বাজারে উত্তেজনা বজায় আছে বাজেট এবং বিশ্বকাপের পরেও। নজর এখন নথিভুক্ত সংস্থাগুলির আর্থিক ফলাফলের দিকে।
২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের মরসুম শুরু হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। গোড়াতেই নজরকাড়া ফলাফল প্রকাশ করেছে প্রথম সারির দুই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস এবং টিসিএস। শনিবার বেশ আকর্ষণীয় ফলাফল উপহার দিয়ে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা রিলায়্যান্স বলতে চাইছে, খাটো করে দেখা যাবে না তাকে। চলতি সপ্তাহ থেকে হাতে আসতে শুরু করবে আরও অনেক ফলাফল। সকাল দেখে যদি বলা যায় দিনটা কেমন যাবে, তবে বলতেই হয় সামগ্রিক ভাবে প্রথম তিন মাসের আর্থিক ফলাফল ভালই হবে। বিশেষজ্ঞদেরও তাই অনুমান, ফল ভাল হলে তা শেয়ার বাজারের চাঙ্গা ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
টিসিএস এবং রিলায়্যান্স এই দুই অতিকায় সংস্থার ফলাফল ছাপিয়ে গিয়েছে বাজারের আশাকে। দু’টিই মন্থর বাজারে মাত্র তিন মাসে ঘরে তুলেছে ৫,০০০ কোটি টাকার বেশি নিট মুনাফা। টিসিএস-এর লাভ ২৭% বেড়ে পৌঁছেছে ৫,০৫৮ কোটি টাকায়। আয় স্পর্শ করেছে ২২,১১১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২.৯% বেশি। এপ্রিল থেকে জুন, এই তিন মাসেই রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের আয় প্রায় ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা। নিট মুনাফা ৬,০০০ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই। শেয়ার পিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২০.৩০ টাকা। ইনফোসিসের পরে টিসিএসের উন্নত ফলাফলে কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েছে শেয়ার বাজার, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি শেয়ারগুলি। রিলায়্যান্স-এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে শনিবার। সোমবার বাজার খুললে বোঝা যাবে এতে সূচক কতটা প্রভাবিত হয়। আশা ছিল, তিন মাসে বজাজ অটোর লাভ হতে পারে ৮০০ কোটি টাকা। প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, নিট মুনাফা হয়েছে ৭৪০ কোটি টাকা।
এ বার ব্যাঙ্ক শেয়ার চাঙ্গা হওয়ার পালা। শুক্রবার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, সরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে অতিরিক্ত মূলধন জোগানোর কাজকে প্রাধান্য দেবে সরকার। মোট ২.৪ লক্ষ কোটি টাকার নতুন মূলধন প্রয়োজন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির। এর মধ্যে মাত্র ১১,২০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে বাজেটে। বাকি টাকা ব্যাঙ্কগুলিকে বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে শেয়ার ছেড়ে। সরকার অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যাঙ্কগুলি শেয়ার ছাড়লেও সরকারি মালিকানা ৫১ শতাংশের নীচে যেতে দেওয়া হবে না। প্রথমেই হয়তো আমরা বাজারে আসতে দেখব দেশের বৃহত্তম ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ককে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দু’টি নতুন ধরনের লাইসেন্স দেওয়ার কথা জানিয়েছে। প্রথমটি ছোট ব্যাঙ্ক এবং পরেরটির নাম ‘পেমেন্টস ব্যাঙ্ক’। ছোট ব্যাঙ্ক আমানত নিতে পারবে এবং ছোট ছোট ঋণ দিতে পারবে। ঋণ দেবে চাষি এবং ছোট ব্যবসায়ীদের। পেমেন্টস ব্যাঙ্ক শুধুই জমা সংগ্রহ করবে এবং তা সরকারি ঋণপত্রে লগ্নি করবে, ঋণ দিতে পারবে না। অনুমান, এই দু’ধরনের ব্যাঙ্ক চালু হলে গ্রামাঞ্চলে তথাকথিত চিট ফান্ডের দৌরাত্ম্য কমবে। এই ধরনের ব্যাঙ্ক সকলের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাঙ্কহীন অঞ্চলে প্রসারিত হবে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা।
রেল এবং মূল বাজেটের পরে শেয়ার বাজার খানিকটা পড়ে গেলেও উন্নত কোম্পানি ফলাফলের হাত ধরে তার অনেকটা শুধরে নিয়েছে। ভাল ফলাফল প্রকাশিত হতে থাকলে বাজার শক্তি ধরে রাখতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজারের নিয়ম অনুযায়ী এরই মধ্যে মাঝে মাঝে সংশোধন হবে। অর্থাৎ ভাল দাম পেলে একই শেয়ার একবার বিক্রি করে তা আবার কম দামে কেনার সুযোগ পাওয়া যাবে। এই পথে মাঝেমধ্যেই তুলে নিতে হবে বাজারে পড়ে থাকা লাভ।
ইক্যুইটি নয় এমন প্রকল্পে এ বারের বাজেটে মূলধনী লাভকর বাড়ানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, করের সুবিধা পেতে আগের নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের জায়গায় এখন লগ্নি ধরে রাখতে হবে তিন বছর। বাজেটের বক্তব্য অনুযায়ী, এই নিয়ম চালু হতে পারে অতীত দিন থেকেই।
নিয়মটি ঋণপত্র-নির্ভর প্রকল্পগুলির জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে বাজার থেকে লোপ পেতে পারে ছোট মেয়াদের প্রকল্পগুলি। এই ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রকে দরবার করা হচ্ছে বহু মহল থেকেই। অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, এই আইন যাতে অতীত দিন থেকে কার্যকর না-হয় তা তিনি দেখবেন। এ ধরনের প্রকল্পের আওতায় পড়বে ঋণপত্র-নির্ভর এবং টাকার বাজারে লগ্নিকারী বিভিন্ন ফান্ড, নির্দিষ্ট মেয়াদের প্রকল্প বা এফএমপি এবং গোল্ড ফান্ড।
বাজেট প্রকাশিত হওয়ার পর পরই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে ছোট মেয়াদের কিছু এফএমপি প্রকল্প। এখন যেগুলি বাজারে ছাড়া হচ্ছে, সেগুলির বেশির ভাগের মেয়াদ তিন বছরের বেশি। মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প এখন তাকিয়ে আছে, অর্থ মন্ত্রক এই ব্যাপারে কী পরিবর্তন আনে, তার দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy