বাংলায় ধর্মঘট
অশোক ঘোষ
৩৫০.০০ ,গাঙচিল
সত্যি কথা বলতে, গত কয়েক বছরে ধর্মঘট, বন্ধ, হরতাল শব্দগুলো কম শুনেছি। কিন্তু তার আগে? বঙ্গশিশুরা জন্ম ইস্তক এই শব্দগুলোয় অভ্যস্ত ছিল। রাস্তাজোড়া ক্রিকেট ম্যাচের ফুর্তিতে বাঙালি গোড়ায় টের পায়নি, ধর্মঘটের আত্মঘাতী রাজনীতি কী ভাবে রাজ্যের যাবতীয় সম্ভাবনার নটেগাছ মুড়িয়ে দিয়েছে। অশোক ঘোষ বাংলায় ধর্মঘট-এর ইতিহাস চর্চা করেছেন। ধর্মঘটের প্রথম উদাহরণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন ১৯২৭ সালে পালকিবাহকদের এক মাস ব্যাপী ধর্মঘটের কথা। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকদের জারি করা নিয়মের প্রতিবাদেই সংগঠিত হয়েছিল এই ধর্মঘট। কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক নীতি, তত্ত্ব ছাড়াই কী ভাবে সংগঠিত হয়েছিলেন পালকি-বাহকরা, সেই আখ্যান চমৎকার।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলার ধর্মঘট নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন অশোকবাবু। কী ভাবে তৈরি হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিকরা কী ভাবে সংগঠিত হচ্ছেন— তার একটা চলমান ছবি এই বইয়ে পাওয়া যায়। চটকল থেকে চা বাগান, ট্রাম শ্রমিকদের আন্দোলন, ধর্মঘটের বিভিন্ন দিকচিহ্নকে ছুঁয়ে গিয়েছেন তিনি। একটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই। থাকলেও, তা হাতে গোনা কয়েকটি বইয়ের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। অর্থাৎ, প্রাথমিক তথ্য অনুসন্ধানের অভাব স্পষ্ট। কাজটির সম্ভাবনা ছিল বড় মাপের, কিন্তু এই ত্রুটিতে তা খানিকটা মার খেয়েছে।
অগ্নিযুগের ফাঁসি
শুভেন্দু মজুমদার
৪০০.০০ ,র্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন
ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, ‘‘আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি সত্য, কিন্তু তার পুরো ফল ভোগ করতে পারিনি,... এখনও সাধারণ লোকের দুঃখ দুর্দশার বিশেষ কিছু লাঘব হয়নি, বরং বেড়েছে। স্বাধীনতার যে ‘রূপ’ বিপ্লবীদেরকে আত্মবলিদানে উদ্বুদ্ধ করেছিল, আজ পর্যন্ত সেই ‘রূপ’ আমরা দেখতে পাইনি।... আমাদের দেশের যুবকগণ যদি এ কথা স্মরণ রাখে এবং বিপ্লবী শহিদগণের দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয় তবেই ফল লাভ করা সম্ভব হবে।’’ এই সূত্র ধরেই গ্রন্থকার তাঁর বইয়ের ভূমিকায় প্রশ্ন তোলেন: ‘‘সত্যি সত্যি কি আমরা তাঁদের ত্যাগ ও সাধনার আদর্শে বিন্দুমাত্র উৎসাহ বোধ করি?’’ পরেই তাঁর স্বীকারোক্তি: ‘‘কেউ কেউ নিশ্চয়ই করেন। সেই জন্যই হয়তো এই চরম অবক্ষয়ের মধ্যেও কেউ কেউ অগ্নিযুগের যে সব বীর বাঙালি যুবক ফাঁসির মঞ্চে আত্মদান করেছিলেন, তাঁদের কথা শুনতে চান।’’ এঁদের কথা চিন্তা করেই লেখক বইটিতে স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলার বিপ্লবীদের, বিশেষত, যাঁরা ফাঁসিতে প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে একচল্লিশ জনের ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়ে ধারাবাহিক প্রাঞ্জল আলোচনা করেছেন। আলোচিত বিপ্লবী শহিদবৃন্দের মধ্যে কেউ কেউ যেমন অতি পরিচিত, আবার কেউ কেউ রয়েছেন একেবারেই অপরিচিত। কেউ কেউ ইতিহাসে চির-উপেক্ষিতও। অগ্নিযুগের বিপ্লবী হিসাবে শুধু এঁদের ব্যক্তিগত পরিচয়টুকুই নয়, কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে এঁরা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগদান করেছিলেন, কোন বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এঁদের প্রেরণার উৎস— এই সব কিছুই বইটিতে ছবি-সহ অনুপুঙ্খ বিধৃত হয়েছে।
বাংলার জমিদার
সম্পাদক: তাপস ভৌমিক
১৭৫.০০, কোরক
জমিদার বলতে সাধারণত চোখের সামনে সেই অভিজাতদের চেহারাছবি ভেসে ওঠে যাঁরা প্রজাপীড়ক, এবং একই সঙ্গে বিনোদনে মগ্ন ও ভোগলিপ্সু। তবে জনকল্যাণব্রতী ও শিল্পসংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক জমিদাররাও ছিলেন অবিভক্ত বঙ্গদেশে। অনেক সময় কারও কারও আবার দ্বৈত ভূমিকাও থাকত। এই কোরক-প্রকাশনাটিতে প্রধানত প্রজাহিতৈষী ও পৃষ্ঠপোষক রাজন্যবর্গেরই আলোচনা, ব্রিটিশ উপনিবেশের বঙ্গদেশে তাঁদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ভূমিকা ও শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে নানাবিধ অবদান নিয়ে। প্রথম পর্বে ইতিহাস ও পরিচয়, আর দ্বিতীয় পর্বে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিতে তাঁদের পৃষ্ঠপোষণা ও প্রভাব। প্রায় খুঁটিয়ে জরিপ করার মতো আলোচনাদি। এমন বিস্তারিত পরিসরে বাংলার জমিদারদের নিয়ে আলোচনার সমাহার বিশেষ চোখে পড়ে না। একটি মাত্র পুনর্মুদ্রণ, অতীব গুরুত্বপূর্ণ সেটি, বিনয় ঘোষের ‘উত্তরপাড়ার জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ও বাংলার নবজাগরণ’, তাতে তিনি লিখছেন, ‘‘এদেশের লোকের মানসিক উন্নতির জন্যে পাশ্চাত্ত্যবিদ্যা ও ইংরেজীশিক্ষার বিশেষ প্রয়োজন জয়কৃষ্ণ চিরদিনই উপলব্ধি করেছেন।’’ সঙ্কলন প্রসঙ্গে সম্পাদকের নিবেদনে জানানো হয়েছে: ‘‘পরাধীন হতদরিদ্র ভারতবর্ষে রাজন্যবর্গের মানবকল্যাণমুখী যে সব উদ্যোগের উদাহরণ আমরা পাই, তা যদি স্মরণ না করি তাহলে ইতিহাসগত পরম্পরা বা ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা হবে বলে আমাদের ধারণা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy