তলানিতে নেমে এল সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি। শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাইকারি মূল্য সূচকের ভিত্তিতে হিসাব করা এই হার অক্টোবরে নেমেছে ১.৭৭ শতাংশে। সেপ্টেম্বরে ছিল ২.৩৮%। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক সমীক্ষা সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি ২.২০ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছিল। সরকারি হিসাবে তা নামল আরও নীচে।
খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি অক্টোবরে ৫.৫২ শতাংশে নেমে আসার পরেই সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি কমার খবরে উচ্ছ্বসিত শেয়ার বাজার ও শিল্পমহল। কারণ, যে তলানিতে ওই হার দাঁড়িয়েছে, তা বিগত ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বা বর্তমান বিজেপি সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কেউই আশা করেননি।
শেয়ার বাজারে এ দিন এই ভাল খবর এসে পৌঁছনোর জেরেই নয়া নজির গড়ে সেনসেক্স ও নিফ্টি। ১০৬.০২ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স ২৮,০৪৬.৬৬ অঙ্কে থামে। ৩২.০৫ পয়েন্ট বেড়ে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নিফ্টি থিতু হয় ৮,৩৮৯.৯০ অঙ্কে।
এ বার লগ্নিকারীরা আশায় বুক বাঁধছেন এই কথা ভেবে যে, ২ ডিসেম্বর ঋণনীতির পর্যালোচনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন হয়ত সুদ কমানোর জন্য পদক্ষেপ করতে পারেন। তবে রাজন সত্যিই সেই পথে হাঁটবেন কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনে সংশয় থাকলেও শেয়ার বাজার যে আগামী ক’দিন ওই প্রত্যাশা নিয়ে এগোবে, সে ব্যাপারে অধিকাংশই এক মত। বিশেষত এই আশায় ভর করে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি তাদের বিনিয়োগ আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, ওই সব বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থা গত বৃহস্পতিবারই ভারতের বাজারে ৬৯০.৬১ কোটি টাকা লগ্নি করেছে।
এ দিন অবশ্য মূল্যবৃদ্ধি কমা ছাড়াও স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-সহ কিছু সংস্থা তাদের এই অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভাল আর্থিক ফলাফল ঘোষণা করেছে। প্রধানত ওই দু’টি খবরের হাত ধরেই সূচক এই দিন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে।
প্রসঙ্গত, এই নিয়ে টানা ৫ মাস কমলো সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার হার গত আড়াই বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে দাঁড়িয়েছে ২.৭%। মে মাস থেকেই তা কমার মুখ নিয়েছে। মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে জ্বালানির দামও, যার মধ্যে রয়েছে পট্রোল, ডিজেল, এলপিজি। এই ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার ০.৪৩%, গত সেপ্টেম্বরে বেড়েছিল ১.৩৩% হারে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ব্যারেল পিছু ৭৭ ডলারে নেমে আসায় জ্বালানি ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি কয়েক দিনের মধ্যে আরও কমবে বলেই আশা সংশ্লিষ্ট মহলে।
অন্য দিকে, পেঁয়াজের দাম অক্টোবরে কমেছে ৫৯.৭৭%। সেপ্টেম্বরের হার ৫৮.১২%। সাধারণ ভাবে শাক-সব্জির দাম কমেছে ১৯.৬১%। ডিম-মাছ-মাংসে তা কমেছে ২.৫৮%। তবে আলুর ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার কমলেও, এখনও তা ৮২.১১ শতাংশে। সেপ্টেম্বরের হার ৯০.২৩%। চিনি, ভোজ্যতেল, পানীয়, সিমেন্টে মূল্যবৃদ্ধির হার কমে হয়েছে ২.৪৩%।
তবে মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রা-র অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার এখনই সুদ কমার ব্যাপারে আশাবাদী নন। তিনি বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পড়েছে ঠিকই। কিন্তু মনে হয় সাবধানতা হিসেবে ঋণনীতির আগামী দু’টি পর্যালোচনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার সুদের হার এক জায়গায় ধরে রাখবে।”
এর কারণ ব্যাখ্যা করে নায়ার জানান, সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি এতটা কমার কারণ তিনটি।
প্রথমত, বিশ্ব বাজারে পণ্য-মূল্য নেমে আসা।
দ্বিতীয়ত, আগের বছরের চড়া মূল্যবৃদ্ধিকে ভিত্তি ধরেই হিসাব করা হচ্ছে এ বছরের হার। ফলে তা কমেছে।
তৃতীয়ত, ডিজেলের দামে ভারত সরকার নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া। যে কারণে কমছে এই জ্বালানির দরও।
নায়ার এখানে এই কারণগুলি উল্লেখ করে জানান, দেশে চাহিদা নিয়ন্ত্রণে আসার প্রভাবে কিন্তু দাম কমেনি। ফলে চাহিদার চাপে যে-কোনও সময়েই মূল্যবৃদ্ধি আবার বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা গত বছরের চড়া হার যখন আর ভিত্তিবর্ষ থাকবে না, তখনই মাথাচাড়া দিতে পারে মূল্যবৃদ্ধির সরীসৃপ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সাবধানে পা ফেলবে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। যদিও শিল্পমহলের মতে, সুদ কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy