Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

চড়া বাজারে দ্রুত শেয়ার বেচে পরের পতনের অপেক্ষায় থাকুন

আশা এবং আশঙ্কার টানাপড়েনে আশার সাময়িক জয় হলেও, আশঙ্কা কিন্তু দিগন্তে মিলিয়ে যায়নি। নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে তা আবারও আঘাত হানতে পারে। গত সপ্তাহের গোড়া থেকেই বাজারের পতনের আশঙ্কা আচমকা জোরালো হয়ে দেখা দেয়। তার আগের সপ্তাহের শেষ দিন (১১ এপ্রিল) অর্থনীতি সম্পর্কে বেশ কিছু প্রতিকূল তথ্য প্রকাশিত হওয়াই ছিল যার কারণ। এর প্রভাবে মঙ্গল এবং বুধ, এই দুই কাজের দিনে সেনসেক্স খুইয়ে বসে যথাক্রমে ১৪৪ এবং ২০৮ অঙ্ক।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২৬
Share: Save:

আশা এবং আশঙ্কার টানাপড়েনে আশার সাময়িক জয় হলেও, আশঙ্কা কিন্তু দিগন্তে মিলিয়ে যায়নি। নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে তা আবারও আঘাত হানতে পারে।

গত সপ্তাহের গোড়া থেকেই বাজারের পতনের আশঙ্কা আচমকা জোরালো হয়ে দেখা দেয়। তার আগের সপ্তাহের শেষ দিন (১১ এপ্রিল) অর্থনীতি সম্পর্কে বেশ কিছু প্রতিকূল তথ্য প্রকাশিত হওয়াই ছিল যার কারণ। এর প্রভাবে মঙ্গল এবং বুধ, এই দুই কাজের দিনে সেনসেক্স খুইয়ে বসে যথাক্রমে ১৪৪ এবং ২০৮ অঙ্ক। এমনকী ইনফোসিস আশার তুলনায় ভাল ফল প্রকাশ করলেও তা বাজারের পক্ষে যায়নি। হাওয়া ঘুরল টিসিএস তাক লাগানো ফলাফল প্রকাশ করায়। শুধু টিসিএস-ই নয়, আশার তুলনায় ভাল ফল উপহার দেয় উইপ্রো, এইচসিএল ইনফো, মাইন্ড ট্রি এবং ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কও। পাশাপাশি, ভারতীয় বাজার সম্পর্কে আশার বাণী শোনায় দু’টি বিদেশি সংস্থা। সব মিলিয়ে হঠাৎই উৎসব ফিরে আসে দুর্যোগের বাজারে। বৃহস্পতিবার এক ঝটকায় সেনসেক্স ওঠে ৩৫১ পয়েন্ট। পুরোপুরি পুষিয়ে দেয় আগের দু’দিনের পতন। তবে বাজারে আনন্দ ফিরলেও আশঙ্কা কিন্তু কাটেনি।

বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে না আসা সত্ত্বেও টিসিএস-এর এমন ভাল ফলাফল বাজারে নতুন করে আশা জাগায় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। বছরের শেষ তিন মাসে দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির নিট মুনাফা ৫১.৫ শতাংশ বেড়ে পৌঁছয় ৫২৯৬ কোটি টাকায়। মাত্র তিন মাসে আয় স্পর্শ করে ২১,৫৫১ কোটি টাকা। বাজার আরও খুশি হয় যখন সংস্থার কর্ণধার এন চন্দ্রশেখরন ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের ফলাফল আরও ভাল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। টিসিএসের বর্তমান কর্মীসংখ্যা ৩ লক্ষ। চলতি বছরে আরও ৫৫,০০০ কর্মী নিয়োগ করা হবে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।

ফলাফলের মরসুমের প্রথম সপ্তাহেই এতগুলি আশাতীত ভাল আর্থিক ফল বাজার মোটেও আশা করেনি। এখানেই শেষ নয়। গুড ফ্রাইডে-র দিন বাজারকে ভাল ফলাফল উপহার দেয় দেশের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা রিলায়ান্স ইন্ডাস্ট্রিজও। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে সংস্থাটির আয় ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। নিট মুনাফা পৌঁছয় ২১,৯৮৪ কোটি টাকায়। শেয়ার পিছু সংস্থাটির আয় হয় ৬৮ টাকা। তারা এ বার ডিভিডেন্ড দেবে শেয়ার পিছু ৯.৫০ টাকা হারে।

এত সব ভাল খবরের পাশাপাশি বাজারকে আরও উস্কে দেয় ভারত সম্পর্কে দুই বিদেশি সংস্থার মন্তব্য। নামী রেটিং সংস্থা এস অ্যান্ড পি জানায়, কেন্দ্রে শক্তিশালী সরকার গঠিত হলে এবং সব ঠিকঠাক চললে আগামী দিনে ভারতের রেটিংয়ে উন্নতি হতে পারে। আর এক নামী বিদেশি লগ্নি সংস্থা সিএলএসএ আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে এই আশা প্রকাশ করে যে, আগামী দু’বছরের মধ্যে সেনসেক্স পৌঁছে যেতে পারে ৪০,০০০ অঙ্কে। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এই সব কথাই শেয়ার বাজারকে বড় শক্তি জোগায়।

বাজারে হঠাৎই অনেক বারুদ জমেছে। তবে আনন্দবাজি কত দিন পোড়ানো যাবে, তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, ভাল খবরের পাশাপাশি খারাপ খবর কিন্তু থমকে নেই। খুচরো এবং পাইকারি দু’রকমের মূল্যসূচকই আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ফলে সুদ কমার যে-ক্ষীণ আশা দেখা গিয়েছিল, তা এখন সুদ বাড়ার আশঙ্কায় পরিণত হয়েছে।

অন্য দিকে বর্ষা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী মোটেই সুখকর নয়। আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা স্কাইমেট জানিয়েছে, এপ্রিল থেকে জুন, এই তিন মাসে বর্ষা হতে পারে স্বাভাবিকের ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ বৃষ্টি কম হওয়ার সম্ভাবনা। পরের তিন মাসে আশঙ্কা আরও বেশি। এই সময় ‘এল-নিনো’র প্রভাবে কোনও কোনও জায়গায় খরা হওয়ার ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্কাইমেট। বৃষ্টি কম হলে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন কমবে। বাড়বে মূল্যসূচক। অর্থাৎ কেন্দ্রে যে-সরকারই আসুক, তাদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে ইনিংসের গোড়া থেকেই। আবহাওয়া পরিবর্তন গোটা বিশ্বকেই ভোগাতে পারে বলে আশঙ্কা।

সাধারণ লগ্নিকারীদের মনে এখন বড় প্রশ্ন, এই অবস্থায় কী করা উচিত?

বড় শেয়ারগুলির পাশাপাশি বহু মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ শেয়ারেরও দাম বেড়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনামী শেয়ার থেকে বেরিয়ে আসা যায়। বড় নামী শেয়ারও এই চড়া বাজারে আংশিক বিক্রি করে লাভ ঘরে তোলার কথা ভাবা যেতে পারে। বিক্রির টাকা নগদে রেখে বাজারের পতনের জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে। বড় পতনে অপেক্ষাকৃত কম দামে নামী শেয়ার আবার কেনা যেতে পারে। একই কৌশল প্রয়োগ করা যায় মিউচুয়াল ফান্ডেও। মোট কথা, এই ধরনের বাজারে সবাইকে একটু উদ্যোগী হতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং চটজলদি তার প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সুদিন দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

amitabha guha sarkar nifty sensex market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy