অর্থ মন্ত্রকে জেটলি। ছবি: পিটিআই।
অর্থমন্ত্রী বদলেছে। কিন্তু সুদ ঘিরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে তরজার সুর বদলায়নি।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি, বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে এ বার কিছুটা সুদ কমানোর কথা ভাবুক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ঠিক একই ভাবে ইউপিএ জমানার শেষ দিকে প্রায় লাগাতার সুদ ছাঁটাইয়ের পক্ষে সওয়াল করতেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। কিন্তু তখন থেকে এখন পর্যন্ত সেই পথে হাঁটেনি শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এমনকী কিছু দিন আগেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন জানিয়েছেন, দীর্ঘ মেয়াদে মূল্যবৃদ্ধিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখার বিষয়ে একশো ভাগ নিশ্চিত হলে একমাত্র তবেই সুদ কমানোর রাস্তায় পা বাড়াবেন তাঁরা।
বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধি যুঝতেই যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চড়া সুদের জমানা বজায় রাখতে বাধ্য হচ্ছে, সে কথা মেনে নিয়েছেন জেটলি। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর দাবি, বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরানোর পথে অন্যতম বাধা সুদের ওই উঁচু হারই। তাঁর কথায়, “চড়া সুদ শিল্পের পক্ষে উৎসাহব্যঞ্জক নয়। তাই সম্প্রতি যখন মূল্যবৃদ্ধির কামড় কিছুটা কমতে শুরু করেছে, তখন সুদ কমানোর হয়তো এটিই সঠিক সময়।”
অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, কৃষি ক্ষেত্রের আমূল সংস্কার দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া। তাই তার উৎপাদন বৃদ্ধির হার যে এই অর্থবর্ষে গত বারের তুলনায় হঠাৎ করে অনেকখানি বেড়ে যাবে, তেমন সম্ভাবনা কম। একই ভাবে, দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর জন্য শুধু পরিষেবা ক্ষেত্রের ফুলেফেঁপে ওঠাও যথেষ্ট নয়। তাই সামগ্রিক ভাবে বৃদ্ধির হারকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার ঘোড়া আসলে উৎপাদন শিল্প। শুধু তা-ই নয়, বিপুল সংখ্যায় কাজের সুযোগ তৈরির জন্যও প্রধান ভরসা ওই ক্ষেত্রই। যে কারণে নতুন কল-কারখানা তৈরি এবং পুরনোগুলির সম্প্রসারণে লগ্নি টানার উপর এত জোর দিচ্ছে মোদী-সরকার। স্লোগান তোলা হচ্ছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র। কিন্তু সুদ চড়া থাকলে, উৎপাদন শিল্প চাঙ্গা হওয়ার পথে তা কিছুটা বাধা হতে পারে বলে জেটলির আশঙ্কা।
চিদম্বরম থেকে জেটলি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীরা মনে করেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (্স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সুদে ধার দেয়) কমালে, সুদ হ্রাসের পথে হাঁটবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য তহবিল সংগ্রহের খরচ কমবে। ফলে কল-কারখানায় টাকা ঢালতে উৎসাহিত হবে শিল্প। একই সঙ্গে, মাসিক কিস্তি কমবে গৃহ ঋণ, গাড়ি ঋণ ইত্যাদির। ফলে সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়বে। তা মেটাতে আরও বেশি করে লগ্নি করবে শিল্প। কাজের নতুন সুযোগ তৈরি হবে তার হাত ধরে। এই একই যুক্তিতে সুদ কমানোর পক্ষে ক্রমাগত সওয়াল করে চলেছে শিল্পমহলও।
উল্টো দিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে শুধু মূল্যবৃদ্ধির অসুর দমনের কথা মাথায় রেখে চড়া সুদের জমানাই বজায় রাখতে আগ্রহী, এমনটা নয়। বরং অর্থনীতির হাল ফেরাতে এবং কাজের নতুন সুযোগ তৈরির জন্য বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হওয়া যে জরুরি, সে কথা বারবার বলেন রঘুরাম রাজনও। কিন্তু তিনি মনে করেন, দীর্ঘ মেয়াদে বৃদ্ধির চাকায় গতি বজায় রাখার প্রথম শর্তই হল মূল্যবৃদ্ধিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখা। ঠিক যেমনটা মনে করতেন তাঁর পূর্বসূরি ডি সুব্বারাও।
কারণ, বৃদ্ধির সঙ্গে ভারসাম্যের কথা মাথায় রাখলেও সাধারণত শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রথম কাজই হল, মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। কারণ, তা লাগামছাড়া হলে, ব্যাঙ্কে রাখা আমানত কিংবা বন্ডে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া সুদে আকর্ষণ কমে। দাম কমে টাকার। সে ক্ষেত্রে টাকা ঢালতে পিছপা হতে পারেন লগ্নিকারীরাও। তাই শীর্ষ ব্যাঙ্ক মনে করে, এখন চড়া সুদের দাওয়াই কিছুটা তেতো মনে হলেও, আখেরে তা অর্থনীতির পক্ষে ভাল হবে।
সুব্বারাও যখন মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন, তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। রাজন দায়িত্ব নেওয়ার সময়ও পরিস্থিতি ছিল একই। কিন্তু সম্প্রতি পাইকারি ও খুচরো মূল্যবৃদ্ধি সূচক কিছুটা নেমেছে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি ঠিক কতটা নিয়ন্ত্রণে এলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমাবে, সে দিকেই এখন নজর সকলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy