অপেক্ষা: টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে ইয়েস ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরা। আমদাবাদে শুক্রবার। রয়টার্স
সেই ২০১৬ সালে নোটবন্দির পরে দেখা গিয়েছিল টাকা তোলার লম্বা লাইন। শুক্রবার দেশ জুড়ে ফিরে এল সেই স্মৃতি। যখন ইয়েস ব্যাঙ্কের একের পর এক এটিএম ও শাখার সামনে একরাশ হতাশা আর অসহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল সাধারণ মানুষকে। লাইনে দাঁড়িয়েও যে সব জায়গায় এটিএম থেকে গ্রাহকেরা টাকা তুলতে পেরেছেন, তা নয়। কিছু এটিএম অচল ছিল। কোনওটিতে আবার টাকা ছিল না। অনেকেই খুঁজে বেরিয়েছেন ইয়েস ব্যাঙ্কের অন্য কোনও এটিএম। আর ক্ষোভে ফেটে পড়তে পড়তে গ্রাহক মন্তব্য করেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে দ্বিতীয়বার নোটবন্দির ফেরে পড়লাম।’’ মোদী সরকার পুরনো পাঁচশো, হাজারের নোট বাতিলের পরে যখন টাকা তোলার জন্য হন্যে হয়ে এমনই জেরবার হতেন আমজনতা।
পরিচালন পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পরে ইয়েস ব্যাঙ্কের চেক ক্লিয়ারিংও বন্ধ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সব ব্যাঙ্কের কাছে নোটিস পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়েছে, এই ব্যাঙ্কের চেক আপাতত ক্লিয়ার না-করতে। ফলে ইয়েস ব্যাঙ্কের চেক পেলে কেউ যেমন এখন তা ভাঙাতে পারবেন না, তেমন এই ব্যাঙ্কের গ্রাহক চেক কাটতেও পারবেন না। জারি হয়েছে ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে নেট মারফত টাকা মেটানোর ব্যবস্থা, আরটিজিএস এবং নেফ্ট করায় নিষেধাজ্ঞা। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, তিনি মেনেছেন এই দুরবস্থার কথা। সেই সঙ্গে আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। চিকিৎসা বা বিয়ের মতো খরচের জন্য বড় অঙ্কের টাকা তুলতে হলে অবশ্য ব্যাঙ্কের নতুন বোর্ড বা আরবিআইয়ের কাছে আবেদন করতে হবে বলে জানান তিনি। যদিও সেটা কী ভাবে করা হবে, তা স্পষ্ট নয় বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
ব্যাঙ্কটির নতুন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রশান্ত কুমার জানান, ‘‘গ্রাহক স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই ‘মোরাটোরিয়াম’ বা ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টাকা তোলার অঙ্ক ৫০ হাজারে বাঁধা হয়েছে। পরিকল্পনা এমন ভাবে তৈরি হচ্ছে যাতে ব্যাঙ্কটি মোরাটোরিয়ামের সময়সীমা শেষের অনেক আগে চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে।’’
টাকা তোলায় যে রাশ টেনেছে আরবিআই, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধন্দ। অনেকেরই জিজ্ঞাসা, অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসে ইসিএসের (নির্দিষ্ট দিনে সংশ্লিষ্ট খাতে টাকা কাটার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা) মাধ্যমে মেটাতে হয় গাড়ি-বাড়ির ইএমআই, এসআইপির কিস্তি। ৫০ হাজারের হিসেবে কি এগুলিও ধরা হবে? সেটা হলে সমস্যা চরমে উঠবে, আশঙ্কা তাঁদের। তবে এ দিন ইয়েস ব্যাঙ্কের বিবাদী বাগ শাখার এক অফিসার জানান, ‘‘ইসিএস নিয়ে নোটিস পাইনি। তা না-এলে ইসিএসের ক্ষেত্রে অসুবিধা না-হওয়ারই কথা।’’
এটিএমে টাকা না-পাওয়ায় বেশ কিছু জায়গায় গ্রাহকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মুম্বইতে অবস্থা এতটাই চরমে ওঠে যে, মুম্বইয়ে পুলিশের সদর দফতর থেকে সব থানায় জরুরি নির্দেশ পাঠিয়ে বলা হয়, শহরে ইয়েস ব্যাঙ্কের সব এটিএমের উপর নজর রাখতে।
রাজ্যে আশঙ্কা
ইয়েস ব্যাঙ্কে নিয়ন্ত্রণ চাপানোর প্রভাব সহায়কমূল্যে ধান কেনায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা খাদ্য দফতরের। পূর্ব বধর্মান, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে চাষিদের থেকে ধান কিনে ইয়েস ব্যাঙ্কের চেক দিয়েছে খাদ্য দফতর ও তাদের একাধিক এজেন্সি। খবর, শুধু পূর্ব বর্ধমানেই এই চেক পেয়েছেন প্রায় ৯০ হাজার চাষি। এর কতগুলি ‘ক্লিয়ারেন্স’ পেয়েছে, সেই তথ্য দফতরের কাছে নেই। শুক্রবার জেলা প্রশাসন ও খাদ্য দফতর তাই যৌথ ভাবে ঠিক করেছে, শিবির খোলা থাকলেও ধান কেনার কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। তবে কেউ চেক না-নিয়ে ধান দিতে চাইলে দফতর ধারে কিনবে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হতে নিষেধ করে রাজ্যের খাদ্য কমিশনার মনোজ আগরওয়াল বলেন, “কত চেক বাইরে পড়ে, তা দেখা হচ্ছে। দরকারে সেগুলি তুলে অন্য ব্যাঙ্কের চেক দেওয়া হবে চাষিদের। টাকা মার যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy