ছয় তারের তানপুরা
চন্দ্রা চক্রবর্তী
২৭৫.০০
বৈ-চিত্র
পণ্ডিত এ কানন আর বিদুষী মালবিকা কানন। এক সময় এই শহরের গানের দুনিয়ার অনেকখানি জুড়ে ছিলেন এই দম্পতি। কী আশ্চর্য, কলকাতা অনেকখানি বিস্মৃত হয়েছে তাঁদের। লেখিকা চন্দ্রা চক্রবর্তী একই সঙ্গে দু’জনেরই ছাত্রী। জানিয়েছেন, নিঃসন্তান কানন-দম্পতির কাছে কন্যাসম হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর স্মৃতিতে যেমন ভাবে ধরা পড়েছেন এই দুই শিল্পী, বইয়ে মূলত সেই ছবিই ফুটে উঠেছে। এক দিকে মাটির মানুষ কানন, কে তাঁকে ঠকিয়ে নিচ্ছে সে বিষয়ে হুঁশহীন; অন্য দিকে স্বভাবগম্ভীর মালবিকা, যিনি নিজের স্কেলে ছাড়া গান শেখাতে নারাজ, এবং তাঁদের দাম্পত্যের চড়াই-উতরাই যেমন আছে এই বইয়ে, তেমনই আছে গুরু হিসাবে তাঁদের চরিত্রগত ফারাকের হরেক গল্প। এই বই আসলে একটা জায়গার কথা বলে, যেটা কলকাতার মধ্যে থেকেও নেই; একটা সময়ের কথা বলে, গত শতকের আশি-নব্বইয়ের দশক হয়েও যা আসলে আমাদের পরিচিত সময়ের গণ্ডির বাইরে থাকে। সেই টাইম-স্পেসে পোষা বেড়ালের মৃত্যুতে ফুঁপিয়ে কাঁদেন পণ্ডিত কানন, কন্যাসম ছাত্রীকে পাশের বাড়িতে গিরিজা দেবীর কাছে যেতে দিতে নারাজ মালবিকা, যেখানে আশি বছরের বৃদ্ধ মল্লিকার্জুন মনসুর সকালে ঘুম থেকে উঠেই রেওয়াজে বসেন, বিজয় কিচলু এক সাধুর কাছে নিজের ভাইয়ের আরোগ্য কামনা করেন, লাল পাঞ্জাবি পরা ভি জি যোগকে দেখলে মনে হয় টুকটুকে একটা পাকা আপেল, ক্যাম্পাস জুড়ে দুষ্টুমি করে বেড়ায় রাশিদ খান নামে এক যুবক, যে গান ধরলে চরাচর স্তব্ধ হয়ে যায়। স্বল্পায়তন বইটি শেষ হওয়ার পরও তার রেশ থেকে যায়।
ভালবাসি তাই জানাই গানে
অরুণেন্দু দাস
৬০০.০০
৯ঋকাল
অরুণেন্দু দাসের সঙ্গে বাঙালি শ্রোতার পরিচয় কতখানি গভীর? তাঁর গান বরং পরিচিত— ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র বিভিন্ন অ্যালবামবাহিত হয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছিল মধ্যবিত্ত শহুরে পরিসরে। এমনকি, মহীনের আগেও, কলকাতার বিভিন্ন কলেজ-ক্যাম্পাসে ছাত্রমহলের মুখে মুখে ফিরত তাঁর গান। কার লেখা গান, সেই পরিচিতি ছাড়াই। একটা ঘটনার কথা নিজেই উল্লেখ করেছেন অরুণেন্দু— তাঁর ‘বড়ি দিয়ে তরকারি’ গানটা তাঁরই মুখে শুনে বিস্মৃত শ্রোতা প্রশ্ন করেছিলেন, এই গান তিনি শিখলেন কোথায়, এ তো তাঁদের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রচলিত গান! এই বইয়ে অরুণেন্দু অকপট। শহুরে বাংলা গানের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে থাকা নাম তাঁর লেখায় এসেছে কোনও ভণিতা ছাড়াই, সহজ ভাবে। গৌতম চট্টোপাধ্যায় তাঁকে দিয়ে কয়েকটা গান রেকর্ড করিয়েছিলেন। বলেছিলেন, পরে ডিজিটাল কারিকুরিতে ঢেকে দেওয়া যাবে ষাটোর্ধ্ব গলার খামতি। কিন্তু ‘ক্ষ্যাপার গান’ অ্যালবামে নিজের ‘ফ্যাসফ্যাসে হেঁপো গলায় গাওয়া’ গান শুনে বেজায় চটে গিয়ে মণিকে চিঠিতে লিখেছিলেন অরুণেন্দু— “তোমার যদি এমনই দুরবস্থা হয়ে থাকে যে ষাটোর্ধ্ব বুড়োদের ধরে গাইয়ে ক্যাসেট বার করতে হচ্ছে, তাহলে আমার মনে হয় এটাই তোমার শেষ ক্যাসেট হয়ে থাক। ঘটনাক্রমে, এই লিঠি লেখার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই চলে গেলেন গৌতম। এমনই বহু টুকরো স্মৃতি তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন অরুণেন্দু।
গান তুমি হও
সম্পা: অর্পণ তপোজা
২৯০.০০
সুচেতনা
“৭০-এর দশকের শেষের দিক... ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ নামক একটি সংগীতের দলের গান শুনি, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে অবশ্যই নতুন ধারার। কিন্তু তা আমার নাগরিক মনকে ব্যক্তিগতভাবে খুব নাড়া দেয়নি।” কেন, তা ব্যাখ্যা করে অঞ্জন দত্ত লিখেছেন, সেই গানে আধুনিক বাংলা কবিতা ছিল, এমন কিছু রূপক ছিল যা সর্বার্থেই সমসাময়িক, কিন্তু “আমার মনে হয়েছিল, সেই গান আমায় আমার মধ্যবিত্ত শহরের রূপ, রং, এবং বুদ্ধিদীপ্ত আবেগের ছোঁয়া দিতে পারছে না।” অঞ্জনের মতো আরও অনেকের কাছেই বাংলা গানে সেই জটিল জীবনের সরল গল্প প্রথম বললেন কবীর সুমন। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন অঞ্জন— সুমনই প্রথম শেখালেন বাহুল্যবর্জিত হতে। শুধুমাত্র একটা গিটার নিয়ে যে গান গাওয়া যায়, এটা বাঙালি শিখল সুমনের কাছে। আলোচ্য সঙ্কলনটিতে লেখকতালিকা দীর্ঘ, তাতে গুরুতর নামও প্রচুর। গোড়াতেই কবীর সুমনের সাক্ষাৎকারটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, সঙ্কলনের অধিকাংশ লেখাই আটকে গিয়েছে ব্যক্তি-কবীরকে নিয়ে মুগ্ধতার উচ্চারণে। ফলে, বিশ্লেষণী আলোচনার পরিসর কমেছে। যেমন, বাংলা গানের সুরের কাঠামোয় কবীরের অবদান কী, তিনশতাধিক পাতার বইয়ে সে বিষয়ে একটা দীর্ঘ আলোচনা থাকতে পারত। সম্পাদকীয় পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy