্ঞতার নির্যাস নারীর লেখায় মাত্রা যোগ করে কি না, প্রশ্ন তোলেন এলেন শোওয়াল্টার, টুয়ার্ডস আ ফেমিনিস্ট পোয়েটিক্স বইতে। এর এক দশক আগে, মেয়েদের যেমন অভিজ্ঞতা হয়, কবিতায় তা ব্যবহার করতে ভালবাসেন বলে জানান কবিতা সিংহ। আধুনিক বাংলা কবিতার জগতে মেয়েদের নিশ্চিত পদপাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন তিনি। নারী-পুরুষ পার্থক্যে বিশ্বাস না করলেও লেখার পর নিজের সৃষ্টিতে ‘বেশ মহিলা প্রবণতা’ চোখে পড়ে তাঁর। কবির কলমে আবহমান নারী-পরম্পরা ধারণের প্রবণতা আংশিক ভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল শ্রেষ্ঠ কবিতা। পূর্ণতর রূপ দিল কবিতা সংগ্রহ।

শ্রেষ্ঠ কবিতা
অনিতা অগ্নিহোত্রী
২৬০.০০
দে’জ

এই প্রথম খণ্ডে সহজ সুন্দরী, কবিতা পরমেশ্বরী, হরিণা বৈরী ও কবি সারদা কাব্যগ্রন্থ স্থান পেয়েছে। শ্রেষ্ঠ কবিতা-র ‘ঈশ্বরকে ইভ’, ‘গর্জন সত্তর’, ‘আন্তিগোনে’-র মতো পরিচিত কবিতা ছাড়াও আলাপ হবে স্বল্পপরিচিত, দৃপ্তভঙ্গিমার কবিতার সঙ্গে। ‘সমর্পণ’ কবিতায় নারীজাতির প্রতিনিধিরূপে বলেন: “ভালোবাসা আমাদের অযোনিজ প্রথম সন্তান।” পুরুষকেন্দ্রিক সমাজের প্রতি অবরুদ্ধ ক্রোধ থেকে তিনি লিখেছিলেন: “না আমি হব না মোম/ আমাকে জ্বালিয়ে ঘরে তুমি লিখবে না।” সেই অভিমানই লেখায়: “কার সঙ্গে কথা বলো? আমি তো কবেই চলে গেছি!/ যে ভাবে নারীরা যায় শব্দহীন চালচিত্র ছিঁড়ে”। নারী যখন নারীর কথা বলেন, তখন কি তাতে অতিরিক্ত কোনও জোর থাকে? শক্তি চট্টোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়ে লেখা কবিতা স্থান পেয়েছে; ‘স্বয়ংক্রিয়’ কবিতায় সায়েন্স-ফ্যান্টাসিকেও কাব্যের বিষয় করেছেন। প্রতিটি কাব্যগ্রন্থের স্বতন্ত্র মেজাজ স্পষ্ট করেছে সূচনায় সন্নিবিষ্ট প্রচ্ছদগুলি। কবি সারদা এই সঙ্কলনের প্রাপ্তি। মুখের কথার আটপৌরে ভঙ্গিমা থেকে কবিতাজন্মের প্রক্রিয়াটি শুধু রামকৃষ্ণ-সারদা-বিবেকানন্দের জীবনবৃত্তে আগ্রহী পাঠক নয়, সাধারণ কবিতা পাঠকের মনেও বিস্ময় জাগাবে।

অনিতা অগ্নিহোত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা-য় চন্দন গাছ, বৃষ্টি আসবে, কৃতাঞ্জলি মেঘ থেকে আয়না মাতৃসমা পর্যন্ত কাব্যগ্রন্থ থেকে নির্বাচিত কবিতা এখানে সঙ্কলিত, আছে অগ্রন্থিত কবিতাও। কিছু কবিতায় নারী-অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য পাওয়া যায়। পুরুষ পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর স্বপ্ন সত্যি হয়নি নিম্নবিত্ত মায়েদের জীবনে, ‘মা যাচ্ছে’ বা ‘বাসন্তীর পথে’ কবিতায় তা ডানা মেলতে চায় সন্তানের বড় হয়ে ওঠার প্রতীক্ষায়। ‘সন্তানকে’ কবিতায় উন্মোচিত মায়ের মনস্তত্ত্ব— “তোমাকে আমি বলি না, কত হত্যাকারী মুক্ত/ ত্রিশ জন অনাথ শিশু, দশটা রোজ জন্মায়”। শব্দচয়নে, শিরোনামে জীবনানন্দ-প্রীতির ছাপ। “...যবের ধূসর ক্ষেতে দাঁড়িয়ে/ডেকেছি— ‘ফিরে এসো!’ জ্যোৎস্নারাতে টিট্টিভ জাগেনি।”— উচ্চারণের ক্লাসিক সৌন্দর্য পাঠককে মুগ্ধ করে। প্রতিবাদী কবিতাতে তিনি অর্জন করেছেন অমোঘ ঈশিত্ব। ‘সিঁড়ি’ কবিতায় ‘অবনত ভূমি প্রিয় সব মানুষের’ বা ‘রায়’ কবিতায় ‘মহামান্য আদালত, এখন এজলাস কী ফাঁকা, রক্ত পড়লে শব্দ হয়’-এর মতো পঙ্‌ক্তি স্মরণযোগ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

book review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy