Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Yes Bank

গ্রেফতারই হলেন ইয়েস ব্যাঙ্কের রাণা, মুম্বই বিমানবন্দরে আটকানো হল মেয়ে রোশনীকে

রাণার পরে, রোশনী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে লুক-আউট নোটিস জারির পরেই এই পদক্ষেপ।

আদালতের পথে ধৃত রাণা কপূর। রবিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

আদালতের পথে ধৃত রাণা কপূর। রবিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৩:৩২
Share: Save:

জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছিল শুক্রবার রাতে। প্রথমে ওরলিতে রাণা কপূরের বাড়ি সমুদ্র মহলে। শনিবার দুপুর থেকে বেলার্ড এস্টেটে ইডি দফতরে। টানা ২০ ঘণ্টা জেরা শেষে সেটাই হল, যেটা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ইয়েস ব্যাঙ্কে আর্থিক অনিয়ম ও পরিচালনায় অব্যবস্থার অভিযোগে রবিবার ভোর রাতে, প্রায় ৩টে নাগাদ গ্রেফতার হলেন ইয়েস ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রাক্তন সিইও, ৬২ বছরের রাণা। আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনের আওতায়। রবিবার তাঁকে ১১ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

এ দিকে লন্ডনের উড়ানে চাপার আগে, মুম্বই বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছে রাণার মেয়ে রোশনী কপূরকে। কারণ রাণার বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয় মামলার তদন্তে দুই বোন ও মায়ের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তাঁরও। রাণার পরে, রোশনী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে লুক-আউট নোটিস জারির পরেই এই পদক্ষেপ।

ইডি-র অভিযোগ, তদন্তে সহযোগিতা করেননি রাণা। অথচ আর্থিক নয়ছয়ে তাঁর শামিল থাকার ইঙ্গিত মিলেছে ভূরি ভূরি। জানা গিয়েছে, শোধ না-হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও আবাসন প্রকল্পে ঋণদাতা দিওয়ান হাউসিং ফিনান্সকে (ডিএইচএফএল) ইয়েস ব্যাঙ্ক ঋণ দিয়েছিল শুধু রাণার কথাতেই। যে ডিএইচএফএলে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে আগেই।

আরও পড়ুন: ১২৮ কোটির প্রাসাদ, আইপিএল যোগ... রাণা কপূরের জীবন যেন ফিল্ম

রাণা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন। মুম্বই আদালতে দাঁড়িয়ে তাঁকে ছলছল চোখে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি ওঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করতেই চাই। দিন ও রাত চোখের পাতা এক না-করা সত্ত্বেও সাহায্য করতে আগ্রহী।’’ রাণার আইনজীবীরও দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার সীমা বাঁধায় ক্ষুব্ধ মানুষ। তাই তাঁর মক্কেলকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। এ দিন রাণা, ডিএইচএফএল এবং ডু-ইট আরবান ভেঞ্চার্সের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে সিবিআই-ও। অভিযোগ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি ও প্রতারণার। ইডি-র অভিযোগ, ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে ধার নেওয়ার বিনিময়ে রাণার পরিবারের সংস্থা ডু ইট-কে ঋণ দেয় ডিএইচএফএল। যার ডিরেক্টর রাণার স্ত্রী বিন্দু কপূর, তাঁর তিন মেয়ে।

কপূরের কারবার

• ২০০৩ সালে শ্যালক অশোক কপূরের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন ইয়েস ব্যাঙ্ক। ২৬/১১-য় অশোকের মৃত্যুর পরে তাঁর অংশীদারি যায় স্ত্রী মধু কপূরের হাতে। শুরু হয় পর্ষদের দখল নিয়ে রাণার সঙ্গে আইনি লড়াই
অভিযোগ:
• সিইও থাকার সময়ে অতি ঝুঁকি নিয়ে ঋণ বিলি
• বিপজ্জনক ক্ষেত্রে ৩১,০০০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া, যার এক তৃতীয়াংশ শোধ না-হওয়ার আশঙ্কা
• যে সব সংস্থার রেকর্ড খারাপ, তাদেরই চড়া সুদে ঋণ। বদলে সুবিধা
• অনিয়ম ব্যাঙ্ক পরিচালনায়। অনাদায়ী ঋণ লুকনো

রবিবার দিনভর:
• শুক্র-শনি টানা জেরার পরে ভোর রাতে গ্রেফতার
• ১১ মার্চ পর্যন্ত ইডি হেফাজতে
• বিমানবন্দরে আটকানো হল মেয়ে রোশনীকে
• ৪৪টি দামি ছবি, ডজনেরও বেশি ভুয়ো আর্থিক সংস্থা, ২০০০ কোটির বেআইনি লগ্নির খোঁজ

সমালোচক ও পরিচিতদের দাবি, অত্যন্ত আগ্রাসী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাণা। ব্যাঙ্কার হিসেবে দ্রুত উঠে এসেছিলেন প্রচারের আলোয়, যে-আলোর প্রতি বরাবরই টান তাঁর। চেয়েছিলেন দ্রুত বাড়ুক ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তাই বাছবিচার না-করেই কর্পোরেট ঋণের সব আবেদনে ‘হ্যাঁ’ বলার পক্ষপাতী ছিলেন। সেই পথে হেঁটে এক সময় সত্যিই চটজলদি আয় ফুলেফেঁপে উঠেছিল ইয়েস ব্যাঙ্কের। মোটা হয় ঋণের খাতা। বেনোজল ঢুকতে শুরু করে তখনই।

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজের ধার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউকে প্রশ্ন তোলার অধিকারই দেননি রাণা। সেটা না-করলে এত অনুৎপাদক সম্পদের ভার বইতে হত না ইয়েস ব্যাঙ্ককে। যে-সম্পদ অনেক কম করে দেখানোর ঘটনা সামনে আসার পরে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় ইয়েস ব্যাঙ্কের হাঁড়ির হাল। জোগাড় করা যায়নি মূলধনও। জল বিপদসীমা ছাড়ানোয় আচমকাই বৃহস্পতিবার ইয়েস ব্যাঙ্কের বোর্ড ভেঙে দেয় আরবিআই।

অন্য বিষয়গুলি:

Yes Bank Rana Kapoor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE