বিখ্যাত মেক্সিকান চলচ্চিত্র নির্দেশক আলজ্যানদ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু-র দ্বিতীয় কাহিনিচিত্র টোয়েন্টি ওয়ানস গ্রামস, তারই বাংলা রূপান্তর ২১ গ্রাম। নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। নৈহাটি ব্রাত্যজনের নতুন প্রযোজনা। এ নাটকে নির্দিষ্ট কোনও গল্প নেই। বরং বলা যায় তিনটি কাহিনিসূত্র, কিছু মানুষ, তাদের চাওয়া পাওয়া, প্রেম ভালবাসা, হতাশা। তার সঙ্গে বয়ে চলা ঘটনাপ্রবাহ একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। বর্তমান থেকে অতীতে, আবার অতীত থেকে বর্তমানে। আর অবিরাম সকলের হৃদয়ে স্পন্দিত হয়ে চলে লাব-ডুব ছন্দ, যা নাকি প্রাণের অস্তিত্ব। মানুষ মারা গেলে তার ওজন কমে যায় নাকি মাত্র ২১ গ্রাম। তবে ওটাই কি জীবনের বা আত্মার মাপ! চরিত্রগুলির মাধ্যমে কাহিনির মধ্যে আবছা গড়ে উঠতে থাকে সম্পর্কের এক বিন্যাস।
জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত তমোনাশ, আর তার স্ত্রী সুচরিতা শুধু মা হতে চায়। একদা অসামাজিক কাজে যুক্ত জ্যাকি, এখন যে পরম আস্তিক, তারই হাতে দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় দুই সন্তান-সহ সমরেশের। আর সমরেশের স্ত্রী মৃত্তিকা চায় নিজেকে ধ্বংস করতে। সমরেশের হৃৎপিণ্ড বসে তমোনাশের শরীরে। তবে কি মৃত্তিকার কাছে তমোনাশ সমরেশের প্রতিরূপ? চরিত্রগুলি মিশে যায়, সময় আবর্তিত হয়, আর জীবন বেজে চলে তার নিজস্ব ছন্দে। এ নাটক দেখার অভিজ্ঞতা একেবারে অন্য। নাটকের নিভাঁজ বুনোট থেকে এর চলন কিছুটা বুঝি চলচ্চিত্রের কাছাকাছি। নির্দিষ্ট ছকে না চলে ঘটনার গতি আগে পরে মিশে যায়। বুদ্ধিদীপ্ত মঞ্চ নির্মিতিতে (দেবাশিস দত্ত) তিনটি স্থানিক বিভাজন, তিনটি কাহিনিসূত্রের ইঙ্গিতে। আবার চরিত্রের মিশে যাওয়ার মতো স্থান বিভাজনও কখনও ভুলে যেতে হয়। ধ্বনি, আলো, মিউজিক, সংলাপ, কোরিওগ্রাফি সব মিলিয়ে কাল, সময়, অনুভব, সম্পর্ক সব মিশে যায়। যাই ঘটুক, বেঁচে যায় জীবন। যার মাপ হয়তো বা ওই একুশ গ্রাম। শুরুতে নাটকের সুরটি ধরতে হয়তো একটু সময় লাগে। তার পর দর্শকও ক্রমে আবিষ্ট হয়ে যান। নির্দেশক ব্রাত্য বসুর পুরোপুরি সাফল্য সেখানেই।
বিদেশি এই কাহিনিসূত্র এবং তার চলার ছন্দকে বাংলা থিয়েটারে এনে মঞ্চস্থ করা খুব সহজ কাজ ছিল না। নির্দেশক ব্রাত্য শক্ত হাতে সেই দায়িত্ব সামলেছেন। কোথাও গতি শ্লথ হয়নি। শিল্পীদের দিয়ে সেরা অভিনয় করিয়ে নিয়েছেন। পৌলমী বসুর অসাধারণ অভিনয় তো ছিলই, এ ছাড়াও অর্ণ মুখোপাধ্যায়, দ্যুতি হালদার, সুমিত রায়, লোকনাথ দে ও পার্থ ভৌমিকের অভিনয় মনে রাখার মতো। দুই শিশুশিল্পীর অভিনয় ভবিষ্যতের আলো দেখায়। অভিনয়ে উল্লেখ করতে হয় প্রান্তিক, অরিত্র, রক্তিম, পার্থদের কথাও।
সবাই মিলে গাইছি যখন
কল্যাণ গুহ-র পরিচালনায় সম্প্রতি অরবিন্দভবনে অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ ও রজনীকান্তের গান নিয়ে অনুষ্ঠান ‘আঁখিজল মুছাইলে’।
অনুষ্ঠান শুরু হয় ইন্দ্রদীপ দাস ও মল্লিকা সাহার ‘রাখো রাখো রে জীবনবল্লভে’ গান দিয়ে। শুক্লা সেনগুপ্ত ও সুপ্রিয়া চক্রবর্তী শোনালেন রজনীকান্তের গান ‘ওরা চাহিতে জানে না দয়াময়’। ‘জীবনদেবতা’ থেকে পাঠ করলেন সৌমিত্রা দাস। পরে গানের অনুষ্ঠানে গাইলেন সীমা দে, কাকলি বন্দ্যোপাধ্যায়। তন্ময় মুখোপাধ্যায় শোনালেন ‘আঁখিজল মুছাইলে জননী’, দর্পনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচনে ছিল ‘শূন্য হাতে ফিরি হে নাথ’।
নূপুরছন্দা ঘোষের পরিচালনায় সমবেত সঙ্গীতে ছিলেন সংস্থার ছাত্রীরা। সবার পরিবেশনেই পরিমিতি বোধের ছাপ ছিল স্পষ্ট। পরে পুবালী দেবনাথ ও সুমিতা দাসের পৃথক পরিচালনায় সমবেত-সঙ্গীত ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না’ শোনালেন তাঁদের সংস্থার শিল্পীরা।
এ ছাড়াও কৌশিক দে’র পরিচালনায় ব্রহ্মসঙ্গীত শিক্ষালয়ের ছাত্রীরা শোনালেন ‘অগ্নিবীণা বাজাও তুমি’ গানটি। যা শুনতে মন্দ লাগেনি।
যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন রানা দত্ত, অঞ্জন বসু, মলয়কান্তি দাস ও পঞ্চানন বড়াল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy