ধর্মঘটে থমকে থাকা ট্রাকের সারি। ধানবাদে। ছবি: চন্দন পাল।
দিনভর চাপান-উতোরের পর বুধবার রাতে অবশেষে উঠল কয়লা ধর্মঘট। দেশ জুড়ে ডাকা পাঁচ দিনের ধর্মঘট কেন্দ্রীয় কয়লা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের আশ্বাসে উঠে গেল দ্বিতীয় দিনেই। মন্ত্রীর সঙ্গে একটানা ছ’ঘণ্টার বৈঠকের পরে শেষ পর্যন্ত ধর্মঘট থেকে সরে আসতে রাজি হয় ৫টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। ধর্মঘট উঠে যাওয়ায় আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি। গয়াল এ দিন ধর্মঘটীদের যে-আশ্বাস দেন, তার মধ্যে রয়েছে:
• কোল ইন্ডিয়া বেসরকারিকরণের কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই
• সুরক্ষিত থাকবে কোল ইন্ডিয়া ও তার মালিকানা
• বর্তমানে, এমনকী ভবিষ্যতেও সংস্থার কর্মীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই
ধর্মঘটীরা সকাল থেকে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় এ দিন আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে বিদ্যুৎ সঙ্কটের আশঙ্কা। কয়লার দৈনিক উৎপাদনে ঘাটতি ইতিমধ্যেই ছাড়িয়েছিল মোট ১৫ লক্ষ টন উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ। উৎপাদন খাতে ক্ষতি দাঁড়ায় ৩০০ কোটি টাকা। ফলে ধর্মঘট চললে দেশে ১০০টিরও বেশি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে বলেই আশঙ্কা করছিল শিল্পমহল। কারণ, জরুরি প্রয়োজন মোটাতে তারা মজুত করা কয়লা দিয়ে কাজ চালালেও, তাতেও টান পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মধ্য প্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য তেমন আশঙ্কার কথাই জানিয়েছিল।
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার কোল ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণে উদ্যোগী বলেই শঙ্কিত ছিল কর্মী ইউনিয়নগুলি। এর বিরুদ্ধে ডাকা ৫ দিনের ধর্মঘটে সামিল হয় বিজেপি সমর্থিত ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)-ও। বাকি চারটি ধর্মঘটী ইউনিয়ন হল: আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, সিটু এবং এইচএমএস। সব মিলিয়ে ৫টি ইউনিয়নের আওতায় থাকা ৫ লক্ষ খনি কর্মী ধর্মঘটে যোগ দেন, যা ১৯৭৭ সালের পর থেকে এই শিল্পে বৃহত্তম ধর্মঘট। কোল ইন্ডিয়ার ৪৩৮টি খনির মধ্যে ২৯০টির উৎপাদনই কার্যত থমকে যায়। প্রসঙ্গত, দেশে মোট কয়লা উৎপাদনের ৮০ শতাংশই করে কোল ইন্ডিয়া। ধর্মঘট নিয়ে রফাসূত্র খুঁজতে এ দিনই ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করেন কেন্দ্রীয় কয়লা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, যা অবশেষে সফল হয় রাতের দিকে। কোল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান সুতীর্থ ভট্টাচার্য ও কয়লা মন্ত্রকের প্রথম সারির অফিসাররাও সামিল হন বৈঠকে। বৈঠকের পরে এআইটিইউসি নেতা লখন লাল জানান, “ধর্মঘট তুলে নেওয়া হল।” আইএনটিইউসি-র ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মাইনওয়ার্কার্স ফেডারেশন-এর প্রেসিডেন্ট রাজেন্দ্র সিংহ-ও ধর্মঘট ওঠার খবর জানিয়ে বলেন, কর্মীদের আশ্বস্ত করেছে কেন্দ্র । ইউনিয়নগুলির সঙ্গে তাদের সে ব্যাপারে চুক্তিও হয়েছে। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারও কয়লা সচিব অনিল স্বরূপ ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, তবে তা ব্যর্থ হয়।
এর আগে ইউনিয়নগুলির অভিযোগ ছিল, বাইরে থেকে কর্মী এনে এই ২৯০টি খনিতে উৎপাদন চালু রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। ঝাড়খণ্ডে পুলিশের সঙ্গে কর্মীদের সংঘাতের খবরও আসে।
অন্য দিকে, ধর্মঘটের সমালোচনা করে অ্যাসোচ্যাম, পিএইচডি চেম্বারের মতো বণিকসভা। উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি-র দেওয়া তথ্য অনুসারে ৪২টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাতে ৭ দিনেরও কম সময়ের মতো মজুত কয়লা ছিল। তার মধ্যে প্রায় ২১টি কেন্দ্রে মজুত কয়লা দিয়ে চার দিনেরও প্রয়োজন মেটানো যেত না।
কয়লা ধর্মঘট নিয়ে এ দিন মুখ খোলেন কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক সিংভি-ও। তিনি বলেছিলেন, “গত চার দশকে এটি কয়লা শিল্পে বৃহত্তম ধর্মঘট। অথচ সরকার সেটিকে অবহেলা করছে।” বিএমএসের ধর্মঘট সমর্থন করার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি। কয়লা খনি বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে অর্ডিন্যান্স আনার জন্যও কেন্দ্রকে দোষারোপ করেছে কংগ্রেস। তাদের মতে, এটাই কর্মীদের ধর্মঘটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
প্রভাব পড়েনি পশ্চিমবঙ্গে, দাবি ইসিএলের। আসানসোল থেকে নিজস্ব সংবাদদাতার খবর: কয়লা শিল্পে ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও বিশেষ প্রভাব পড়েনি ইসিএলের পশ্চিমবঙ্গের খনিগুলিতে। বরং, প্রথম দিনের তুলনায় বুধবার আরও বেশি সংখ্যক শ্রমিক কাজে এসেছিলেন বলে ইসিএল দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার, ধর্মঘটের প্রথম দিনে রাজ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিল ইসিএল। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় এ দিন বলেন, “ঝাড়খণ্ডের রাজমহল ও মুগমা এলাকার খনিগুলিতে এ দিনও ধর্মঘটের প্রভাব ছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy