Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
book review

ভাষা: অধিকার, প্রতিরোধ

জুন, ২০১৯। প্রয়াত হলেন গিরিশ রঘুনাথ কারনাড। শেষের বছর ক’টি প্রত্যেক দিন স্পর্ধিত শাসকের চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের অক্লান্ত সৈনিক ছিলেন তিনি।

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:২৩
Share: Save:

এবং গিরিশ কারনাড
গৌতম গুহ রায়
১৭০.০০
সোপান

জুন, ২০১৯। প্রয়াত হলেন গিরিশ রঘুনাথ কারনাড। তাঁর মতো প্রতিভাকে হারানো যে কোনও সময়েই দেশের পক্ষে অপূরণীয় ক্ষতি। এই সময় যেন একটু বেশি, কেননা শেষের বছর ক’টি প্রত্যেক দিন স্পর্ধিত শাসকের চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের অক্লান্ত সৈনিক ছিলেন তিনি। বার্ধক্যজনিত অসুখ আর তীব্র শ্বাসকষ্ট উপেক্ষা করেই হাজির হন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আয়োজিত প্রতিবাদসভায়। নাকে অক্সিজেনের নল, সামনে প্ল্যাকার্ড ‘আরবান নকশাল’। আসলে ইংরেজি, দর্শন বা অর্থনীতির অধ্যাপনার পেশায় না গিয়ে তাঁর নাট্য-অঙ্গনকে বেছে নেওয়ার পিছনেও কাজ করেছিল এই স্বাধীনচেতা ও লড়াকু সাংস্কৃতিক বোধ। গিরিশ কারনাড কেবলই পণ্ডিত নন, সৃষ্টিক্ষমতায় এক বহুবর্ণ ব্যক্তিত্ব, যিনি বলতেন, “থিয়েটার সমাজ বদলাতে পারে না, কিন্তু সমাজ বদলের খিদে জাগাতে পারে।” এই গ্রন্থে কন্নড় নাটকে আলোকবার্তা নিয়ে আসা সেই স্বপ্নের কারিগরের গল্প শুনিয়েছেন গৌতম গুহ রায়। বইয়ের দ্বিতীয় ভাগ, গিরিশের কারনাডের গবেষণাপত্র ইন সার্চ অব আ নিউ থিয়েটার। আক্ষেপের বিষয়, ‘উপমহাদেশের ঋজু আলোকস্তম্ভ’ সম্পর্কিত এমন এক বইয়ে ছত্রে ছত্রে মুদ্রণপ্রমাদ!

কথা আর কাহিনি ২
পবিত্র সরকার
৪৫০.০০
কারিগর

লেখক বিভিন্ন স্বাদের লেখায় বাঁধতে চেয়েছেন মূলত তাঁর নিজের চার পাশ দেখার অনুধ্যান, অভিজ্ঞতাকে। এক সাপ্তাহিকে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত লেখার দ্বিতীয় সঙ্কলন আলোচ্য বইটি। লেখাগুলিতে লেখক কথক হওয়ার পাশাপাশি একটি চরিত্রও বটে। ‘দেশি স্কুল, দেশি দুষ্টুমি’ শীর্ষক লেখায় স্কুল ও ছাত্রছাত্রীদের নানা দুষ্টুমির প্রসঙ্গ এসেছে। তেমনই, ছাত্রাবস্থায় ক্লাস চলাকালীন বন্ধুর সঙ্গে লুকিয়ে যকের ধন পড়া এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের রসিক বর্ণনা রয়েছে। আবার নিজেকে কেন্দ্র করেই খানিক ব্যঙ্গের স্বাদও মেলে কিছু অনুষঙ্গে। যেমন, লেখক জানাচ্ছেন, ‘বুদ্ধিজীবী সাজবার জন্যে’ খাদি বা হ্যান্ডলুমের পঞ্জাবি পরাটা যেন অবশ্য-কর্তব্য। নানা লেখায় দুই নাতি গণেশ আর ঘঞ্চুর কথাও বলেছেন পবিত্রবাবু।

তবে, কিছু লেখার ‘পবিত্র’-বিশেষত্ব: হালকা চালেও গুরুগম্ভীর বিষয়ের উপস্থাপনা। যেমন, গাঁধী-রবীন্দ্রনাথ, গাঁধী-সুভাষচন্দ্র সম্পর্ককে আতশকাচের তলায় দেখা হচ্ছে ‘গান্ধিজির মুখোমুখি’ লেখায়। ওই লেখাতেই আততায়ীর গুলিতে লুটিয়ে পড়ার মুহূর্তে গাঁধী কথিত ‘হে রাম’-এর সঙ্গে আজকের ‘রাম’ নিয়ে ‘যত কাণ্ড’-এর যে মূলগত পার্থক্য আছে, তা-ও বোঝাতে চান লেখক। রয়েছে ছাত্রাবস্থায় দেখা আমেরিকার হিপি-সংস্কৃতি, উনিশ শতকে প্রকাশিত ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভারত-উদ্ধার কাব্য’ প্রসঙ্গে আলোচনাও।

বাংলা কথাসাহিত্যে সাঁওতাল
পুণ্য বাস্কী
১৬০.০০
ছোঁয়া

বাংলা সাহিত্যে সাঁওতাল চরিত্র আসে কম, ক্বচিৎ কখনও সাঁওতালি সংলাপ লেখা হয়। ভাষার ব্যবহার তখন কতটা যথাযথ? বাঙালি সাহিত্যিকের কলমে ফুটে-ওঠা সাঁওতাল চরিত্র, সাঁওতালি সংস্কৃতিকে কী ভাবে দেখেন সাঁওতালরা? পুণ্য বাস্কীর জন্ম বীরভূমের আদিবাসী গ্রামে, বাংলা সাহিত্য নিয়ে পিএইচ ডি করছেন। তাই তাঁর বই হাতে নিয়ে উত্তর পাওয়ার আশা জেগেছিল। বইটি নেড়েচেড়ে দেখা গেল, বাঙালি লেখকদের মূল্যায়ন নিয়ে খুব বেশি কথা নেই। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় সাঁওতালি ভাষার কিছু ছোটখাটো ত্রুটির কথা আছে। কালিন্দী উপন্যাসে বাঙালি ভদ্রলোক সোমেশ্বর চক্রবর্তীকে সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা বলে দেখিয়ে তারাশঙ্কর যে ইতিহাসের খেলাপ করেছেন, তা-ও বলেছেন পুণ্য বাস্কী। তবে এক অঞ্চলের সাঁওতালের ভাষা বাঙালি লেখকরা প্রায়ই বসান অন্য অঞ্চলে, শব্দচয়নেও ভুল থাকে, সে কথাগুলো তেমন তুলে ধরেননি।

ষষ্ঠ অধ্যায়ে পুণ্য বাস্কী আক্ষেপ করেছেন, বাংলা সাহিত্যে “আদিবাসী মানেই জংলি বা অপসংস্কৃতির শিকার”, কিন্তু কোনও দৃষ্টান্ত দেননি। সাঁওতালদের ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, সামাজিক বিন্যাস, লোকাচার ইত্যাদি নিয়ে খানিকটা আলোচনা করেছেন, যা গোড়ার ধারণা তৈরি করবে।

অন্য বিষয়গুলি:

book review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy