বাস্তবে এ সবের কতটা কী প্রভাব পড়বে, তার আঁচ মিলবে লেনদেন শুরু হলে। প্রতীকী ছবি।
গত সপ্তাহের একেবারে শেষ দিকে এমন কিছু খবর পাওয়া গিয়েছে, বাজারে যার ভাল প্রভাব পড়ার কথা। যেমন মূল্যবৃদ্ধির আরও মাথা নামানো, গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধি, বেশ কিছু সংস্থার প্রত্যাশা ছাপানো আর্থিক ফল। তবে তাকে পেছনে টেনে ধরার মতো ঘটনাও যে এর মধ্যে ঘটেনি তা নয়। যেমন, শিল্পোৎপাদনের গতি ফের শ্লথ হওয়া। কর্নাটকে বিজেপির বিপর্যয়ের খবরও তার অপছন্দ হতে পারে। বাজার সব সময় চায় কেন্দ্রে শাসকদলের পায়ের তলার জমি শক্ত হোক। যে কারণে একই দল বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতায় এলে সূচক চাঙ্গা হয়। লগ্নিকারীরা মনে করেন, এতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সংস্কার বা তাঁদের স্বার্থে কড়া পদক্ষেপের পথ মসৃণ হল। তাই কংগ্রেসের কর্নাটক বিজয়ের ক্ষেত্রে বাজারের প্রতিক্রিয়া ঠিক কী হবে, তা দেখার অপেক্ষায় সংশ্লিষ্ট মহল। বাস্তবে এ সবের কতটা কী প্রভাব পড়বে, তার আঁচ মিলবে আজ লেনদেন শুরু হলে।
শুক্রবার শেষ বেলায় জানা গেল, মার্চে ৫.৬৬ শতাংশে নেমে যাওয়া খুচরো মূল্যবৃদ্ধি এপ্রিলে এসে ঠেকেছে ৪.৭০ শতাংশে। যা ১৮ মাসের মধ্যে সব থেকে কম। স্বভাবতই এই পরিসংখ্যানে লগ্নিকারীদের খুশি হওয়ার কথা। পণ্যের দাম বৃদ্ধির হার এই নিয়ে টানা দু’মাস রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া ৬% সর্বোচ্চ সহনসীমার নীচে। ফলে এপ্রিলের পরে জুনেও সুদ বাড়ানো থেকে বিরত থাকতে পারে আরবিআই, মনে করছে শিল্প ও ব্যবসায়ী মহল। যা চাহিদা বাড়িয়ে বৃদ্ধিতে গতি আনতে কাজে দেবে।
যদিও মূল্যবৃদ্ধি যতটা স্বস্তি দিয়েছে, ততটাই অস্বস্তি বাড়িয়েছে শ্লথ হওয়া শিল্পোৎপাদন। একই দিনে জানা গিয়েছে মার্চে শিল্পবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ১.১%। পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। শিল্পের উৎপাদনে এমন ঢিমে গতি লগ্নিকারীদের পক্ষে উৎসাহজনক নয়। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৫.৮%।
অন্য দিকে আবার, গত সপ্তাহে প্রকাশিত কিছু সংস্থার ফলাফল শিল্পের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে। শুক্রবারই দেখা যায়, প্রত্যাশাকে অনেকখানি ছাপিয়ে গত অর্থবর্ষের (২০২২-২৩) শেষ তিন মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চে ৫৪০৭ কোটি টাকা মুনাফা করার কথা ঘোষণা করেছে টাটা মোটরস। আগের বছর এই সময় তাদের লোকসান হয়েছিল ১০৩৩ কোটি। এপ্রিলে দেশের মধ্যে গাড়ি বিক্রিও ১৩% বেড়ে ৩,৩১,২৭৮টিতে পৌঁছেছে। যন্ত্রাংশ-সহ সংশ্লিষ্ট অনেক শিল্পের জন্য এটি সুখবর। যদিও বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় অস্বস্তি পুরোপুরি কেটে গিয়েছে বলা যাবে না। ভাল খবরের এখানেই শেষ নয়। শুক্রবার জানা যায় ৫ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার ৭২০ কোটি ডলার বেড়ে পৌঁছেছে ৫৯,৫৯৮ কোটি ডলারে। যা ১১ মাসে সর্বাধিক।
তবে সপ্তাহ শেষে পাওয়া যে খবরটি বাজারের তেমন পছন্দ না-ও হতে পারে, তা হল কর্নাটকে বিজেপির বিপর্যয়। দক্ষিণ ভারত থেকে এক রকম মুছে গেল তারা। অনুমান, কর্নাটকে বিজেপির বড় ব্যবধানে পরাজয় চাঙ্গা করবে বিরোধী শক্তিগুলিকে। ফলে পরের বিভিন্ন নির্বাচনে বিশেষত আগামী বছরের লোকসভা ভোটে শক্ত পরীক্ষার মুখে পড়তে হতে পারে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা দলটিকে।
বাজারের আশা ছিল এপ্রিলে পণ্য মূল্যবৃদ্ধির হার কমে থাকবে। এই আশায় ভর করে প্রকৃত হার প্রকাশ হওয়ার আগেই চড়তে থাকে বন্ডের দাম। ফলে পড়তে থাকে বন্ড ইল্ড। শুক্রবার শেষ বেলায় ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড বহু দিন বাদে ৭ শতাংশের নীচে নেমে থিতু হয় ৬.৯৯ শতাংশে। শেয়ার ছাড়া আজ বন্ডের দাম কোন দিকে যায়, সে দিকেও নজর থাকবে লগ্নিকারীদের। বন্ড ইল্ড কমলে সরকার এবং যে সব সংস্থা বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে, তাদের সুদ বাবদ খরচ কমে।
এক দিকে অর্থনীতির দিক থেকে বেশিরভাগ ভাল খবর। অন্য দিকে রাজনীতির দিক থেকে কিছুটা আশাহত হওয়া। দুইয়ের টানাপড়েনে শেয়ার সূচক কোন দিকে যাবে, তা বোঝা যাবে বাজার খুললে। তবে সামগ্রিক ভাবে শেয়ার বাজার এখন বেশ চাঙ্গা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy