জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে গিয়ে সূর্যমুখী দেখা পান বাড়ির এক জন পুরুষের। সুপুরুষ, বিস্তৃত কপাল, আয়ত নয়ন। তিনি সূর্যমুখীর রূপ দেখে বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলেন। সূর্যমুখী সেই হতবাক রূপমুগ্ধকে বলেছিলেন, “রবিবাবুকে বলুন, সূর্যমুখী এসেছেন।” সূর্যমুখী রবিবাবুকে চিনতেন না। শেষ পর্যন্ত দেখা না করেই চলে এসেছিলেন, কিন্তু “ওই নামের অভিঘাত, রূপের তারিফ আর আচরণের আভিজাত্যটুকু তিনি ওই ঘরে ফেলে এসেছিলেন রবিবাবুর জন্য।”
সূর্যমুখী রবিবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কি কোনও অভিমান থেকে? এই গ্রন্থের পাঠকদের যে বিষয়টা স্মরণে রাখা আবশ্যক তা হল, বঙ্কিমচন্দ্রের পর নবপর্যায় বঙ্গদর্শন নাম নিয়ে পত্রিকাটি যখন আবার প্রকাশিত হতে শুরু করল, তখন সেখানে চোখের বালি উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। তখন পত্রিকার সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং, উপন্যাসের লেখকও তিনিই। রবীন্দ্রনাথের কাহিনিতে অগ্রজ ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবল উপস্থিতি ছিল বিষবৃক্ষ উপন্যাসকে ঘিরে। এই ধারাটি বজায় রেখে লেখক তাঁর উপন্যাসটিকে সাজিয়েছেন।
ছায়া পূর্বগামিনী
অলখ মুখোপাধ্যায়
২৫০.০০
কৃতি
কাহিনির ঘোরাফেরা বিশ ও একুশ শতকের প্রথম পাদে, সূচনা এক বেকার যুবকের অর্থোপার্জনের তাড়নায়। ছাত্র পড়ানোর কাজের খোঁজ করতে গিয়ে এক অদ্ভুত কাজের সন্ধান পায় সে— উপন্যাস লেখার। এক বিত্তশালী বৃদ্ধের পারিবারিক কাহিনি নিয়ে একটি উপন্যাস রচনা করতে হবে, তথ্য জোগানোর দায়িত্ব বৃদ্ধের। কিন্তু বৃদ্ধও কি সব তথ্য জোগানে সমর্থ ছিলেন? না কি উপন্যাস লেখানোর অছিলায় তিনিও জানতে চাইছিলেন তাঁর পরিবারের সম্পূর্ণ ইতিহাস?
এ কাহিনি এক বিত্তশালী উচ্চশিক্ষিত পরিবারের। যুবক রবীন্দ্রনাথের চোখের বালি উপন্যাস পাঠে বদলে যাচ্ছে সেই পরিবারের মানুষের ভাবনা, সম্পর্কের বিন্যাস, আত্ম-উপলব্ধি। বিপিনবিহারী-বিনোদবিহারী-দুলালচন্দ্র-সূর্যমুখী-ক্ষণপ্রভা-রাধারাণীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কাহিনি। সূর্যমুখী ও ক্ষণপ্রভা বেথুন স্কুলের পাঠ শেষ করে মেমের কাছে ইংরেজির পাঠ নিয়েছে। বিপিনবিহারী ইংরেজির এম এ, বিনোদবিহারী ইতিহাসে এম এ পাশ করে ওকালতি পড়েছে, দুলালচন্দ্রও অতি শিক্ষিত। অপূর্ব চিত্রিত মেয়েদের স্বাভিমান। পিতা রাধারমণের সিদ্ধান্তের উত্তরে বিপিনবিহারী জানান, “আমি স্ববশ, তাই আপনার সিদ্ধান্ত আমার উপরে কার্যকরী হয় না।” ‘স্ববশ’ শব্দটা উপন্যাসে প্রায় সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে। ‘স্ববশ’ না হলে সূর্যমুখী একলা জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রসদনে চলে যেতেন না, ক্ষণপ্রভা স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে যেতেন না, রাধারাণী বিপিনবিহারীর সঙ্গে এক আশ্চর্য সম্পর্কে বাঁধা থাকতেন না। ক্ষণপ্রভার সঙ্গে বিপিনবিহারীর সমাজ-অনুমোদিত এবং দুলালচন্দ্রের সমাজ-অননুমোদিত সম্পর্ক ছাড়াও যা মূর্তি পেয়েছে তা হল, ক্ষণপ্রভা সম্পর্কে এই দুই পুরুষের শ্রদ্ধাবোধ। দুলালচন্দ্র ও সূর্যমুখীর কন্যার নাম হয় নন্দিনী। বঙ্কিম অনুরাগিণী সূর্যমুখী কি তবে দুলালচন্দ্রকে গ্রহণ করার সঙ্গে মেনে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথকেও?
এই উপন্যাসের ধরন চলন একেবারেই ভিন্ন। বিশেষ করে যে ভাবে রবীন্দ্রনাথ অলক্ষ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছেন তা খুবই অন্য রকম। ছোট ছোট ভুল না থাকলেই ভাল হত। তবু সেগুলি অমান্য করা যায়, কিন্তু বিহারীর ‘পিসিমার ছেলে’ উক্তিটির অসতর্কতা পীড়া দেয়। কেন, সেটা পুরো ভাঙা গেল না। কারণ উপন্যাসের আসল চমক লুকিয়ে সেখানেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy